আধার কার্ড, এপিক কার্ড এবং রেশন কার্ড প্রয়োজনীয় নথি কি না, তা বিবেচনা করে দেখতে হবে নির্বাচন কমিশনকে : সুপ্রিম কোর্ট
বাংলার জনরব ডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য নাগরিকত্ব এর প্রমাণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ১১ টি তালিকা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন তা এবার প্রশ্ন তুললো দেশের শীর্ষ আদালত। আধার কার্ড, এপিক এবং রেশন কার্ড নিয়ে বিবেচনা করতে হবে কমিশনকে বলল সুপ্রিম কোর্ট।
আগামী ২৮ জুলাই পরবর্তী শুনানি। এক সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দেবে কমিশন। পাল্টা হলফনামা দেবেন মামলাকারীরা।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, আধার কার্ড, এপিক (ভোটার কার্ড) এবং রেশন কার্ড প্রয়োজনীয় নথি কি না, তা বিবেচনা করে দেখতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এদিন শুনানি চলাকালীন সময়ে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতি বলেন,আমাদের মতে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে আধার কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র (এপিক) এবং রেশন কার্ড অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একই সঙ্গে স্পষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে যে, ওই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের উপর নির্ভর করবে। তবে যদি কমিশন ওই নথিগুলি গ্রহণ না-করে, তবে তার উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। তাতে ভোটাররা সন্তুষ্ট হবেন।
সুপ্রিম কোর্ট এও জানিয়েছে, এখনই কমিশনের কাজে স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে না। এদিন শীর্ষ আদালতে কমিশনের আইনজীবী বলেন,কমিশনের উপর বিশ্বাস রাখা হোক। অগস্টের প্রথম সপ্তাহে মামলাটি রাখা হোক। তত দিনে বিহারে ফর্ম পূরণ শেষ হয়ে যাবে। তাতে বিষয়টি সবার কাছে আরও স্পষ্ট হবে। এরপর,বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, নির্দেশ দিচ্ছি না, কিন্তু আধার কার্ড বিবেচনার মধ্যে রাখুন। কমিশনের উপর বিশ্বাস রাখছি। এখনই কোনও হস্তক্ষেপ করছি না। কিন্তু খসরা ভোটার তালিকা প্রকাশ করা যাবে না।
কমিশনের আইনজীবি বলেন, তালিকা প্রকাশ করতে দিন। প্রয়োজনে পরে আদালত হস্তক্ষেপ করুক। আপাতত তালিকা প্রকাশ করতে দিন।
বিচারপতি: আধার আইনত স্বীকৃত। সেটা কী ভাবে উপেক্ষা করা যায়?
কমিশন: ভোটার তালিকা নিয়ে অনেক কিছু করা হচ্ছে। দয়া করে আপাতত আধারের বিষয়টি নিয়ে নির্দেশ দেবেন না।
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে আদালতের কাছে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন কমিশনের আইনজীবী। বিচারপতি ধুলিয়ার মন্তব্য, “আমরা বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু সময় নিয়ে আমরা চিন্তিত।” বিচারপতি আরও বলেন, “কমিশনকে সহজ এবং সঠিক পদ্ধতি মেনে কাজ করা উচিত। প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হচ্ছে বিষয়টি বেশ জটিল।”
বিচারপতির তাড়াহুড়ো সংক্রান্ত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কমিশনের আইনজীবী বলেন, “অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করতে হবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই অনেক কিছু করা যাবে।”
কমিশনের উদ্দেশে বিচারপতি বাগচীর প্রশ্ন, “এক মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চাইছেন কেন? জনগণনা সারা বছর ধরে হয়। আপনারা এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন?”
ভোটার তালিকায় কাউকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না: কমিশন
কমিশন: ভোটার তালিকায় কাউকে আমরা বাদ দিচ্ছি না। কারও বাবা-মায়ের নাম থাকলে ১১টি নথি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২০০৩ সালে মাত্র তিনটি নথির কথা বলা হয়েছিল। এখন ১১টি নথির কথার বলা হয়েছে।
সব আবেদনপত্র জমা হওয়ার পরে যাচাই পর্ব শুরু হবে: কমিশন
কমিশন: আধার নাগরিকত্ব বা বাসস্থানের প্রমাণ নয়। সব আবেদনপত্র জমা হওয়ার পরে যাচাই পর্ব শুরু হবে। সেখানে বিষয়টি বিবেচনা করে আধার যাচাই করা যেতে পারে।
বিচারপতি বাগচী: কিন্তু তখন তো খসড়া ভোটার তালিকা তৈরি হয়ে যাবে। ফলে সম্ভাবনা থাকে যে খসড়া তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার?
কমিশন: ধরুন বিহারের নির্বাচন নভেম্বর মাসে। তার আগে প্রয়োজনে পরে আমরা পদ্ধতি সাময়িক স্থগিত করব। পরে আবার শুরু হবে। আমাদের উদ্দেশ্য, আমরা এই পদ্ধতিতে ভোটার তালিকায় কোনও খামতি রাখছি না। প্রতিটি বৈধ ভোটার তালিকায় থাকবেন। শুধুমাত্র মৃত ও অন্যত্র চলে গিয়েছেন এমন ভোটাররা বাদ পড়বেন।
সুপ্রিম কোর্টে কমিশনের আইনজীবী বলেন, “আধার কার্ড ভারতে বসবাসকারী নাগরিকদের দেওয়া যেতে পারে। আধার আইনের অধীনে প্রতিটি বাসিন্দার অধিকার আছে আধার কার্ড পাওয়ার। কিন্তু আধার নম্বর নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না। তবে কেউ যদি আমার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে, আমি আধার দেখিয়ে তা প্রমাণ করতে পারি।”
বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, “জাতি শংসাপত্র আধারের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। আপনাদের প্রয়োজনীয় তালিকায় জাতি শংসাপত্র রয়েছে। অথচ আধার নেই।”
কমিশনের আইনজীবী বলেন, “জাতি শংসাপত্র শুধুমাত্র আধারের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয় না।”
বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, “কিন্তু এখন আধার অনেক গুরুত্তপূর্ণ নথি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আপনারা সেই নথিকেই বাদ দিতে চাইছেন।”
বিচারপতির প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কমিশনের আইনজীবী বলেন, “আধার কার্ড পরিচয় প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অন্য বিষয়ের জন্য তার ব্যবহার সীমিত। প্রতিটি নথির নিজস্ব সীমিত উদ্দেশ্য রয়েছে, শুধুমাত্র সেই উদ্দেশ্যেই সেটা বৈধ।”
নথি হিসাবে আধার কার্ড দেওয়া যাবে কি? জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্টনথি হিসাবে আধার কার্ড দেওয়া যাবে কি না, কমিশনের কাছে জানতে চাইলেন বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া।
বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে কমিশনের আইনজীবী বলেন, “বৈধ ভোটার কারও নাম বাদ যাবে না। প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কমিশনের প্রতিনিধিরা সমীক্ষা করবেন।”