কলকাতা 

Firhad Hakim: কলকাতার মেয়র বিতর্কিত মন্তব্য করছেন কেন? রহস্য?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম:  কলকাতা পুরসভার মেয়র তথা রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত স্নেহভাজন বলে রাজ্য রাজনীতি তো বটেই দেশের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ ফিরহাদ হাকিম। সেই ফিরহাদ হাকিম কয়েক মাস অন্তর বিতর্কিত মন্তব্য করে চলেছেন। কয়েক মাস আগেই আলিপুরের ধনধান্য সভাগৃহ থেকে মুসলিমদের একটি ধর্মীয় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন আমরা সৌভাগ্যবান যে আমরা মুসলমান হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। কাল কিয়ামতের দিনে আমাদের বেহেস্তের নসিব হবে কিন্তু তাই আমাদের এই সৌভাগ্যের ভাগীদার হওয়ার জন্য আমাদের ধর্মের বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। এই কথা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। কলকাতার একজন প্রখ্যাত দৈনিক পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক তিনি তো রীতিমতো youtube চ্যানেলে ফিরহাদ হাকিমের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ ফিরহাদ হাকিম ধর্মান্তর করার চেষ্টা করে চলেছেন তার বিরুদ্ধে এটা ছিল অভিযোগ। এমন ভাবে কলকাতার মিডিয়া মহল প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিল তাতে মনে হচ্ছিল যেন ফিরহাদ হাকিমের বিদায় আসন্ন। কিন্তু দুর্ভাগ্য কি সৌভাগ্য জানিনা ফিরহাদ হাকিমের বিদায় আসন্ন হয়নি বরং দলে তার প্রমোশন বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফিরহাদ হাকিম প্রতিষ্ঠিত একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে তার নির্বাচনী এলাকা খিদিরপুরে। এই কোচিং সেন্টার টার মূল  উদ্দেশ্য হল যে সকল গরীব ছেলেমেয়েরা মেধাবী হওয়া সত্বেও ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মতো অর্থ না থাকার কারণে কোচিং নিতে পারছেন না তাদেরকে কোচিং দেওয়া এর বাইরেও যারা মেধাবী সন্তান রয়েছেন তাদেরকে ডাব্লু বিসিএস আইএএস আইপিএস এবং ইউ পি এস সির বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য কোচিং দেওয়া। মূলত এই কোচিং সেন্টারে বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরিব মুসলিম বাড়ির ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে। এই কোচিং সেন্টারের উদ্যোগে গতকাল শনিবার ধনধান্য মঞ্চে বন্দর এলাকার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয় ফিরহাদ থার্টি নামে এই সংস্থার উদ্যোগে। ফিরহাদ থার্টি এই সংস্থাটি প্রতিবছরই ফিরহাদ হাকিমের এলাকার শিক্ষকদের সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। এই বছর এই অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বর মাসে কিন্তু নানা কারণে সেটা হয়নি, ১৪ই ডিসেম্বর সেই অনুষ্ঠানটা হয়।

Advertisement

সেখানে বক্তব্য রাখতে উঠে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম নাকি বলেছেন খুব শীঘ্রই তারা সংখ্যা গুরু হয়ে যাবেন। আসলে এই রাজ্যের সাংবাদিকদের বোধ বুদ্ধি বিবেক সবই তারা বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার কাছে বিক্রি করে রেখেছেন। না হলে এই ধরনের মন্তব্য লেখার আগে সাংবাদিকদের ১০ বার ভাবার উচিত ছিল । বিষয়টি কি?  ফিরহাদ হাকিম বলতে চেয়েছেন ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেই সকল গরিব ছেলেমেয়েদের যারা ফিরহাদ থার্টি নামক কোচিং সেন্টার থেকে পড়াশোনা করছে। তিনি বলতে চেয়েছেন যে, আমরা যদি সঠিকভাবে কোচিং নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় পোস্টে আমরা বসতে পারি তাহলে আমরা সংখ্যাগুরুর চেয়েও সংখ্যা গুরু হয়ে যাব। এই কথার অর্থ হচ্ছে মানুষকে উৎসাহিত করা কিন্তু যাকে দেখতে না পারি তার চলন বাঁকা যদিও ফিরহাদ হাকিম মুসলিম সমাজের স্বার্থে কতটা করেছেন সেটা অবশ্যই বিচার্য কিন্তু ফিরহাদ হাকিম যেহেতু মুসলমান তাই তাকে নিশানা বানাতে হবে। এটাই হচ্ছে বর্তমান মিডিয়াদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। বিরোধী দলের নেতা যখন প্রতিদিন এই রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিশানা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মমতাজ বেগম বলছেন তখন তো মিডিয়া নিরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করছে কেন?

তবে আমি মনে করি, ফিরহাদ হাকিম যা বলেছেন তিনি যথেষ্ট ভালো কথা বলেছেন তিনি যে সমাজের সন্তান সেই সমাজের স্বার্থে তিনি যে কোচিং সেন্টারটা গড়ে তুলেছেন সেই কোচিং সেন্টারটা যদি সত্যিকার অর্থে প্রতিবছর 10 থেকে 15 টি অফিসারের জন্ম দিতে পারে তাহলে সংখ্যালঘু হলেও তাদেরকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা কারো থাকবে না। ফিরহাদ এতদিন ধরে পুজো করতেন এসব কথা বলতেন না, তিনি যখন এসব কথা বলতে শুরু করেছেন তখন অবশ্যই আমাদের রাজ্যের কিছু মানুষ কিছু সাংবাদিক কিছু সংবাদ মাধ্যম তার বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ফিরহাদ এর বক্তব্য তারা যে বুঝতে পারেনি তা নয় কিন্তু জেনে বুঝেও বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করতে হচ্ছে। এতে আর যাই হোক ফিরহাদে সুবিধা হচ্ছে রাজনীতির মঞ্চে তিনি অনেকটা বড় জায়গা পেয়ে যাচ্ছে।

আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরহাদ হাকিমকে আরো বেশি গুরুত্ব দেবেন কারণ বাংলার সংখ্যালঘু সমাজের ফিরহাদ হাকিম এই মুহূর্তে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়ে যাচ্ছে। মিডিয়া যত তার বিরুদ্ধে নেগেটিভ প্রচার করবে ফিরহাদের জনপ্রিয়তা ততটাই বাড়বে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রসায়ন। শেষ পর্যন্ত ফিরহাদ হাকিম যদি তৃণমূল কংগ্রেসের আরো বড় পদে উঠে যান তাতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না কারন এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার নেপথ্যে বাঙালি মুসলিমদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ফিরহাদ হাকিমের জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়ে দিতে পারলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুবিধা আরো বেশি হবে। এজন্যেই মিডিয়া যতই ফিরহাদের  বিরুদ্ধে প্রচার করুক না কেন ফিরহাদ কিন্তু সংখ্যালঘুদের জন্য এভাবেই বলবেন যেভাবে বলতে মমতা বলতে বলেছেন।

 

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ