অন্যান্য 

আমাদের ভোটে নির্বাচিত সরকারের নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়ার নৈতিক অধিকার আছে কি ?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার আবার সেই সরকার জনতার কাছে নাগরিকত্বের প্রমাণ চাইছে । এই সাহস কোথা থেকে পায় একজন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত শাসক ? তাহলে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের যদি হিটলারের সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে খুব একটা অন্যায় হবে কি ? অবশ্য হিটলার জাতীয়তাবাদের কথা বললেও তিনি কোনো দিন তাঁর দেশের মানুষের নাগরিকত্বের প্রমাণ পেশের কথা বলেননি । বিজেপির নেতারা বলেছেন । এদেশের মুসলমানদের একটাই অপরাধ তারা দেশকে ভালবেসে এদেশ ছেড়ে পাকিস্থানে চলে যায়নি । ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ রাজনীতিবিদরা করেছেন । সাধারন মানুষ করেনি । সাধারন মানুষের মতামত নিয়ে ভারত ভাগ হয়নি । সুতরাং ভারত ভাগের জন্য এদেশের মুসলিমরা যেমন দায়ী নয় , একইভাবে হিন্দুরাও দায়ী নয় । ইতিহাসের পাতা উল্টোলে একটু দেখতে পাবেন , এদেশের জন্য মুসলিমদের অবদান । ভারত-পাক যুদ্ধ থেকে শুরু করে চীন-ভারত যুদ্ধ , বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধ থেকে শুরু করে কার্গিল সবতেই মুসলিম জওয়ানদের তাজা খুন রয়েছে । তা সত্ত্বে কার্গিল যুদ্ধে যোগ দেওয়া এক জওয়ানের পরিবারে নাম অসমের এনআরসিতে বাদ পড়ে যায় । এটা তো আমাদের জাতীয় লজ্জা ! কার্গিল যুদ্ধে ওই মুসলিম জওয়ানের নাম তালিকায় তোলার জন্য ভারত সরকার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি ? তারপরেও মোদী-অমিত শাহ বলবেন , মুসলিমদের কে বিপথে চালিত করছে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি ।

প্রশ্ন এখানেই চোখের সামনে অসমের এনআরসি দেখে ভয় পেয়েছে এদেশের সাধারন মানুষ । তারা ভাবতে শুরু করেছে তারা নিরাপদ নয় । যেকোনো সময় অসমের মত অবস্থা হতে পারে তাদের । তাই আতংকের মধ্যে আছে । অথচ এই আতংক থাকার কথা ছিল না । স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও একজন মানুষ যখন তার দেশকে সুরক্ষিত ভাবতে পারে না তখনই প্রশ্ন উঠে নির্বাচিত সরকার কি সঠিক পথে চলছে ? গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার যখন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় তখন সেই সরকারের বিরুদ্ধে সাধারন মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য । মানুষ যখন রাস্তায় নেমে আসবে তখন রাষ্ট্রশক্তি পরাজিত হতে বাধ্য।

Advertisement

ধরা যেতে পারে বিজেপির আমলে ধর্মনিরপেক্ষ বলে কোনো কথা আর নেই । কিন্ত গণতন্ত্র এবং প্রজাতন্ত্র তো থাকবে ।এই দুটি শব্দের অর্থ হল জণগনই রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি । ৫ বছর অন্তর জণগন ঠিক করে দেবে কে দেশকে পরিচালনা করবে । কোন দল বা কোন জোট পরিচালনা করবে । তাহলে সংবিধান মতে এবং গণতন্ত্রের শর্তে জণগন হল রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক । জণগন হল শাসকের শেষ বিচারক । জন-আদালত সুপ্রিম কোর্টের চেয়েও বড় । সুতরাং মোদী-অমিত শাহ-র প্রকৃত মালিক হচ্ছে দেশের জনতা । আর মালিকের কাছ নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়ার অধিকার কে দিয়েছে মোদী-শাহদের ? অবশ্য বিজেপি নেতারা বলবেন এনআরসি তো সারা দেশে চালু করার কথা বলা হয়নি । বা এনআরসি কথা বলা হচ্ছে না । এটা তো নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন । কিন্ত সংসদে দাঁড়িয়ে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট বলেছেন, সারা দেশে এনআরসি করা হবে । আর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে মুসলিমদের বাদে সবাইকে রাখা হয়েছে তার মানে এনআরসিতে যেসব মুসলিম কাগজপত্র পেশ করতে পারবে না তাদেরকে ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে । তারা কোনো দিনই নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাবে না ।অন্তত এই নাগরিক আইন অনুসারে ।

মোদী-শাহ সরাসরি দেশের মানুষকে অপমান করছেন । কারণ দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেশের জনতার কাছ থেকে নাগরিকের প্রমাণ চাইতে পারে না । তাই সাধারন মানুষ এই অপমানের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করলে তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই । আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক-প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মানুষ সমগ্র দেশজুড়ে গণআন্দোলনে যেভাবে সামিল হয়েছে এর নেপথ্যে পুরোপুরি বিজেপি দল এবং মোদী সরকারের অপমানজনক মন্তব্য দায়ী। এই আন্দোলন এখন দ্বিতীয় স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

seventeen − five =