অন্যান্য 

Congress Crisis : কংগ্রেসের জি-২৩-এর বিদ্রোহের কারণ এবং দলের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর !

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : ২০১৪-এর পর থেকে কংগ্রেস দল কয়েকটি ক্ষেত্রে সাফল্য দেখাতে পারলেও সার্বিক অর্থে তেমন কোনো বড় সাফল্য দেখাতে পারছে না । এর কারণ কী? তা অবশ্যই পর্যালোচনা করার প্রয়োজন আছে । কিন্ত কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে এই পর্যালোচনা নজরে পড়ছে না । এদের মধ্যে বেশ কয়েক জন প্রথম সারির নেতা আছেন কপিল সিব্বল থেকে শুরু করে গুলাম নবী আজাদ পর্যন্ত বিদ্রোহী বলে চিহ্নিত হয়েছেন । যাঁদেরকে সংবাদ মাধ্যমের ভাষায় জি-২৩ বলা হচ্ছে । প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, জি-২৩ এর মধ্যে ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা ছাড়া আর কারও তেমন জনসমর্থন নেই । তবু এই সব জনভিতিহীন নেতারা প্রতিনিয়ত কংগ্রেস হাইকমান্ডকে আক্রমণ করে চলেছেন ।

এদের দাবি গান্ধী পরিবারকে সামনে রেখে আর কংগ্রেস সাফল্য পাবে না । তাহলে কাকে সামনে রাখলে পাবে সাফল্য ? এর কোনো উত্তর আর আসছে না । তবে এই সব নেতাদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি রাহুল গান্ধীকে নিশানা করেছেন । কারণ এঁরা মনে করছেন রাহুলকে দিয়ে সেভাবে আর সাফল্য পাওয়া যাবে না । তবে সোনিয়া গান্ধীর প্রতি এঁদের সেই অর্থে কোনো ক্ষোভ নেই বলেই জানা গেছে । এখন প্রশ্ন রাহুল গান্ধীর কেন এঁরা বিরোধী ? আর রাহুল গান্ধীর বিরোধিতা করেও কীভাবে কংগ্রেসের মধ্যে এখনও থাকতে পারছেন ?

Advertisement

এই দুই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে একটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে । ২০১৯ –এর লোকসভা নির্বাচনের সময় কংগ্রেস দলের প্রচারে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় দেখা গিয়েছিল রাহুল গান্ধীকে । আজকে বিদ্রোহী জি-২৩ এর নেতাদের মধ্যে দু একজনকে বাদ দিলে তেমনভাবে প্রচারে দেখা যায়নি । শুধু তাই নয় মোদী সরকার দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর রাহুল গান্ধী ছাড়া আর কোনো কংগ্রেস নেতাকে তেমনভাবে মোদী সরকারের সমালোচনা করতে দেখা যায়নি । অর্থাৎ বিরোধী নেতা হিসাবে একমাত্র মোদীজির সমালোচক হিসাবে সমগ্র দেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন রাহুল গান্ধী । জি-২৩ এর নেতারা ব্যক্তি স্বার্থে সাংসদ-বিধায়ক হতেই ব্যস্ত ছিলেন । দলকে খাদের কিনারা থেকে সামনে সারিতে তুলে আনতে কোনো চেষ্টা কী করেছেন জি-২৩ এর নেতারা ?

কংগ্রেস দল কপিল সিব্বলদের কী দেয়নি ! কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে শুরু করে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সব রকম সুযোগ ভোগ করেছেন এই জি-২৩ এর নেতারা । দলের কঠিন সময়ে এই সব নেতারা সমালোচনা করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন , দলকে শক্তিশালী করার দিকে তাঁরা মনোনিবেশ করেন নি । অথচ সমালোচনা করেই চলেছেন ।

এখন জানার বিষয় রাহুল কেন নিশানায় ? আমাদের মনে হয়েছে কংগ্রেস দলের প্রবীণ নেতাদের একাংশের সঙ্গে আরএসএসের সখ্যতা রয়েছে । এই সব নেতাদের দিয়ে এক সময় আরএসএস তার নীতি ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করেছে । আর কংগ্রেস দলের অন্যতম নেতা হিসাবে রাহুল গান্ধী আর এস এস মুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছেন আর এটাই পচ্ছন্দ হয়নি কিছু প্রবীণ কংগ্রেস নেতার । তাঁরা কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে রাহুল বিরোধী অভিযানে নেমেছেন ।

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর কংগ্রেস দলের পর্যালোচনা বৈঠকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বক্তব্য রাখতে এই সব বিজেপি ঘেঁষা নেতাদেরকে নিশানা করেছিলেন । তার ফলে ওই সব নেতারা নিরবে কংগ্রেস দলকে ভেতর থেকে দূর্বল করেছেন । আর সোনিয়া গান্ধীর সহানুভূতি আদায় করে বিশ্বাসঘাতকতা করা সত্ত্বে দলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে গেছেন । সোনিয়া গান্ধীর আপোষকামী মানসিকতার কারণেই এঁরা এখনও কংগ্রেস দলে টিকে আছেন । কংগ্রেস দল যদি এঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাহলে আরও সংকটে পড়বে কংগ্রেস ।

কিছুদিন আগে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, কংগ্রেসে যাঁরা আরএসএস ও বিজেপি ঘনিষ্ঠ তাঁরা বেরিয়ে যেতে পারেন । এই কথা স্পষ্ট করে বলে রাহুল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কংগ্রেসের মধ্যে অনেকেই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন । আর এই স্পষ্ট কথা বলার কারণেই জি-২৩ নেতাদের কাছে ভিলেন বনে গেছেন রাহুল গান্ধী ।

এছা্ড়াও মনে রাখতে হবে জি-২৩ নেতাদের নিজস্ব কিছু স্বার্থ আছে । যেমন , কপিল সিব্বলকে রাজ্যসভায় যেতে হবে , আনন্দ শর্মার রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ পর্যায়ে, গুলাম নবী আজাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে । সুতরাং এঁরা বিদ্রোহের নাটক করে, রাহুলকে নিশানা বানিয়ে সোনিয়া গান্ধীকে ব্লাকমেল করে আবার কোনো একটি রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন । আর একাজে সফল হওয়ার জন্য সফট টার্গেট করা হয়েছে রাহুল গান্ধীকে । কংগ্রেসের এই জি-২৩ নেতাদের মধ্যে এক দুজন বাদ দিলে কারও কোনো জনভিতি নেই । এদিকে এঁদের বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করে  দেশবাসীকে জানানো হচ্ছে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ লড়াই কত তীব্র । রাহুল গান্ধী দলের মধ্যেই সমালোচনার শিকার তিনি কীভাবে মোদীর বিকল্প হবেন ?

এই প্রসঙ্গে আমরা বলতে পারি রাহুল গান্ধীর কিছু সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়েছে এনিয়ে কোন সন্দেহ নেই । বিশেষ করে পঞ্জাবে অতি মাত্রায় সিধুকে প্রশয় দেওয়ার ফল ভুগতে হয়েছে । অমরিন্দর সিংহকে দলে ধরে রাখতে পারতেন । পঞ্জাব নিয়ে রাহুল গান্ধী সঠিক ভাবে রাজনৈতিক পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেননি । ফল ভুগতে হয়েছে । প্রশান্ত কিশোরকে দায়িত্ব দেওয়ার পর তাঁকে সরিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি । তবে উত্তরপ্রদেশে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাল চেষ্টা করেছেন । বিগত ৫ বছর ধরে নিয়ে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন । তা সত্ত্বে সাফল্য পায়নি কেন ??  তা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে । তবে এরজন্য কোনো ভাবে প্রিয়াঙ্কাকে দায়ী করা যাবে না ।

সদ্য সমাপ্ত ৫ রাজ্যের নির্বাচনে কংগ্রেসের চূড়ান্ত ব্যর্থতার নেপথ্যে ধর্মীয় মেরুকরণকে দায়ী করা যেতে পারে । তবে এই হিন্দুত্ব রাজনীতির বিরুদ্ধে নরম হিন্দুত্ব আরও বেশি ক্ষতি করেছে । কংগ্রেসের উচিত ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে সামনে রেখে রাজনীতি করা । এরপরেও বলা যেতে পারে কংগ্রেসের এখনও ঘূরে দাঁড়ানোর সময় আছে । রাহুল গান্ধী যেভাবে কানাইয়া কুমারদের দলে এনেছেন এদেরকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দিলে আগামী দিনে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াবেই । তবে জি-২৩ এর নেতাদেরকে আর গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হচ্ছে না । নয়া প্রজন্মকে সামনে এনে রুটি-কাপড়া-মাকানের স্লোগানকে সামনে রেখে মানুষের কাছে গেলে, মানুষ কংগ্রেসকে ফিরিয়ে দেবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস ।

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ