জেলা বিনোদন, সংস্কৃতি ও সাহিত্য 

সঙ্গীতজ্ঞ নির্মলেন্দু বিশ্বাসকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ

শেয়ার করুন

দীপাঞ্জন দে: নদিয়া জেলার চাপড়ায় ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (রবিবার) মহালয়ার দিন বিকেলে ‘নির্মলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিরক্ষা কমিটি’-র (চাপড়া, নদিয়া) উদ্যোগে একটি মনোজ্ঞ গ্রন্থপ্রকাশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এদিনের অনুষ্ঠানে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সৃজনশিল্পী, প্রয়াত সংগীতগুণী নির্মলেন্দু বিশ্বাসকে নিয়ে প্রকাশিত হয় ‘সুরসাধক কবি নির্মলেন্দু বিশ্বাস স্মারকগ্রন্থ’। বৃহৎ কলেবরের এই স্মারকগ্রন্থটির প্রকাশক নির্মলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিরক্ষা কমিটি, অলংকরণ ও মুদ্রণে গেটওয়ে গ্রাফিক্স এবং পরিবেশক কৃষ্ণনগর গবেষণা পরিষৎ। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন দীপাঞ্জন দে, সম্পাদনা-সহায়তায় ছিলেন রামকৃষ্ণ দে। গ্রন্থের প্রচ্ছদশিল্পী সুখ্যাত ভাস্কর উপলকান্তি সাহা। প্রদীপ প্রজ্জ্বালন ও নির্মলেন্দু বিশ্বাসের প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের মধ্যে দিয়ে এদিনের গ্রন্থপ্রকাশ অনুষ্ঠানের শুভসূচনা হয়। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও কবি নূরউদ্দিন বিশ্বাস প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করেন এবং নির্মলেন্দু বিশ্বাসের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন নির্মলেন্দু বিশ্বাসের বিশেষ প্রীতিভাজন সংস্কৃতি-অনুরাগী মানুষ পিন্টু চক্রবর্তী।

সুরসাধক নির্মলেন্দু বিশ্বাসের রচিত ও সুরারোপিত “জাগো রে সবাই চেয়ে দেখো ওই দুয়ারে ভোরের আলো” গানটি এদিন উদ্বোধন সংগীত হিসেবে পরিবেশিত হয়। নির্মলেন্দু বিশ্বাসের জ্যেষ্ঠপুত্র বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও সংগীতশিক্ষক নন্দদুলাল বিশ্বাসের গানের ক্লাসের শিক্ষার্থী সৃজিতা বিশ্বাস, অমৃতা সাধুখাঁ,‌ তৃষা মণ্ডল ও অন্বেষা দত্ত গানটি পরিবেশন করেন। স্বাগত ভাষণ দেন নির্মলেন্দু বিশ্বাসের কনিষ্ঠ পুত্র ও স্মারকগ্রন্থের অন্যতম প্রকাশক দেবদুলাল বিশ্বাস। তাঁর বক্তব্যে, গ্রন্থপ্রকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, এই আয়োজন যে আসলে পুণ্য মহালয়ায় অনন্য এক পিতৃতর্পণেরই অনুষ্ঠান, তার উল্লেখ করেন।

Advertisement

স্বাগত ভাষণের পর ‘সুরসাধক কবি নির্মলেন্দু বিশ্বাস স্মারকগ্রন্থ’টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থের আবরণ উন্মোচন করেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও লেখক সনাতন বিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে সহযোগিতায় ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুরঞ্জন মণ্ডল ও সুপরিচিত সংগীত-প্রশিক্ষক সামসের আলি বিশ্বাস প্রমুখ। এছাড়া সেই সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক দীপাঞ্জন দে, সম্পাদনা সহকারী রামকৃষ্ণ দে, প্রকাশক নন্দদুলাল বিশ্বাস ও দেবদুলাল বিশ্বাস, ‘নির্মলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিরক্ষা সমিতি’-র সদস্যবৃন্দ যথা— কবি রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সংগীতশিল্পী কার্তিক পাল, কবি-প্রাবন্ধিক অম্বিকা দে, লোকসংগীতশিল্পী সাধন পাত্র প্রমুখ। স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশের পর সম্পাদক দীপাঞ্জন দে সংক্ষেপে গ্রন্থটির নির্মাণ প্রক্রিয়া ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। এরপর গ্রন্থের উদ্বোধক সনাতন বিশ্বাস তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে গ্রন্থটি সম্পর্কে কয়েকটি প্রশংসাবাচক কথা বলেন। গ্রন্থটিতে সত্তর জন লেখক নির্মলেন্দু বিশ্বাস সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেছেন, এদিনের অনুষ্ঠানে তাঁদের প্রত্যেকের হাতে স্মারকগ্রন্থের সৌজন্য কপি ও একটি বিশেষ স্মারক তুলে দেওয়া হয়। গ্রন্থের সম্পাদক, সরকারী সম্পাদক ও নির্মলেন্দু বিশ্বাসের পরিবারের সদস্যরা এই স্মারক ও স্মারকগ্রন্থ তাঁদের হাতে তুলে দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রবীণ সাহিত্যানুরাগী কাঞ্চন চৌধুরী, কবি রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কবি অমৃতাভ দে, রোশনী হালসানা, সুরসাধকের পুত্রবধূ মিঠু বিশ্বাস, কন্যা স্বপ্না মণ্ডল, পৌত্র দেবরূপ বিশ্বাস প্রমুখ স্মারক প্রদান পর্বে বিশেষ সহযোগিতা করেন।

নির্মলেন্দু বিশ্বাসের রচিত ও সুরারোপিত “কত আশা নিয়ে এসেছি পরমেশ তোমারি চরণ তলে” গানটি এদিন পরিবেশন করেন তাঁর সংগীত-বিদ্যালয়ের একদা ছাত্রী গোপা চৌধুরী। এরপর নির্মলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিরক্ষা সমিতির অন্যতম সদস্য রামকৃষ্ণ দে তাঁর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সামগ্রিকভাবে স্মারকগ্রন্থ নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায় ও তাঁদের এই কাজটি সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন।

অনুষ্ঠানের শেষপর্বে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নির্মলেন্দু বিশ্বাসের জ্যেষ্ঠপুত্র তথা স্মারকগ্রন্থের অন্যতম প্রকাশক সংগীতশিক্ষক নন্দদুলাল বিশ্বাস। সমাপ্তি সংগীত হিসেবে নির্মলেন্দু বিশ্বাসের রচিত ও সুরারোপিত “বেদনা ভরা অশ্রু দিয়ে আমরা গেঁথেছি মালা আজি তোমার বিদায়বেলা” গানটি নির্বাচন করা হয়েছিল। নন্দদুলাল বিশ্বাসের গানের ক্লাসের শিক্ষার্থীরা গানটি পরিবেশন করেন। বিশিষ্ট কবিদ্বয় রামকৃষ্ণ দে ও রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সমগ্র অনুষ্ঠান সুচারুভাবে পরিচালনা করেন।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ