অন্যান্য কলকাতা 

BJP : বিজেপির বুলডোজার রাজনীতির নেপথ্য কাহিনী

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : সম্প্রতি দেশজুড়ে অস্থিরতা বেড়ে চলেছে । যেকোনো দেশের গনতান্ত্রিক সরকার চেষ্টা করে থাকে যাতে দেশের অভ্যন্তরে শান্তি-সংহতি বজায় রাখতে । কোনো ভাবেই যেন অশান্তি বা অস্থিরতা বৃদ্ধি না পায় । দেশের মানুষকে শান্তি এবং নিরাপত্তার সঙ্গে সহাবস্থান করানোর লক্ষ্যেই সব সরকার কাজ করে থাকে । সেই দায়িত্ব পালন করার জন্যই সরকারের পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করে । জনগণের দেওয়া করের টাকায় এদের বেতন হয় । তাই জনসাধারণকে নিরাপত্তার সঙ্গে রাখাটা এদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব । কিন্ত দুঃখের হলেও সত্য ইদানিং যেন দেশে অস্থিরতা তৈরি করাটাই সরকারের প্রধান কাজে পরিণত হয়ে পড়েছে । কখনও হিজাব নিয়ে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে আক্রমণ করা হচ্ছে, ওই সম্প্রদায়ের মেয়েদের হিজাব পড়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে , আবার কোথাও হালাল খাবার নিয়ে সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে । আবার কোথাও গরুর মাংস রয়েছে এই অভিযোগ তুলে পেটানো হচ্ছে । শুধু সংখ্যালঘু মুসলিমরা যে টার্গেট তা নয়, বরং দলিতরা ইদানিং সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে । অথচ আজকের কেন্দ্রের শাসক গোষ্ঠী দলিতরা হিন্দুদের অংশ বলে দাবি করে থাকে । এইসব দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে ক্ষমতাসীন এক শ্রেণির রাজনৈতিকদল হিন্দু বলে দাবি করে ভোট ভিক্ষা করে । আর এরা শুধুমাত্র মুসলমানদেরকে জব্দ করা যাবে এই প্রত্যাশা থেকে ভোট দিয়ে থাকে । সদ্য সমাপ্ত উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে আমরা এই রাজনৈতিক চিত্র দেখতে পেয়েছি । যোগজি ক্ষমতার আসার পর পরেই দলিতদের উপর অত্যাচার বেড়েছে । কিন্ত নিরব সবাই ।

উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন সময়ে কাশ্মীর ফাইলস নামে একটি সিনেমা রিলিজ করা হলো । সেই সিনেমা করমুক্ত করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয় । কারণ এই সিনেমাতে আমরা দেখেছি কাশ্মীর থেকে হিন্দু পন্ডিতদের উচ্ছেদের পেছনে মুসলিম সম্প্রদায়কে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে । প্রায় ৩২ বছরের আগের ঘটনাকে সামনে এনে আজকের বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে । কিন্ত আশার কথা এই যে, বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি তথ্য বহুল । কাশ্মীর থেকে হিন্দু-পন্ডিতদের বিতাড়ণের সময় দিল্লিতে ক্ষমতাসীন ছিল বিজেপি সমর্থিত বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের সরকার । আজকের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা প্রশ্ন তুলল শুরু করল,কাশ্মীর থেকে হিন্দু পন্ডিতদের বিতাড়িত করার সময় কেন নীরব ছিলেন বাজপেয়ী-আদবাণী? আর এই সব প্রশ্নের মুখে অস্বস্তিতে পড়ে যায় গেরুয়া শিবির । ফলে কাশ্মীর ফাইলস দিয়ে কিছুটা ফায়দা হলে সার্বিক সাফল্য এলো না ।এরপর হিজাব কান্ড, তারপর হালাল খাবার নিয়ে দেশজুড়ে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা । এতেও খুব বেশি সাফল্য এলো না । বরং বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিল ।

Advertisement

ঠিক রমযান মাসেই সামনে এলো মাইকে আজান প্রসঙ্গটি । তা নিয়ে এখনও বাজার গরম করার চেষ্টা চলছে । মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকারকে অপদস্ত করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে গেছে গেরুয়া শিবির। কারণ মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মাইক ব্যবহার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকাকে কার্যকর করবে সরকার । ফলে সংবিধান এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কথা বলার পর আর নতুন করে উন্মাদনা তৈরি করা যাচ্ছে না । সুতরাং এবার উত্তরপ্রদেশের ১০ হাজার মসজিদ থেকে মাইক খুলে নেওয়া হলো । তাতে কোনো উত্তেজনা তৈরি হলো না । গেরুয়া শিবিরে আসল লক্ষ্য কার্যকর হচ্ছে না । এরপর নতুন থিয়োরি সামনে আনা হলো বুলডোজার থিয়োরি।

বেআইনি নির্মাণ ভাঙা নিয়ে এবার রাস্তায় নামল দিল্লি পুরসভা । জাহাঙ্গিরপুরীতে সাম্প্রদায়িক অশান্তি হওয়ার পর একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে নিশানা করা হয়। এখানে অধিকাংশ পশ্চিমবাংলার বাঙালি মুসলিমরা বাস করে । এর নেপথ্যে একটা ইতিহাস আছে । পূর্ব মেদিনীপুরে হলদিয়া বন্দর যখন তৈরি হয়েছিল সেই সময় বেশ কিছু মুসলিম পরিবারকে হলদিয়া থেকে উচ্ছেদ করা হয় । তাদের বেশ কয়েকটি পরিবারকে সেই সময় দিল্লিতে পুর্নবাসন দিয়েছিল তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকার । তাই আমরা একটু পর্যবেক্ষণ করলেই দেখতে পাবো দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরি এবং সীমাপুরে হলদিয়া মহকুমা এলাকার অনেক মানুষ বাস করেন । যাইহোক সহিংসতার পর ওই এলাকার বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে উদ্যোগ নেয় দিল্লি পুরসভা । তারপর এই বুলডোজার বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আর এই ঘটনার কয়েকটি দিন কাটতে না কাটতেই এবার শাহিনবাগে পৌছে যায় বুলডোজার । অথচ এখানে কোনো অবৈধ নির্মা্ণ নেই । তবু সকাল থেকে প্রচারের আলোয় পৌছে যায় সিএএ আন্দোলনের ঐতিহাসিক পীঠস্থান শাহিনবাগ। সমগ্র দেশের মানুষের কাছে বার্তা যায় শাহিনবাগেও বেআইনি নির্মাণ হয়েছে, তাই ভাঙতে যাচ্ছে দিল্লি পুরসভা । দিনের শেষে একটা ইটও ভাঙতে পারেনি দিল্লি পুরসভা ! তারপরেও অভিযান কেন ?

এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে দেশজুড়ে মুসলিম সমাজ সম্পর্কে একটা নেগেটিভ বার্তা দেওয়া । দ্বিতীয় কারণ অস্থিরতা তৈরি করা । ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা ।স্বাধীনতা ৭৫ বছর পর সম্ভবত এই প্রথম দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে প্রশাসনের অন্দর মহল থেকে । দেশের সংবিধান, আইন-কানুন প্রথা সব কিছুকে জলাজ্ঞালি দিয়ে । তবে আমাদের সর্তক হতে হবে । শিক্ষা নিতে হবে শ্রীলঙ্কা থেকে । জাতি বিদ্বেষকে হাতিয়ার করে সেখানকার সরকার বারবার বিভেদের রাজনীতি করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছিল তার পরিণতিতে শ্রীলঙ্কা বর্তমান অবস্থা কোথায় গিয়ে পৌছেছে ! তাই সাধু সাবধান !

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ