দেশ 

Uniform Civil Code BJP : ২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে গেলে চাপে পড়বে মোদী- শাহ ! কেন ? জানতে হলে ক্লিক করুন

শেয়ার করুন

বুলবুল চৌধুরি : ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছে । মাত্র আট বছরের মধ্যে দেশের মূল্যবৃদ্ধি এতটাই হয়েছে যে তা বলার মতো অবস্থায় নেই সাধারণ মানুষ ।সার্বিকভাবে দেশের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি । তা সত্ত্বে মোদী বা বিজেপি ভোটে জিতে চলেছে । এর রহস্য একটাই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ । প্রতিটি নির্বাচনের আগে বিজেপি আরএসএস এমনভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে তা বুঝে উঠতেই পারে না বিরোধীরা । ফলে বিজেপির জয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে । এই ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে তাহলে আগামী ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনেও মোদী সরকার যে বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা্য় আসবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । তবে এবারও ক্ষমতায় আসতে হলে মেরুকরণই একমাত্র পথ । কারণ যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, সেভাবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়েনি । বেকারত্ব লাগাম ছাড়া হয়েছে । দেশের আর্থিক কাঠামে ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে । এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ বিকল্প খুঁজছে কিন্ত বিজেপির মেরুকরণ  রাজনীতিরে সামনে তা টিকছে না । জানা গেছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে এবার রাম মন্দির, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পরে এ বার দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার পথে এগোচ্ছে বিজেপি। প্রাথমিক ভাবে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ওই আইন পাশ করানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন অমিত শাহেরা।

সূত্রের খবর, পরবর্তী ধাপে লোকসভা নির্বাচনের আগে হিন্দু ভোটের মেরুকরণের উদ্দেশ্যে গোটা দেশের জন্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড আইন সংসদে আনতে চায় দল। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে সব ধর্মের মানুষ একই রকম পারিবারিক, বিবাহ, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মানতে বাধ্য হবেন। বিজেপি নেতৃত্ব খুব ভাল করেই জানেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হলে মুসলিমদের পার্সোনাল ল’ বোর্ডের অস্তিত্ব থাকবে না। বিরোধিতায় নামবেন সংখ্যালঘু সমাজ ও বিরোধীরা। যাকে পুঁজি করে ভোটের আগে মেরুকরণের তাস খেলার সুযোগ পাবে শাসক দল।

Advertisement

উত্তরাখণ্ডে ভোটের আগে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সে রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরে এলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। বিজেপি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওই বিল আনার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ধামী সরকার। উত্তরাখণ্ডের ধাঁচেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যাতে ওই আইন পাশ হয়, সে জন্য অমিত শাহের নেতৃত্বে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।

গত কাল মধ্যপ্রদেশের ভোপালে সে রাজ্যের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন অমিত শাহ। বৈঠকে তিনি জানান, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করাটা দলের দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। সেই লক্ষ্যে প্রথম ধাপে দেশের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে প্রথমে ওই আইন পাশ হবে। তার পরে গোটা দেশের জন্য ওই আইন আনার কথা ভাবা হয়েছে। রাজনীতির অনেকের মতে, বিষয়টির সঙ্গে সংখ্যালঘু সমাজের ভাবাবেগ জড়িত রয়েছে। অতীতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা সংখ্যার জোরে সংসদে পাশ করিয়ে নিলেও, সামাজিক ভাবে প্রবল বিরোধের সামনে পড়তে হয়েছিল শাসক দলকে। যে কারণে ওই আইন রূপায়ণের প্রশ্নে এখনও ধীরে চলো নীতি নিয়েই এগোচ্ছে কেন্দ্র। আগামী দিনে দেওয়ানি বিধি আইন সংসদে আনলে প্রবল বিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ওই আইন পাশ হলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় তা বুঝে নিতে চাইছেন অমিত শাহেরা। তার পরে তা সংসদে আনার কথা ভাবা হবে। বিজেপি নেতৃত্বের যুক্তি, ওই আইন কার্যকর হলে সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে, অবসান ঘটবে লিঙ্গ বৈষম্যের। সার্বিক ভাবে ক্ষমতায়ন হবে মহিলাদের। বিরোধীদের মতে, বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে নিশানা করতেই ওই বিল আনার কথা ভাবছে বিজেপি। এতে সংখ্যালঘু সমাজ আরও কোণঠাসা হবে।

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “বর্তমানে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে ২০০-র বেশি জনজাতি তাদের নিজস্ব আইন মেনে চলেন। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে কোপ পড়বে তাতেও। ওই আইন সমাজকে যতটা ঐক্যবদ্ধ করবে, তার চেয়ে বেশি বিভাজন ঘটাবে।” উত্তর-পূর্বের অধিকাংশ রাজ্যেই যেখানে বিজেপির সরকার, সেখানে ওই আইন প্রযোজ্য হলে স্থানীয় জনজাতিদের ক্ষোভ অমিত শাহেরা কী ভাবে মোকাবিলা করেন, সেটাও দেখার।

তবে বিজেপি নেতারা এদেশের মুসলিম সমাজকে কোনঠাসা করার উদ্দেশ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বুমেরাং হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি । কারণ এদেশের শুধু মুসলিম নয়, প্রায় ২০০ জনগোষ্ঠী আছে যাদের  আলাদা আলাদা দেওয়ানি বিধি রয়েছে । তাই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হলে প্রতিরোধটা আসবে এই জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে । ফলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা অন্তত এই দেশে খুবই কঠিন । অমিত শাহরা যদি জোর করে এটা চালু করতে চান তাহলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । কারণ এদেশের আদিবাসী সমাজ থেকে তা বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠার সম্ভাবনা বেশি । কৃষি আইন জোর করে চালু করতে গিয়ে যেমন কৃষক আন্দোলনের চাপে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে একইভাবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে গেলে আরও বড় আন্দোলনের মুখে পড়তে পারে মোদী সরকার ।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ