এসআইআরে ব্যর্থ এবার কোরআন নিয়ে অবান্তর মন্তব্য করে বিজেপির ভোট রক্ষার চেষ্টা করছেন বিধায়ক অসীম সরকার
বুলবুল চৌধুরী : নদীয়া জেলার হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার সম্প্রতি কোরআন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি যা বলেছেন তা এক কথায় ধর্মীয় অবমাননা বললে কম বলা হবে না। হঠাৎ করে কোরআনকে টেনে আনলেন কেন একজন গায়ক অসীম সরকার। শোনা যায় এই বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। সেখান থেকে তিনি বেশ কয়েক বছর আগে পশ্চিমবাংলায় এসেছেন এবং বিজেপির বদৌলতে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য হয়েছেন। তিনি নানা সময় নানা ভাবে এই রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশানা করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করেছেন। কিন্তু তাতে খুব একটা কিছু হচ্ছিল না। সুতরাং এবার সরাসরি ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি কী মন্তব্য করেছেন তার বিস্তারিত বিবরণ আমি দিচ্ছি না এই কারণে যে এটা ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। আপনারা অনেকেই সেই বক্তব্য দেখেছেন।আমার প্রশ্ন এখানে হঠাৎ কী এমন হলো এস আই আর নিয়ে যখন বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ প্রচন্ড অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে ঠিক তখনই হিন্দুত্বের ভোটের দাবিদার বিজেপির নেতারা নানা অকাজ কুকাজ কেন করছেন?
যেমন ধরুন বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি জনপ্রিয় মানুষ তাকে খুন করা হয়েছে তার পাল্টা হিসাবে তার অনুরাগীরা বাংলাদেশ জুড়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। সেটা কারো কাছেই অনভিপ্রেত নয়। সবাই এর বিরোধিতা করছেন এমনকি বাংলাদেশ সরকারের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাও প্রতিবাদ করেছেন। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের একাধিক রাজনৈতিক দলও এর প্রতিবাদ করেছেন আর এই ঘটনাতেই একজন ব্যক্তি কে মারা হয়েছে শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে মারা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বিশেষ ব্যক্তিকে সামনে এনে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে আর তা নিয়ে তোলপাড় করার চেষ্টা করছেন এপার বাংলার কিছু বিজেপি নেতা। এতে তেমন একটা সাড়া পাওয়া গেল না কারণ অনেকেই এটাকে ওই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল।

বরং ভারত সরকার কেন চাপ সৃষ্টি করছে না বাংলাদেশ সরকারের উপর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করল। বুমেরাং হলো বিজেপির এই রাজনীতি। তা থেকে নজর ঘোরানোর জন্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, একদল মানুষকে নিয়ে অবশ্য ভাড়াটে মানুষ বলে মনে হয়। তাদের নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে বেক বাগানে হাজির হলেন। এত মানুষকে নিয়ে বেকবাগানে বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনার অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর নাম করে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেয়ার মধ্যে যে দেশের বদনাম হচ্ছে সেটাও বুঝে উঠতে পারেনি বিজেপির তথাকথিত নব্য নেতা শুভেন্দু অধিকারী। আসলে শুভেন্দু অধিকারী কোন কালেই বিজেপির শুভাকাঙ্ক্ষী নয়, তাই বাংলাদেশ উপ-কমিশন অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বড় করে ছাপা হল আর তাতে নাক কাটা গেল আমাদের ভারতের। আমার প্রিয় জন্মভূমির বদনাম হলো।
এতেও কাজ হলো না কারন মানুষ বুঝে গেছে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী যে নাটক করেছিলেন ১ কোটি রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাম বাদ যাবে বলেছিলেন তা বাদ যায়নি। উপরন্তু এই রাজ্যের বসবাসরত কয়েক লক্ষ হিন্দু ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে। আর এ থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপির কিছু নেতা কখনো বাংলাদেশ নিয়ে হইচই করছেন। কখনো হিন্দুরা বিপন্ন বলে হৈচৈ করছেন করে সাধারণ মানুষের নজর ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন। কিন্তু এতেও লাভ হলো না প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এস আই আর এর নাম করে এই রাজ্যে হিন্দু ভোটারের নাম কেন কাটা যাচ্ছে! হিন্দু হৃদয় সম্রাট ক্ষমতায় থাকার পরও কেন বাংলার হিন্দুরা বিপন্ন তাহলে কী বাংলা ভাষায় কথা বলাটা অপরাধ?
এবার সবশেষে আসরে নামলেন হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার। অসীম বাবুকে ব্যক্তিগতভাবে আমি শ্রদ্ধা করতাম। কারণ তিনি একজন গায়ক ভালো লোকগান গান এবং পদাবলী গানও তার গলায় খুব ভালো লাগে। এরকম একজন মানুষের মুখ থেকে কোরআন সম্পর্কে একটা অহেতুক মিথ্যা বিষয়কে সামনে এনে বিতর্ক তৈরি করবে সেটা আমাদের কাছে কাম্য ছিল না। আসলে বিজেপি আরএসএস এদের শিক্ষা
টায় এমন যে ক্রমাগত মিথ্যা প্রচার করে যাও আর সেই মিথ্যা প্রচারকে সামনে রেখেই সাধারণ মানুষের কাছে তা সত্য বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করো। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? যে ধর্মগ্রন্থকে প্রায় ১৫শ ও বছর ধরে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সম্মান জানাচ্ছে। সেই ধর্মগ্রন্থকে এইভাবে ২৭ জন শয়তান লিখেছেন বলে যে বিবৃতি পেশ করেছেন তাকে তিনি প্রমাণ করতে পারবেন। শুধু তাই নয় এই বিবৃতির খবর যদি মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ে আরব দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে তাতে কি ভারতবর্ষের সুনাম বাড়বে? নরেন্দ্র মোদি কদিন আগেও একটি মুসলিম রাষ্ট্রে গিয়ে সেই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান এনেছেন। নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন অন্তত বিশ্ব রাজনীতিতে এমনকি আরব দুনিয়াতেও তিনি নিজেকে একজন সেকুলার মানুষ হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করেন সেই নরেন্দ্র মোদির কি সুনাম বাড়বে?
কিছুদিন আগেই আপনাদের মনে আছে নুপুর শর্মা, হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বিরুদ্ধে কুমন্তব্য করেছিলেন তা নিয়ে বিশ্বদুনিয়া কি প্রকাশ করেছিল তা ভুলে যাওয়ার কথা নয় কাতারের রাজকন্যা যে ভাষায় ভারত সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন তা স্বাধীন ভারতের ৮০ বছরের ইতিহাসে সেইরকম ঘটনা ঘটেনি। দেশের সুনামকে বহির্বিশ্বে নষ্ট করার অধিকার গেরুয়া শিবিরের নেই। অসীম সরকারের নেই এটা অসীম সরকারকে মনে রাখতে হবে। অসীম সরকারকে মনে রাখতে হবে। তিনি একজন বিধায়ক হিসাবে সংবিধানের শপথ নিয়েছেন সেই সংবিধানটা সেকুলার সংবিধান। এখনো পর্যন্ত এদেশে নতুন করে কমিউনাল সংবিধান তৈরি হয়নি। অতএব সেকুলার সংবিধানের শপথ নিয়ে একটি গোষ্ঠীকে একটি ধর্মকে একটি ধর্ম বিশ্বাসীদের উপর তাদের ভাব আবেগে আঘাত দিতে তিনি পারেন না এর জন্য তিনি ক্ষমা চাইতেই পারেন ক্ষমা চাইলে দোষের কিছু নেই। কিন্তু আমরা জানি তিনি ক্ষমা চাইবেন না।
কোরআন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে এই রাজ্যের বিভিন্ন থানায় অসীম সরকারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। বেশিরভাগ এফআইআর দায়ের হয়েছে মুসলিম সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে নিরব রয়েছেন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করার পরেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন সেই বিধায়ক সম্পর্কে নীরবতা দেখান তখন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে।
এদিকে অসীম সরকার আবার নতুন নাটক শুরু করেছেন তিনি বলতে শুরু করেছেন তাকে নাকি খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে কে হুমকি দিয়েছে কারা হুমকি দিয়েছে তা নিয়ে তিনি খোলাসা করেননি। ইতিমধ্যেই তিনি চাকদহ থানাতে এফআইআর করেছে বলে জানা গেছে। আইন আইনের পথে চলবে এটা যেমন সত্য তেমনি একটি ধর্ম বিশ্বাসের উপরে আঘাত দেওয়াটা অপরাধ শুধু নয় গহিত অপরাধ বললে ভুল বলা হবে না। এই গর্হিত অপরাধ করার জন্য বিজেপি দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দেয়াটা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে বিজেপির তাচ্ছিল্য মানসিকতা থাকতেই পারে। কিন্তু কোটি কোটি মানুষ যেটা বিশ্বাস করে সেই বিশ্বাসে আঘাত দেওয়াটা অপরাধ বলে মেনে নেয়ার মধ্যে একটা শিষ্টাচারের পরিচয় পাওয়া যায় একটা সৌজন্যে পরিচয় পাওয়া যায়। শমীক ভট্টাচার্য সেই পরিচয় রাখবেন সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।

