ইসকন রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সংঘের সাধুদের অপমানের বদলা নেবে জনতা : নরেন্দ্র মোদি
বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ রবিবার পঞ্চম দফার ভোটের আগের দিন পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে এসেছেন। এই নির্বাচনের জনসভা থেকে এবার রাজ্যের রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবা সংঘ এর সাধুদের পক্ষে মত প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলার সাধুসন্তদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপমান করছেন। আসলে গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মিতালীদের সমর্থনে কামারপুকুরে এক নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন ভারত সেবা আশ্রম সংঘ এবং ইসকনের কয়েকজন সাধু ও সন্ন্যাসী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগে জবাব দিতে গিয়ে আজ রবিবার পুরুলিয়ার সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তীব্র ভাষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে আক্রমণ করেন।
নরেন্দ্র মোদির ভাষায়,মোদী বলেন, ‘‘দুঃখের সঙ্গে বলছি, স্বামী বিবেকানন্দ যখন বিদেশে গিয়েছিলেন, ভারতের কথা বলতেন, তখন অনেক মানুষ তাঁর ভক্ত হন। যাঁরা ভারতকে ঘৃণা করতেন, তাঁরা অপমান করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। কিন্তু তিনি মা ভারতীর অভিযান নিয়ে বেরিয়েছিলেন। তিনি ভয় পাননি। বাংলায় আজ এমনই হচ্ছে। নির্বাচনে বাংলার মানুষকে ভয় দেখাতে সব সীমা পার করেছে। দেশ, দুনিয়ায় ইস্কনকে সকলে চেনে। রামকৃষ্ণ মিশন করেছিলেন বিবেকানন্দ। সেবার জন্য ভারত সেবাশ্রমকে সারা দুনিয়া চেনে। এই সংগঠনগুলি ভারতের নাম উজ্জ্বল করে। কিন্তু আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সেই ইস্কন, ভারত সেবাশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশনকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে রয়েছে এঁদের ভক্তরা। সেবার কাজ করেন। বাংলার সরকার তাঁদের দিকে আঙুল তুলছে। নাম নিয়ে হুমকি দিচ্ছে। এত সাহস! নিজের ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করতে, তোষণ করতে তৃণমূল এত নিচুতে নেমেছে। বাংলার মানুষ, লাখ লাখ মানুষের ভক্ত, ভাবাবেগ খেয়াল করে না। স্বামী বিবেকানন্দ, প্রভুপাদ, প্রণবানন্দ মহারাজের অপমান দেশ সহ্য করবে না। যে সরকার বাংলার মানুষের সংস্কৃতিকে সম্মান করে না, তাদের ভোটের শক্তি দিয়ে সাজা দিন, যাতে ওরা আর সন্ত, সাধুদের অপমান করতে না পারে। ’’
তিনি আরো বলেন সাধু-সন্তদের এই অপমানের জবাব বাংলার মানুষ দেবেন। শুধু এখানেই নয় সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের রায় যে ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে সে প্রসঙ্গে তুলে তৃণমূল নেতৃত্বকে আক্রমণ করেন। তিনি এদিন বলেন,‘‘তোলাবাজি, চুরি করা তৃণমূল সরকারের বিচার, আচার। যে বাংলায় সরস্বতীর পুজো হয়, সেখানে তৃণমূল শিক্ষায় চুরি করে। শিক্ষক নিয়োগে হাজার হাজার যুবকের ভবিষ্যৎ বরবাদ করেছে। সকলকে ধারে ডুবিয়েছে। বাংলার গ্রামে আজ শিক্ষক নেই। বাচ্চাদের ভবিষ্যৎও চুরি করেছে। তৃণমূল, কংগ্রেস একই।’’
তৃণমূল নেতারা চুরি করে টাকার পাহাড় করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভিযোগ করেন। এদিন নরেন্দ্র মোদি বলেন,‘‘২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে বলছি, দুর্নীতিবাজদের জেলের বাইরে থাকতে দেব না। আপনাদের যাঁরা লুঠ করছে, তাঁদের সঙ্গে মোদী ঠিক করছে কি না! এঁরা গালি দিলেও করা উচিত কি না! যাঁরা লুঠ করছে, তাঁদের শাস্তি দরকার কি না! মোদী গ্যারান্টি দিচ্ছে, ৪ জুনের পর নতুন সরকার হতেই এ রকম ভ্রষ্টাচারীদের জীবন জেলে অতিবাহিত হবে। পদক্ষেপ আরও তীব্র হবে।’’
তবে এ কথা ঠিক গতকাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সংঘের বেশ কয়েকজন সাধু ও সন্ন্যাসী কে নিয়ে রাজনীতি করবেন না বলে যে মন্তব্য করেছেন তার প্রমাণ মিললো রবিবারের প্রধানমন্ত্রী সভায়। পুরুলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সভায় ভারত সেবাশ্রম সংঘের ওই এলাকার মহারাজ সুশান্ত মহারাজ উপস্থিত ছিলেন। এ থেকে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের সারবত্তা ছিল।