ওয়াক্ফ বিল একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় পদক্ষেপ, যা মুসলমানদের বিরুদ্ধে আইনগত বৈষম্যের পথ প্রশস্ত করছে: সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি
বিশেষ প্রতিনিধি : জামাআতে ইসলামী হিন্দের সভাপতি সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি ওয়াক্ফ সংশোধনী বিলের তীব্র বিরোধিতা করেছেন এবং এটিকে ‘একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন, যা মুসলমানদের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বৈষম্যের পথ প্রশস্ত করে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৯৫ সালের ওয়াক্ফ আইনের যে বিধানগুলি বিলটি বাতিল করতে চায়, সেগুলি কেবল মুসলমানদের জন্যই নয়; অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়েরও একই ধরনের অধিকার রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় দান-সম্পর্কিত আইনে তাদের ব্যবস্থাপনা বোর্ডকে সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিধান রয়েছে। এছাড়াও, ‘ব্যবহারকারীদের দ্বারা মন্দির’ ঠিক যেভাবে স্বীকৃত, ‘ব্যবহারকারীদের দ্বারা ওয়াক্ফ’-কেও সেইভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং সীমাবদ্ধতা আইন (Limitation Act)-এর মতো কিছু আইনের আওতামুক্ত করার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে, শুধুমাত্র মুসলমানদেরই এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা স্পষ্ট আইনগত বৈষম্য এবং একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
তিনি আরও বলেন, “এই বিলটি ১৯৯৫ সালের ওয়াক্ফ আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে, যা ওয়াক্ফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় সরকারি হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি করবে এবং তাদের ধর্মীয় চরিত্রকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করবে। এটি সংবিধানের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন, যা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার নিশ্চিত করে। জনগণের ব্যাপক বিরোধিতা এবং লক্ষ লক্ষ আপত্তি সত্ত্বেও, সরকার এই বিলের প্রধান অংশীদারদের মতামত উপেক্ষা করেছে। মনে হচ্ছে, পরামর্শ প্রক্রিয়াটি ছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতা এবং বিলটি পাশ করার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল, ফলে জনগণের মতামত ও সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের উদ্বেগকে একেবারেই গুরুত্বহীন করে তোলা হয়েছে।”
জামাআত সভাপতি কিছু সংবাদমাধ্যমকে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বিলটি দুর্নীতি, অবৈধ দখল বা ওয়াক্ফ সম্পত্তির অপব্যবহার প্রতিরোধে কিছুই করে না। সরকার এমন কোনো ধারার উল্লেখ করতে পারবে না, যা এ বিষয়ে সহায়ক। বরং এটি ওয়াক্ফ ব্যবস্থাপনাকে আরও জটিল করে তুলবে। জামাআতে ইসলামী হিন্দ সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ দল, বিরোধী নেতা এবং এনডিএ জোটের শরিকদের আহ্বান জানাচ্ছে, তারা যেন এই অন্যায় বিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। দুঃখজনক যে, কিছু দল, যারা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করে, তারা এই বিলকে সমর্থন করেছে। তারা যেন বিজেপির রাজনৈতিক চাপে নতি স্বীকার না করে এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে অংশ না নেয়। যদি তারা এই বিলের বিরোধিতা করতে ব্যর্থ হয়, তবে ইতিহাস তাদের বিশ্বাসঘাতকতা মনে রাখবে এবং ন্যায়বিচার প্রিয় নাগরিকরা তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনবে।”
সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “জামাআত পুনরায় ঘোষণা করছে যে, ওয়াক্ফ সম্পত্তিগুলি ধর্মীয় দান, সরকারি সম্পত্তি নয়। ওয়াক্ফ ব্যবস্থাপনাকে দুর্বল করার এবং এর ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির যে কোনো প্রচেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়। যদি এই বিলটি অগণতান্ত্রিকভাবে পাশ করা হয়, তবে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (AIMPLB) এবং অন্যান্য মুসলিম সংগঠনের নেতৃত্বে দেশব্যাপী প্রতিবাদ জোরদার করা হবে। আইনটির বিরুদ্ধে সমস্ত সাংবিধানিক, আইনি, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া হবে, যতক্ষণ না সম্প্রদায়ের অধিকার সম্পূর্ণভাবে পুনঃস্থাপিত হয়।”