জেলা 

‘‘ রাজ্যে ধর্ষণ, লুঠতরাজ এবং তোলাবাজির ঘটনা ঘটছে অহরহ,আমরা জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির উপর বসে রয়েছি’’ নন্দীগ্রাম সফরে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য রাজ্যপালের

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : গতকাল শুক্রবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করার পর তৃণমূলের প্রতি আক্রমণ চলছে, সাংবিধানিক বির্তক নতুন করে শুরু হয়েছে । এই প্রেক্ষাপটে আজ নন্দীগ্রাম সফরে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা সরকারকে আক্রমণ করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । তাঁর অভিযোগ, ভোট মিটে গেলেও এখনও হিংসা অব্যাহত নন্দীগ্রামে। রাজ্যবাসী হিংসার আগ্নেয়গিরির উপর বসে রয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ভোট পরবর্তী হিংসার খোঁজ নিতে চান বলে জানিয়ে সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ধনখড়। শনিবার সকালে হেলিকপ্টারে চেপে নন্দীগ্রামে পৌঁছন তিনি। সেখানে গিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান নন্দীগ্রামের নব নির্বাচিত বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। তার পর শুভেন্দুর সঙ্গেই গাড়িতে চেপে রওনা দেন তিনি।

Advertisement
নন্দীগ্রামে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ধনখড় বলেন, “এক দিকে কোভিড, অন্য দিকে নজিরবিহীন ভাবে ভোট পরবর্তী হিংসা, যা কি না সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ। এই দুইয়ের জেরে বাংলা অত্যন্ত সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ভোটের পর এই ধরনের হিংসার কথা কোনও দিন শুনিনি। মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ, বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করার সময় এসেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন।’’
ভোট পরবর্তী হিংসায় নন্দীগ্রামে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও দাবি করেন ধনখড়। তাঁর কথায়, ‘‘অত্যন্ত সঙ্কটের মুহূর্ত। রাতে ঘুমোতে পারছি না আমরা। আমরা জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির উপর বসে রয়েছি। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। কটূক্তি শুনতে হচ্ছে তাঁদের, প্রাণহানি, ধর্ষণ, লুঠতরাজ এবং তোলাবাজির ঘটনা ঘটছে অহরহ।’’

সাংবিধানিক পদে বসে রাজ্যপাল বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন বলে তৃণমূল-সহ বিজেপি বিরোধী শিবির থেকে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠে এসেছে। তা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও, নন্দীগ্রামে গিয়ে বিভাজনকারী শক্তির বিরুদ্ধে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন ধনখড়। নিশানা করেন মমতাকেও। তিনি বলেন, ‘‘আশা করি এ বার অন্তত বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘরছাড়াদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেবেন। তাঁদের আত্মবিশ্বাস জোগাবেন। বিভাজনকারী শক্তি অশান্তি তৈরি করছে। লাগাম টানা প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে হবে।’’

কোচবিহার সফরের মতো নন্দীগ্রাম সফর নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ রাজ্যপাল রাজ্যের আলংকারিক প্রধান হিসাবে কোনো দলকে আলাদা করে প্রশয় তিনি দিতে পারেন না । সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে তাঁর প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হলো সবাইকে সমান চোখে দেখা । তিনি তা করছেন না। কোচবিহারের তুফানগঞ্জে যে তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে তার পরিবারের সঙ্গে রাজ্যপাল কী দেখা করেছেন ? অন্যদিকে নন্দীগ্রামে যে তৃণমূল কর্মীকে মারা হয়েছে তার বাড়িতে কী রাজ্যপাল গিয়েছেন ? আর কোচবিহারে গিয়ে কেন বিজেপি সাংসদ নীতিশ প্রামাণিক সঙ্গে নিলেন , নন্দীগ্রামে গিয়ে কেন শুভেন্দু অধিকারীকে সঙ্গে নিলেন ? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় বাংলার মানুষ ।

এর আগে, কোচবিহারে প্রশাসনিক সফরে বিজেপি-র নিশীথ প্রামাণিককে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন রাজ্যপাল। তাঁর পদত্যাগের দাবি পর্যন্ত তুলেছিল তৃণমূল। তার পরেও শনিবার শুভেন্দুকেই নন্দীগ্রামে সফরসঙ্গী করেছেন রাজ্যপাল। সেখানে প্রথমে চেল্লা গ্রামে যাবেন তিনি, যেখানে ভোট পরবর্তী হিংসায় এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। বঙ্কিম মোড়ে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তাঁর।নন্দীগ্রামে জানকীনাথ মন্দিরে পুজোও দেবেন।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ