দেশ 

“নিজেদের দায়িত্ব পালন করার সময় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম না করি”প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে কার্যত সরকারকে বার্তা দিলেন প্রধান বিচারপতি

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক: রাজধানী দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত দেশের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বিচারপতিদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় আজ শনিবার। এদিন এই সম্মেলনের উদ্বোধন করতে গিয়ে দেশের প্রধান বিচারপতি এনভি রামান্না বলেন, দেশের সংবিধানের শাসনকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংবিধান রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে তিনটি সমান ভাগে ভাগ করেছে। তাই প্রত্যেকেরই উচিত তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব এবং কর্তব্য খেয়াল রাখা কেউ যেন লক্ষণ রেখা অতিক্রম না করে। প্রধান বিচারপতি এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ধ্বনিত হয়েছে ক্ষোভ।

ওয়াকিবহাল মহল বলছে, আজ প্রধান বিচারপতি প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সামনে সরকারের স্বরূপ উন্মোচন করে দিয়েছেন। কার্যত সতর্ক বার্তা দিয়েছেন যে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের। সরকার যদি নিজের দায়িত্ব পালন করে সেক্ষেত্রে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয় না। কিন্তু সরকার তার নিজ দায়িত্ব সংবিধান মতে পালন করতে পারছে না বলেই আদালত হস্তক্ষেপ করছে। এদিন প্রধান বিচারপতি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন আদালতের নির্দেশও অনেক সময় সরকার ঠিকমত পালন করছে না। এ কথা বলার মধ্য দিয়ে সম্প্রতি জাহাঙ্গীর পুরীতে যে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিল দিল্লি পুর নিগম এবং তার উপরে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তারপরেও উচ্ছেদ অভিযান বেশ কয়েক ঘন্টা চলে বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতিকে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে হয় এবং কড়া পদক্ষেপের কথা বলতে হয়।এ দিন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সামনে কার্যত সেই কথাই ঘুরিয়ে স্মরণ করিয়ে দিলেন প্রধান বিচারপতি।

Advertisement

এছাড়াও, কয়েকদিন আগেই গ্যাংস্টার আবু সালেমের মুক্তি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিল কেন্দ্র। এরপরই এদিন এমন কথা শোনা গেল প্রধান বিচারপতির মুখে।

শনিবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও হাই কোর্টের বিচারপতিদের যৌথ সম্মেলনে রামানা বলেন, ”সংবিধান রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে সমান তিনটি শাখার মধ্যে বণ্টন করেছে। এই তিন শাখার মধ্যে ক্ষমতার সমবণ্টনই গণতন্ত্রের কাঠামোকে মজবুত করে। নিজেদের দায়িত্ব পালন করার সময় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম না করি।”

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে বিচারপতি এসকে কৌল এবং এমএম সুন্দ্রেশের ডিভিশন বেঞ্চ আবু সালেম মামলা প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে সাফ জানিয়ে দেয়, “বিচারব্যবস্থাকে জ্ঞান দেবেন না। যেটা আপনাদের ঠিক করার কথা, সেটা আমাদের ঠিক করতে বললে আমরা সেটা ভালভাবে নিই না।” বিচারপতি এসকে কৌল সাফ জানিয়ে দেন, “সুপ্রিম কোর্টের কী করা উচিত, সেটা স্বরাষ্ট্রসচিব বলতে পারেন না।”

এদিকে শনিবার জনস্বার্থ মামলার অপব্যবহার নিয়েও সরব হয়েছেন রামানা। তিনি বলেন, বহু ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা মেটাতে এই ধরনের মামলা দায়ের করা হচ্ছে। আদালত যে এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্ক থাকছে, সেকথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।

সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির অভিযোগ, অনেক সময় আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও নিষ্ক্রিয় থাকছে সরকার। এটা যে গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়, সেকথাও মনে করিয়ে দেন তিনি। তাছাড়া আদালতগুলিতে স্থানীয় ভাষা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথাও জোরের সঙ্গে বলেন রামানা।

দেশের প্রধান বিচারপতির আজকের এই ভাষণ ভারতবর্ষের প্রশাসনিক স্তরে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। কারণ প্রধান বিচারপতি স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিলেন সংবিধানের মধ্যে থেকে সবাইকে লক্ষণ রেখা মেনে চলতে হবে। এর বাইরে গেলেই শীর্ষ আদালত চুপ করে বসে থাকবে না।

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ