অন্যান্য 

‘ভারতমাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান’ মোহন ভাগবতকে ‘জাতির পিতা’ উপাধি সম্বোধন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় / সুকুমার মিত্র

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সুকুমার মিত্র : ‘হিন্দুত্ব’-এর প্রচারক বিনায়ক দামোদর সাভারকারের প্রিয় স্লোগান – ‘রাজনীতির হিন্দুত্বকরণ ও হিন্দুত্বের সামরিকীকরণ’ এই অবস্থান থেকে আর এস এস আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে এমন কোনও খবর নেই।

তাহলে আর.এস.এস প্রধান মোহন ভাগবত-এর সঙ্গে মুসলিম সংগঠনের রুদ্ধদ্বার বৈঠক কেন? যদি দেশের সার্বিক স্বার্থে তা হয়ে থাকে তবে তা খোলামেলা আলোচনা হলে দেশের ১৩৫ কোটি দেশবাসী তাতে অনুপ্রাণিত হতে পারতেন। সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে বিভেদ যুগ যুগ ধরে জিইয়ে রাখার রাজনীতি তো মৌলবাদের জন্ম দেয়। মৌলবাদ জন্ম দেয় ধর্মান্ধতা। আমরা দেশবাসী এই ধরনের ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত সামাজিক সুরক্ষাদয় সুরক্ষিনত নাগরিক সমাজকে দেখতে চাই।

Advertisement

সমস্ত রাজনৈতিক দলের নানা গণ সংগঠন থাকে। একমাত্র বিজেপি যা হল কার্যত সংঘ পরিবারের রাজনৈতিক গণ সংগঠন। অফিসিয়ালি না হলেও বাস্তব সত্য এটাই। তাই আর.এস.এস ভাল বিজেপি মন্দ হয় না। হয় দুটোই ভাল, নয় দুটোর কোনটাকেই মেনে নেওয়া যায় না। এই চরম সত্যটা বুঝতে পেরেছিলেন পণ্ডিত জহরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধি। এদের আর একটি সংগঠন হিন্দু মহাসভা সম্পর্কেও সম্যক ওয়াকিবহাল শুধু নয় রাজনৈতিকভাবে কট্টর বিরোধী ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও।

সম্প্রতি আর এস এস-এর উদারীকরণ না মুসলিমদের শুদ্ধিকরণ কোন কাজে নেমেছেন আর.এস.এস প্রধান মোহন ভাগবত তা তিনিই ভাল জানেন। তবে মুসলিম মাত্রই ‘জেহাদি’, ‘রোহিঙ্গা’, ‘সন্ত্রাসী’ বলতে বলতে যাঁদের মুখ ব্যাথা হয়ে গিয়েছে সেই সব বিজেপি নেতারা হয়তো আপাতত মুখে কুলুপ আটবেন। দলিত বনাম সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট- এই অংকের সমীকরণে ২০২৪-এ চূড়ান্ত তাস কিন্তু আস্তিনে লুকোনোই থাকল।

অনেক তথাকথিত ‘বিপ্লবী’দের বিদ্রুপ করে বলতে শুনি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধিজিকে কে জাতীর পিতা উপাধি দিয়েছেন? আমি কখনও সঠিক উত্তর দিতে পারিনি। তবে তিনি যে স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত কর্ণধার ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লোভী ছিলেন না তা নিয়ে কোনও সংশয় আমার ছিল না, আজও নেই। গান্ধিজিকে শ্রদ্ধা জানালে কোনও মতে বাকিদের খাটো করা হয় না। কারণ অন্যরা সকলেই গান্ধিজিকে শ্রদ্ধার আসনেই বসিয়েছিলেন। অনেকের মতে, ১৯৪৪ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সিঙ্গাপুর রেডিও থেকে প্রথম মহাত্মা গান্ধীকে “জাতির পিতা” বলে সম্বোধন করেন। তবে মহাত্মা নামটি কবিগুরুর দেওয়া।

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মনমোহন সিংয়ের কাছে উপরের প্রশ্নটিই করেছিল ১০ বছরের ছোট্ট শিশু ঐশ্বরিয়া। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তার প্রশ্নটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে জাতীয় মহাফেজখানায়। জাতীয় মহাফেজখানা থেকে তারপর জানানো হয়েছে, গান্ধীকে কে জাতির পিতা উপাধি দিয়েছিলেন এবং কবে থেকে তা সর্বস্তরে ব্যবহার হচ্ছে, সে বিষয়ে সমাধান দিতে তারা অপারগ। কোনও অফিসিয়াল ঘোষণায় মহাত্মা গান্ধীকে জাতির পিতা করা হয়নি। কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও আইন ছাড়াই তিনি ভারতবাসীর হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত। তবে ঐশ্বরিয়ার প্রশ্নটিও দারুণভাবে সবাইকে চমকে দিয়েছে।

অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের প্রধান উমর আহমেদ ইলিয়াসি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ জানিয়ে দিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতই ‘রাষ্ট্রপিতা’। আরএসএস প্রধান উত্তর দিল্লিতে মাদ্রাসা তাজউইদুল কোরান পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। আর সেখানেই তাঁকে একেবারে কার্যত জাতির জনক হিসাবে অভিহিত করলেন ইমাম সংগঠনের প্রধান। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন বা তাৎক্ষ‌নিক ঘটনা নয়। এমনটা হবে জেনেই মোহন ভাগবত ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। এর আগে, মোহন ভাগবত মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিলেন এবং গোহত্যা নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি হিন্দুদের বিরুদ্ধে ‘কাফির’ এবং ‘জিহাদ’ শব্দের ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাদের এই শব্দদুটির ব্যবহার এড়ানো উচিত বলেও পরামর্শ দেন।

এদিকে সায়রা শাহ হালিমের বাবা জামির উদ্দিন শাহ আরএসএসের প্রধান মোহন ভাগবতের সাথে দিল্লিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ছিলেন। সেই বৈঠকে আরএসএসের প্রধানকে জাতির পিতা বলে সম্বোধিত করলেন। জামির উদ্দিন শাহ উনি কিছুদিন আগেই বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে সিপিএমের প্রার্থী ওনার কন্যার হয়ে প্রচার করেছেন। অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের প্রধান উমের আহমেদ ইয়াশি বলেছেন, “Mohan Bhagwat is Rastra Pita”. অর্থাৎ মোহন ভাগবতই হলেন জাতির পিতা। চার বছর আগে ২০১৮ সালে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি নাগপুরে সংঘ পরিবারের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে ‘ভারত মাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান’ বলেছেন মোহন ভাগবতকে। গান্ধিজিকে জাতির জনক কে দিয়েছে নিয়ে ধোঁয়াশা বা প্রশ্ন থাকলেও ‘ভারত মাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান মোহন ভাগবত’-কে ‘রাষ্ট্রপিতা’ আখ্যা দিয়ে ‘প্রগতিশীল মুসলিম’ আখ্যায় ইমাম সংগঠনের প্রধান যে সম্বোধিত হবেন এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সেই তালিকায় সিপিএম-এর ‘রামরেড’ জামির উদ্দিন শাহ-র নামও গৌরবের সঙ্গে আলোচনায় স্থান পাবে। এবার হয়তো মুসলিম সম্প্রদায়ের ভিতর থেকে মোহন ভাগবতকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে সম্মানিত করার দাবি উঠলে বিস্ময়ের কোনও কারণ থাকা উচিত না বলে মনে করি।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ