কলকাতা 

ISF : মারমুখী জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের লাঠিচার্জ মেনে নেওয়া যায়! কিন্তু ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের বিধায়ক পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকীকে পুলিশ যেভাবে টেনে হিচড়ে প্রিজন ভ্যানে তুলেছে তা কী গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ লক্ষণ? নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বিধায়ক কি সামান্য সৌজন্য আশা করে না পুলিশের কাছ থেকে দেশের সংবিধান কী বলে?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম : একজন বিধায়ককে যেভাবে টেনে হিচড়ে কলকাতা পুলিশ ধর্মতলার বিক্ষোভ মঞ্চ থেকে তুলে নিয়ে গেল তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। ভারতের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই ঘটনা কালা দিবস হিসাবে চিহ্নিত হবে। মনে রাখতে হবে নওশাদ সিদ্দিকী একজন বিধায়ক বিধানসভার সদস্য। বিধানসভার সদস্যের প্রতি ন্যূনতম সৌজন্যবোধ যদি কলকাতা পুলিশের না থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে এই রাজ্যের গণতন্ত্র প্রশ্নচিহ্নের মুখে। হতে পারে, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কর্মীরা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন তাদের আক্রমণ ে কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। এই ঘটনা যেমন নিন্দনীয় একই রকম ভাবে একজন বিধায়ককে যেভাবে রাস্তার মাঝখান দিয়ে টেনে টেনে নিয়ে গেলেন পুলিশ তা ব্রিটিশ শাসনকেও লজ্জা দেবে।

আর ঘটনার নেপথ্যে ভাঙ্গরে যা হয়েছে তা কহতব্য নয়। একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে তাদের একমাত্র বিধায়ক যে কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে বিধানসভায় গিয়েছেন সেই কেন্দ্রে দলের পতাকা টাঙ্গাতে গিয়ে আক্রান্ত হবে এ ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত একজন মানবিক মুখ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে ভাঙ্গরে এই ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে ভাবতে বসতে হবে? তৃণমূল নেতৃত্ব যতই বলুক না কেন এর নেপথ্যে বিজেপির হাত আছে তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে বিজেপি বাইরে রয়েছে ঠিকই তৃণমূল দলের অন্তরে বিজেপির লোকেরা বসে রয়েছেন যারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে।

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে রাখতে হবে পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকীকে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে এটা বাংলার জনমানষে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়তো জিতে যাওয়া যাবে কিন্তু আগামী দিনে এর জন্য বড় খেসারত অপেক্ষা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

যদি বলেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কি কোন ক্ষতি হবে না! তার উত্তর হল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কোন ক্ষতি হবে না। বাংলার ইতিহাস বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে যতবার বামেরা আক্রমণ করেছে। কলকাতা পুলিশ ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যখন রাইটার্স বিল্ডিং থেকে জোর করে বের করে দিয়েছিলেন সেদিনই ঠিক হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একজন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উঠে আসা মুখ্যমন্ত্রীর আমলে তার পুলিশের এই ধরনের আচরণ মেনে নেয়া যায় না। হতে পারে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কর্মীরা মারমুখী ছিলেন কারণ তারা প্রতিনিয়ত শাসকদলের হাতে মার খাচ্ছেন এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভাবতে হবে ভাঙ্গর বিধানসভা এলাকায় কেন আজ তৃণমূল কংগ্রেসকে পিছু হঠতে হচ্ছে। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজনৈতিকভাবে তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনকে অনেক বেশি সংযমের পরিচয় দেওয়া উচিত। তা না করে যেভাবে কলকাতা পুলিশ থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অনৈতিকভাবে পুলিশ কাজকর্ম করছে, আবাস যোজনা থেকে শুরু করে ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতির এই সব কাজগুলোকে অবিলম্বে বন্ধ করতে পারতো প্রশাসন এবং পুলিশ। এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের তৃণমূল কংগ্রেসে সাধারণ সম্পাদক মনে করতে পারেন মুসলিম ভোটের কোন প্রয়োজন নেই তবে একথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি মুসলিম ভোট ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে অতএব সাধু সাবধান।

সন্ধ্যেবেলায় কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন যে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কর্মীরা পুলিশকে মারধর করেছে তাই পুলিশ লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়েছে।  তবে বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীকে কেন রাস্তা দিয়ে টেনে টেনে হিড় হিড় করে নিয়ে যাওয়া হলো সেই প্রশ্নের উত্তর পুলিশ কমিশনার সাহেব দেননি। এ থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, এই রাজ্যে বিধায়কদেরও সম্মান নেই।

 

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ