অন্যান্য 

দূনীর্তিগ্রস্থদের তৃণমূল থেকে নিয়ে আসার জন্যই বিজেপির খারাপ ফল মানছে আরএসএস, দলীয় বৈঠকে গরহাজির বিজেপির নেতারা

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : ভোট চলাকালীন সময়ে রাজ্যের এক প্রাক্তন আইপিএস অফিসার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন বিজেপির পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে । বিজেপি কী ক্ষমতা দখল করতে পারবে ? এই প্রশ্নের উত্তরে এই প্রতিবেদক বলেছিলেন, বিজেপির সম্ভাবনা ছিল । কিন্ত  বিজেপি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের দূরদর্শীতার অভাবে তারা জিততে পারবে না । আশির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে । ফলাফল বের হওয়ার পর ওই প্রবীণ অফিসার আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন আমি এই কথা কিসের উপর ভিত্তি করে বলেছিলাম । যে সময় রাজ্যের প্রায় সব মিডিয়ায় বলে যাচ্ছিল বিজেপি ক্ষমতার কাছাকাছি পৌছে যাবে । আর ১০০-এর বেশি আসন পেলে বাকীটা কিনে নেবে । কিন্ত ওই বিশ্লেষকদেরকে হতাশ করে আমরা বাংলার জনরব প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছিলাম বিজেপি জিততে পারবে না । তবে কত আসন পাবে তা নিয়ে আমরা প্রকাশ্যে কিছু মন্তব্য করিনি ।কারণ আমাদের মনে হয়েছিল ৫০-এর নিচে চলে যেতে পারে বিজেপির আসন ।

এদিকে ভোটের ফল প্রকাশের পর আরএসএস সাংগঠনিক স্তরে বৈঠক করে এই ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা করেছে। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, দূনীর্তিগ্রস্থদের তৃণমূল থেকে ভাঙিয়ে আনার জন্যই বিজেপির পরাজয় হয়েছে । এই বিষয়টি বাংলার জনরব অনেক আগেই বলেছিল । আমরা বলেছিলাম দল ভাঙানোর খেলাটা বুমেরাং হবে না তো ? সেটাই হল । বিজেপির বাংলা জয়ের স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে গেল ।

Advertisement

কেন এই পরিণতি ? উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে তৃণমূলের যেসব নেতার বিরুদ্ধে তোলাবাজি এবং চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে সেই সব নেতাদেরকে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যেভাবে বরণ করে নিলেন তাতেই বিজেপির প্রতি অধিকাংশ মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে । শুভেন্দু অধিকারীকে নেওয়ার পর আশ্চর্যজনকভাবে পূর্বমেদিনীপুরে তৃণমূল উজ্জীবিত হয়ে পড়ে । সাধারণ মানুষ তৃণমূলের প্রতি আগের চেয়ে বেশি আস্থা দেখাতে শুরু করে । ফলে ভোটের মুখে চিত্রটাই পরিস্কার হয়ে যায় । যেমন তমলুক বিধানসভা কেন্দ্রটি তৃণমূলের পাওয়ার কথা ছিল না , কিন্ত সৌমেন মহাপাত্রকে প্রার্থী করায় ওই আসনটি জিতে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস । একইভাবে চন্ডীপুর বিধানসভা কেন্দ্রটিও জেতার কথা ছিল না শাসক দলের সোহমকে প্রার্থী করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল । কারণ এই জেলার নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপি দলে নেওয়ার ফলে তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েক জন আঞ্চলিক তৃণমূল নেতা বিজেপিতে যোগ দেন । এরা সকলেই নানাভাবে সাধারণ মানুষকে শোষণ করেছেন বলে অভিযোগ আছে । তারই প্রেক্ষিতে পূর্বমেদিনীপুরে যে ফলের আশা বিজেপি করেছিল তা পূরণ করতে পারেনি । অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৫ আসনের মধ্যে ১৩টি জিতে সবাই চমকে দিয়েছে শাসক দল। শুভেন্দুকে ছাড়া যে এভাবে জেতা যায় সেটা প্রমাণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ।

এদিকে, বিজেপি হেরে যাওয়ার পর সব নেতারা এখন গা ঢাকা দিতে শুরু করেছে ।  দলের দুই নির্বাচিত বিধায়ক নিশীথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকার , বিধায়ক পদ ছেড়ে দিয়েছেন , তাঁরা মনে করছেন সাংসদই থাকবেন । এর ফলে বিধানসভায় দলের শক্তি অনেকটাই কমে গেল । এদিকে দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একাধিক বার বৈঠক ডেকেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সেখানে অধিকাংশ রাজ্য নেতা অনুপস্থিত ছিলেন ।

গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন জেলার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য হেস্টিংসে দলের দফতরে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল সব পদাধিকারী ও প্রধান নেতাদের। কিন্তু সেখানে উপস্থিতির হার ছিল উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র বিপর্যয়ের পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্যে দায়িত্বে এসেছেন অন্যতম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুঘ। তিনি ছাড়াও শুক্রবারের বৈঠকে ছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। ছিলেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

বিজেপি-তে সাধারণ সম্পাদক পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যে মোট পাঁচ জন এই পদে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সঞ্জয় সিংহ এবং সায়ন্তন বসু। আসেননি জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো, লকেট চট্টোপাধ্যায়, রথীন বসু। রাজ্য বিজেপি-তে সহ সভাপতি রয়েছেন ১২ জন। তাঁদের মধ্যে জনা চারেক হাজির ছিলেন শুক্রবারের বৈঠকে। ১০ জন রাজ্য সম্পাদকের অনেকে আসেননি। ।

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

twelve − 11 =