জেলা 

AKM Farhad : সে দিন এক জনপ্রতিনিধিকে যেমন দেখলাম

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এস এম শামসুদ্দিন : একজন জনপ্রতিনিধি কেমন হবেন ,কেমন হওয়াকে মানুষ পছন্দ করেন এমন জিজ্ঞাসা প্রত্যেকটা নাগরিকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা । আমাদের কাছে তো বটেই ।

বহুদিনের ইচ্ছেকে সম্বল করে সেদিন আমি এবং প্রাবন্ধিক সাংবাদিক শিক্ষক এবং বাংলার জনরব নিউজ পোর্টালের সাম্মানিক সম্পাদক সেখ ইবাদুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিলাম উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের বন ও বনভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের কর্মাধক্ষ এ কে এম ফারহাদ সাহেবের নিউ টাউন আলিয়া ইউনিভার্সিটির সন্নিকটে তাঁর বাড়িতে ।

Advertisement

তখন বেলা মধ্যগগনে ।একের পর এক নানান মানুষ আসছেন ,উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। ফুরফুরা শরীফের দাদা হুজুর আবুবকর রহ এর একান্ত শিষ্য ও ফুরফুরা ফাতেহিয়া সিনিযার মাদ্রাসার প্রথম সুপার ছিলেন ফরহাদ সাহেবের দাদাজি রহ এর পিতা। তাঁর দাদাজি মাহমুদ বখতিয়ার রহ. ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা এলাকার জনপ্রিয় আধ্যাত্মিক পুরুষ ১২ বছর আগে তিনি ইন্তেকাল করেছেন।

এছাড়াও তাঁর আব্বাজান ছিলেন এক সাধক পির সাহেব। সেইসূত্রে জেলা ব্যাপী তাঁদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভক্তি তো আছেই। একের পর এক ব্যক্তিকে দেখলাম পা ছুঁয়ে সালাম বা প্রণাম করতে । সকলকেই সাদরে আহবান করে একের পর এক মানুষের সমস্যা শুনে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সমাধানের জন্য বলে দিচ্ছেন অথবা পরামর্শ দিচ্ছেন। চা বিস্কুট সামান্য হলেও আপ্যায়ন না করে ছাড়ছেন না। বললেন এটা আমাদের প্রথা ।বাড়ি আসা মেহমান বা অতিথিকে আপ্যায়ন করে ছাড়া আমাদের ট্রাডিশন ।

বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষ চাইছেন দাদা যেন আগামী নির্বাচনে তাঁদের এলাকা থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হন ।

হাসিমুখে শুধু তিনি বলছেন ভাই দল যেখানে চাইবেন দেবেন ,দল না চাইলে দেবেন না আমার বলার কিছু নেই।আমি মানুষের পাশে দিনরাত্রি ছিলাম আছি এবং থাকব।

নিউটাউন সংলগ্ন এলাকায় আকাশ ছুঁয়া বিল্ডিংয়ের গা ঘেষে তাঁর ছোট্ট দুতলা বাড়ি ।দেওয়ালের পশ্চিম গা ঘেষে মসজিদ ।

রাস্তার ধারে তাঁর বাড়ির গেট পার হয়ে সোফায় বসে অপেক্ষায় আমরা , আমাদের কথা শুনেই দৌড়ে এসে নিয়ে গেলেন জনতার মাঝে তাঁর চেয়ারের পাশে আমাদের বসিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলেন ।

২০১১ সালে খাদেমুল হুজ্জাজ হযে আমরা একসঙ্গে পবিত্র হজ্জ্ব গিয়েছি ।সে সব কত স্মৃতি রোমন্থন। এত ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের সঙ্গে যে আন্তরিকতা ভালোবাসা সম্মান দেখালেন তা সত্যিই আমরা অভিভুত ।এরই ফাঁকে এক সঙ্গীকে দিয়ে তাঁর দাদা হুজুর রহ মাজার স সবগলগ্ন বিশাল মাদ্রাসা ঘুরিয়ে আনলেন ।মওলানা মাসুম বখতিয়ারি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয় ,জড়িয়ে ধরলেন বুকে । আব্বার অনুগত ছাত্র এবং ফরহাদ ভাইয়ের দাদা ,২০১১ সালে তিনি তাঁর স্ত্রীও ছিলেন আমাদের হজের সঙ্গী। ঘুরিয়ে দেখালেন বিশাল।মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ ।

পীর মাহমুদ বখতিয়ার রহমাতুল্লাহ আলাইহির মাজার শরীফ।

আলিয়া মাদ্রাসা কলেজের ছাত্র নেতা থেকে উঠে আসা এ কে এম ফরহাদ ভাই ।এক তরুণ তুর্কি অক্লান্ত পরিশ্রমি যুবক । মানুষের পাশে মানুষের জন্য খিদমতের মধ্যে দিয়ে তাঁর উঠে আসা । রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছাকাছি থেকে তাঁর উত্তরণ। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের স্নেহভাজন একান্ত অনুগত বিশ্বাসী ফরহাদ তৃণমূল দল অনুমোদিত রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ।পরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ ।

 

একসময় তাঁকে দেখে অনেকেই উপেক্ষা করতেন ।কিন্তু সে নিজে কর্মদক্ষতায় অক্লান্ত পরিশ্রমে দিনরাত্রি বিপদে আপদে মানুষের পাশে থেকে প্রমান করে দিয়েছেন যে ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নয় ।

সকাল থেকে রাত্রি তিনি ছুটে বেড়ান জেলার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।মানুষের ডাকে মানুষের প্রয়োজনে।

যাঁরা তাঁকে এক সময় অবজ্ঞা করতো আজ তাঁরাই নানান প্রয়োজন নিয়ে হাজির হচ্ছে তাঁর কাছে ।এটাই তাঁর বিশেষত্ব ।

শুধু আমাদের নয় যে কোনও মানুষের ডাকে ও প্রয়োজনে যে সে সজাগ সচেতন সর্বদা প্রস্তুত সে প্রমাণ দেখলাম নিজ চোখে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সে সদা সজাগ অতিথিপরায়ণ । বৌমার নিজ হাতে আপ্প্যায়ন – আন্তরিকতা সত্যি ভোলার নয়।

সম্মান সকলে পেতে চায় , দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যাঁরা মানুষকে ব্যবহার করার লোকের অভাব নেই ।একাধিক দোকান খুলে বসে প্রচারের  চালিয়ে যাওয়ার লোক হরহামেশাই দেখা পাওয়া যাবে । কিন্তু অপরকে সম্মান শ্রদ্ধা ভক্তি কজন করতে পারে।

মিথ্যা পরিচয় আর মিথ্যা অহংকারে যাঁরা নিজেদের ভাবেন মহাক্ষমতাবান সমাজের মসিহা ভাবার নাটক করে ,প্রচারের ভেলায় ভেসে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য ব্যারোলের পর ব্যারোল তেল খরচ করে বেড়ায় তাঁরা না সমাজের না দলের ।জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে মানুষের সাথে মানুষের পাশে সুখে দুঃখে থাকার অভিজ্ঞতা প্রয়োজন ।প্রয়োজন নিরহংকারী মেজাজ । সেটা কজনের মধ্যে থাকে ,আছে ? বয়সটা কম হলোনা তো । চাটুকারদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে । নিত্য নতুন মুখ । এক শ্রেণীর মানুষ বড়ই বোকা – সত্যি হাঁদা । এদের পিঠে কাঁধে পা দিয়ে আখের গোছাতে একশ্রেণীর ভন্ডের নিরন্তর প্রয়াস দেখে ঘৃণা হয় লজ্জা লাগে। এর মধ্যেও ফরহাদ সাহেবদের কত মানুষ যাঁরা অক্লান্ত প্রয়াসী মানব কল্যাণকামী আছেন ।

ফেরার পথে স্মরণে আসছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই আগামী কবিতার ছত্র দুটি,

ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নয়

ভাবি আমি বনস্পতি ……

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ