কলকাতা 

‘সবার জন্য ভালোবাসা, কারো জন্য ঘৃণা নয়’ এই বার্তা নিয়ে আইসিসিআরে পালিত হল ঈদ মিলন

শেয়ার করুন

ইসমাত মাহমুদা :কলকাতার মধ্যস্থলে অবস্থিত ভারত সরকারের সংস্কৃতি দপ্তরের প্রেক্ষাগৃহ আইসিসি আর-এ পালিত হল ঈদ মিলন। আহমদিয়া জামাতের উদ্যোগে এই ঈদ মিলন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের সূচনাতেই আহমদীয়া জামাতের কলকাতা শাখার কর্মকর্তা এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য ব্যাখ্যা করেন। উপস্থিত সকল অতিথি এবং শ্রোতা-দর্শকদের তিনি স্বাগত জানান।

এদিনের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিশিষ্ট খ্রিস্টান ধর্মের নেতা ফাদার ডোমিনিক গোমস বলেন, সব ধর্মই মানুষকে শান্তি ও সংহতির শিক্ষা দেয়। ঈদের বার্তা হলো মানুষে মানুষে মিলনের বার্তা। রামকৃষ্ণ মিশন এর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন স্বামী সুপর্ণানন্দজি বলেন, সব ধর্মই মানবতার শিক্ষা দেয়, ভালোবাসার শিক্ষা দেয়, প্রেমের শিক্ষা দেয়, সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। সবার লক্ষ্য এক কিন্তু পথ আলাদা এজন্যই রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন যত মত তত পথ।

Advertisement

এদিনের সভায় বাংলায় অসাধারণ বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবু তাহের মন্ডল। তিনি পবিত্র কোরআন শরীফের নানা আয়াত তুলে ইসলাম ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা এবং বাস্তবায়নের কথা বলেন। একইসঙ্গে আহমদীয়া জামাতের প্রতিষ্ঠাতার কথাও তিনি গুরুত্ব সহকারে শ্রোতা দর্শকদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে ইসলাম ধর্ম এবং তার শিক্ষার কথা প্রাঞ্জলভাবে দর্শকদের কাছে তুলে ধরেন। ইসলাম ধর্ম যে মানবতার কথা বলে সাম্যের কথা বলে, বিভিন্ন জাতির মধ্যে ভেদাভেদহীন সমাজ গড়ার কথা বলে। সেই কথা বলার পাশাপাশি এদিন আবু তাহের মন্ডল সাহেব স্পষ্টভাবে বলেন,আজ জাতিসংঘ যে সাম্যবাদের সনদ তৈরি করেছে এই সনদ আজ থেকে পনেরশো বছর আগে হযরত মুহাম্মদ (সা) তৈরি করেছিলেন এবং সমগ্র বিশ্বকে তার আদর্শে দীক্ষা দিয়েছিলেন।

এদিনের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের নবনির্বাচিত বিধায়ক ও বিশিষ্ট গায়ক বাবুল সুপ্রিয় বলেন, সবার জন্য ভালোবাসা এবং কারো জন্য ঘৃনা নয়, এই বার্তা আমাদের কাছে শুনতে ভালো লাগে ঠিকই কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা সত্যিই কঠিন। আহমদীয়া জামাত এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ঈদ মিলন উৎসব পালন করছে এটা আমাদের ভালো লাগছে। আমরা যদি সকলকে ভালোবাসতে নাও পারি আমার পরিবারকে ভালবাসতে পারি। সমাজকে ভালোবাসতে পারি। আমাদের মন থেকে প্রতিহিংসা শব্দটা মুছে দিতে পারি এই চেষ্টাটা আমরা করতে পারি আর এই চেষ্টাটা যদি আমরা করতে পারি তাহলেই একটা সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে, সুন্দর দেশ গড়ে উঠবে।

পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী মাসুম আখতার এদিন দেশ তথা সমগ্র বিশ্ব জুড়ে যে হিংসা রাহাজানি চলছে তার বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি স্পষ্ট বলেন, এর পেছনে রয়েছে রাজনীতি। রাজনীতির দাদারা মাথায় টুপি দিয়ে ভন্ড ধার্মিক সেজে মুসলিম সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন আর এই সমাজকে পিছিয়ে রাখছে এবং ভোট লুট করছে।

এদিনের সভায় শেষ বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট সিপিআইএম নেত্রী তথা বুদ্ধিজীবী সায়রা শাহ হালিম। তিনি ঈদ শব্দের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করেন। আজকের এই কঠিন সময়ে মানুষে মানুষে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার উপর তিনি জোর দেন। এদিনের সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, শিয়া সম্প্রদায়ের ইমাম মাওলানা জাকির হোসেন  রিজভি, চিনময় মিশনের প্রধান দিবাকর চৈতন্য, শিখ সম্প্রদায়ের নেতা হরিরাম সিং প্রমুখ।

অন্যান্য বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহ , মৌসুমী কর্মকার, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় সাংবাদিক ও স্পন্দন পত্রিকার সম্পাদক নৌশাদ মল্লিক, আনন্দবাজার পত্রিকার প্রাক্তন সাংবাদিক কাজী গোলাম গওস সিদ্দিকী, বিশিষ্ট চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরি প্রমুখ। এদিনের অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আহমদীয়া মুসলিম জামাতের কলকাতা শাখার সভাপতি জাফর আহমেদ। একইসঙ্গে তিনি নীরব দোয়ার মাধ্যমে সভার কাজ শেষ করেন।

 

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ