কলকাতা 

উত্তরপূর্ব ভারতের একমাত্র ইউনানী মেডিকেল কলেজ আর্থিক কারণে সংকটের মুখে ; তাকিয়ে রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখের দিকে ; আন্দোলনে পথে কলেজের অধ্যাপকরা

শেয়ার করুন
  • 10
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বিশেষ প্রতিনিধি : ইউনানী চিকিৎসার হাত ধরেই একদিন সমগ্র পৃথিবীতে চিকিৎসা ব্যবস্থার সূত্রপাত হয়েছিল । এটা মূলত মধ্যপ্রাচ্যের আরব জনজাতি এই চিকিৎসা ব্যবস্থাটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছিল । তাই ইউনানী পড়তে গেলে আরবী শিক্ষা জরুরি । আর প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যেই কলকাতায় ১৯৮৯ সালে গড়ে উঠেছিল ইউনানী মেডিকেল কলেজ । এটি সমগ্র উত্তরপূর্ব ভারতের একমাত্র ইউনানী মেডিকেল কলেজ । নিয়ম মোতাবেক রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেয়ে যায় এই মেডিকেল কলেজ । সুতরাং এখান থেকে পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীরা চিকিৎসকের মর্যাদা পেতে আর কোনো অসুবিধা হয় না ।

এখানে প্রতিবছর ৪০জন ছাত্র-ছাত্রীকে ভর্তি নেওয়া হয় । ২০ জন ভর্তি হয় পরিচালন সমিতির কোটা থেকে , আর ২০ জন ভর্তি হয় সরকারের পাঠানো তালিকা থেকে । সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে মাত্র বছরে ৪০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়ে থাকে । এত অল্প টাকায় একটা মেডিকেল কলেজ চালানো দুস্কর । এদিকে যেসব অধ্যাপকরা এখানে পড়ান তাদের সময় মতো বেতন হয় না । ফলে পড়াশোনার মানও কমে যাচ্ছে । স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান ধীরে অবলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে !

Advertisement

অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না । কারণ ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার পদ্ধতির অঙ্গ হওয়ার কারণে পূর্বতন বাম সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল । সেই মত ২০০৯ সালে বিধানসভায় বিল আনা হয় ; সেই সময়কার বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসের চাপে শেষ পর্যন্ত সেই বিল সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠানো হয় । পরে সিলেক্ট কমিটি ওই বিলের কিছু অংশ সংশোধন ও বিয়োজন করে তা বিধানসভায় ২০১০ সালের মার্চ মাসে পাশ করে বাম সরকার । কিন্ত সময়ের বিচারে কয়েকমাস পরে অনুষ্ঠিত হয় বিধানসভা নির্বাচন । সেই নির্বাচনে বামেদের পরাজয় হয় ; ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আশার আলো দেখতে পায় কলেজ পরিচালন সমিতি থেকে শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা । কিন্ত ক্ষমতায় আসার ৮ বছর পরও ইউনানী মেডিকেল কলেজের সংকট কাটেনি বরং দিনের পর দিন তা বেড়ে চলেছে । তৃণমূল কংগ্রেসের যে মুসলিম নেতারা স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন তারা ক্ষমতায় আসলে ইউনানীর ঐতিহ্যকে রক্ষা করে তাকে সরকার অধিগ্রহণ করবে । কিন্ত তাদের দেখানো সেই স্বপ্ন আট বছর পরেও বাস্তবায়ন হয়নি । বিধানসভায় বিল পাশ করা সত্ত্বে তা কেন বাস্তবায়ন হল না তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা । বিরোধীদের বক্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু উন্নয়নের যে দাবি করে থাকেন তা যে মিথ্যা সেটা ইউনানী মেডিকেল কলেজের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায় ।

আর্থিক অসুবিধা সত্ত্বেও ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর কোনো ব্যাঘাত ঘটতে দেননি শিক্ষকরা । কিন্ত আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে সামান্য সরকারী স্বীকৃতির আশায় ? তাই শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের পথেই পা বাড়াচ্ছে ইউনানী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও অশিক্ষক কর্মচারীরা । আগামী সোমবার ২৮ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পেন ডাউন আন্দোলনে নামছেন তাঁরা । এরপরেও সরকারের সহানুভূতি না পেলে আগামী দিনে আমরণ অনশনের পথেও পা বাড়াতে পারেন কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে ।


শেয়ার করুন
  • 10
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

2 × 1 =