কলকাতা 

নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা ‘শুদ্ধিকরণ অভিযান’– ভোটাধিকার হরণ করার বিপজ্জনক পদক্ষেপ : মোহাম্মদ শফি

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি : সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (SDPI)-এর জাতীয় সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শফি ভারতের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তথাকথিত “বিশেষ নিবিড় সংশোধন” (Special Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র বিরোধিতা প্রকাশ করেছেন। এই প্রক্রিয়াটি আগামী ৪ নভেম্বর থেকে ১২ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শুরু হওয়ার কথা।

নির্বাচন কমিশনের দাবি অনুযায়ী, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য নাকি মৃত ও পুনরাবৃত্ত ভোটার নাম অপসারণ করে ভোটার তালিকাকে “ত্রুটিমুক্ত” করা। কিন্তু বাস্তবে এটি একটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে ভোটার তালিকা কারসাজি করে দেশের লক্ষ লক্ষ প্রান্তিক নাগরিককে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

Advertisement

এই সংশোধন প্রক্রিয়ার সময়কাল বিশেষভাবে সন্দেহজনক, কারণ ২০২৬ সালের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন (তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, কেরলসহ একাধিক রাজ্যে) মাত্র কয়েক মাস পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যে কাজটি একটি স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে সম্পন্ন হওয়া উচিত ছিল, সেটি এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত এক জটিল অভিযানে রূপ নিয়েছে।

বিহারে, যেখানে এই বিশেষ সংশোধন প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছিল, সেখানে ৬৫ লক্ষাধিক ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে—যাদের অধিকাংশই ছিলেন দরিদ্র, সংখ্যালঘু, দলিত, নারী এবং পরিযায়ী শ্রমিক। বিভিন্ন প্রতিবেদন ও সাক্ষ্য প্রমাণে প্রকাশ পেয়েছে যে, এই নাম অপসারিত করার কাজ যথাযথ যাচাই বা নোটিশ ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে, যার ফলে প্রকৃত ভোটাররা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এখন এই ত্রুটিপূর্ণ ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে সারা দেশে পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে, যা এক কথায় সারা ভারত জুড়ে ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণের নামে ভোটার মুছে ফেলার অভিযান।

এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, একসময় ভারতের গণতন্ত্রের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত নির্বাচন কমিশন আজ জনমানসে শাসক ভারতীয় জনতা পার্টির হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া নামের বিস্তারিত ও মেশিন-পঠনযোগ্য তথ্য প্রকাশে অস্বীকার করে এবং “গোপনীয়তা”র অজুহাতে তথ্য গোপন করে কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। এর কার্যপ্রণালী ক্রমশই এমন এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে, যা সংবিধানের পরিবর্তে দলীয় স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত।

ভোটাধিকার গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। এটি কখনোই প্রশাসনিক কারচুপি বা প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হরণ বা বিকৃত করা যেতে পারে না। SDPI দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে বর্তমান এই প্রক্রিয়া ভোটার যাচাইয়ের নামে নির্বাচনী ফলাফল প্রভাবিত করার রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। এটি কেবল দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর আঘাত নয়, বরং ভারতের গণতান্ত্রিক আত্মার ওপর সরাসরি আক্রমণ।

বিহারের SIR-সংক্রান্ত যে মামলা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে শুনানিরত, তা অবিলম্বে সব রাজ্যে সম্প্রসারিত করা উচিত, যাতে কোনো নাম অপসারিত করার আগে বিচারিক পর্যালোচনা সম্পন্ন হয়।

সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছে যে,

এই সংশোধন প্রক্রিয়া অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ জনস্বচ্ছতা, বিচারিক তত্ত্বাবধান ও স্বাধীন পর্যালোচনার ব্যবস্থা করা হয়।

প্রতিটি নাগরিকের — তার শ্রেণি, ধর্ম বা অঞ্চল নির্বিশেষে — গণনা হওয়া ও ভোট দেওয়া একটি অবিচ্ছেদ্য অধিকার। এই অধিকার খর্বের যে কোনো প্রচেষ্টা ভারতের গণতন্ত্রের ভিত্তির উপর সরাসরি আঘাত।

 

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ