কলকাতা 

প্রস্তাব /পাঁচ : প্রসঙ্গ : মাদ্রাসায় শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও গ্রন্থাগারিক নিয়োগ

শেয়ার করুন

বিপুল জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরপর বাংলার মানুষের জন্য তিনি কী করবেন সে দিকেই তাকিয়ে আছে জনতা। তবে রাজ্যের সংখ্যালঘুরা বিপুল ভোট মমতাকেই দিয়েছেন তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু উন্নয়নে কতটা কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে ইতিমধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রাক্তন রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী ড. আব্দুস সাত্তার ফেসবুক পেজে কলম ধরেছেন তিনি তিনটি প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে দিয়েছেন যাতে তা অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। সেই প্রস্তাবগুলি আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে যাব। আজ পঞ্চম  কিস্তি।

ড.আবদুস সাত্তার : একই সরকার, একই বিষয়, দপ্তর আলাদা – এই যা । আবার, স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৬ পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষা বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতি বছর শিক্ষক নিয়োগ হবে। নিঃসন্দেহে সুখবর । অপরপক্ষে সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষামন্ত্রী মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে নীরব, নিশ্চুপ! প্রশ্ন উঠেছে , বিদ্যালয় শিক্ষামন্ত্রী যদি পারেন তাহলে মাদ্রাসা শিক্ষামন্ত্রী কেন অনুরূপ ঘোষণা করতে পারেন না? কোথায় অসুবিধা ? শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একই সরকারের দুই রকম নীতি কী হতে পারে? মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে যাঁরা সংশ্লিষ্ট তাঁরা বুঝতে পারছেন না।
২০১৩ সালের পর থেকে মাদ্রাসায় শিক্ষক- শিক্ষাকর্মী নিয়োগ হয় নি। প্রচুর সংখ্যক ( শোনা যাচ্ছে প্রায় ৪০ শতাংশের কাছাকাছি ) শিক্ষক – শিক্ষাকর্মী পদ শূন্য। বলা বাহুল্য ,এই সরকারের আমলে নতুন মাদ্রাসা ও নতুন শিক্ষক পদ নাকি সৃষ্টি হয় নি। এই শূন্য পদগুলো বাস্তবে পুরনো আমলের সৃষ্টি। শিক্ষকবৃন্দ অবসর নিয়েছেন, পদ শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। রেখে আসা ১০০ টি নিউ সেট আপ ও ৪০৫ টি মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্র আটকে না রাখলে হয়তো আরও চার হাজার পদ যুক্ত হতো। এই সব কিছুর ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছাত্র – ছাত্রীরা। পঠন- পাঠন ভীষণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
আবার, ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসায় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে যে সমস্ত নিয়োগ হয়েছে তা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ ! মূলতঃ ভারসাম্যহীনতার। এও সত্য যে, ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসাও পূর্বতন সরকারের দান।
পশ্চিবঙ্গের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা বহু কারণে অনন্যতার পরিচয়বাহী। ধর্ম -বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই মাদ্রাসায় চাকুরি করেন, ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়া করে থাকে। বিশ্বের কোথাও মাদ্রাসায় এই জিনিস দেখা যায় না। বেশ কিছু মাদ্রাসায় সংখ্যাগুরু ছাত্র- ছাত্রীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এতদসত্বেও, এই বিষয়ে সরকারের অবহেলা, নীরবতা কেন? পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন তুলে দেওয়ার সক্রিয় উদ্যোগীবৃন্দ হয় আজ শাসক দলে অথবা বিধানসভায় প্রধান বিরোধী আসনে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই কমিশনকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরাম এক উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। এই স্বীকৃতি তাদের প্রাপ্য। এও শোনা যাচ্ছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন নাকি কোনও ধরনের কোনও জটিলতা নেই। কমিশন চাইলে নাকি নিয়োগ করতেই পারে। অথচ হচ্ছে না !
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতার কথা আমার লেখায় বার বার ফুটে উঠেছে এবং তা স্বাভাবিকও। বিধানসভার বাজেট অধিবেশন চলছে অথচ কোনও বিধায়ক এই ধরণের গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে সরকারকে কোনও প্রশ্ন করেছেন কি ? বিজেপি করবে না সেটা তো জানা কথা কিন্তু শাসক দলের বিধায়কবৃন্দ ? সংবামাধ্যমগুলোতে আমি অন্ততঃ দেখতে পাই নি। এটা যদি বাস্তব ঘটনা হয় তাহলে বুঝতে হবে, শেষের সে দিন খুব ভয়ঙ্কর !
বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি যে চাইবে না সেটা বোঝা যায়। কিন্তু সরকার ? মনে রাখতে হবে, ১৯৯৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যালয় সার্ভিস কমিশনের সূচনা হয়। সেই সময় এই বিদ্যালয় কমিশন বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা – দুটো ক্ষেত্রেই শিক্ষক নিয়োগ করতো। একসঙ্গে থাকলে এখন নিশ্চয় একসঙ্গে নিয়োগের ব্যবস্থা হতো। তাই নয় কী ?
২০০৭ সালে কেন এবং কী কারণে পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন তৈরি করতে হয়েছিল তা আজ সকলের জানা।
উপরিউক্ত প্রেক্ষিতে আমার প্রস্তাব —–
এইভাবে গর্বের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে না দিয়ে শিক্ষক- শিক্ষাকর্মী- গ্রন্থাগারিক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচয় সরকার দিক।’ মাদ্রাসা’ শব্দটির অর্থ শিক্ষাকেন্দ্র। ভুল ধারণা অনেক মহৎ সৃষ্টিরও বিলোপের কারণ হয়ে ওঠে। সরকার এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, এই আশাটুকু তো করতেই পারি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ