প্রচ্ছদ 

ওয়াকফ সম্পত্তি মৌলিক অধিকার নয়,ওয়াকফ বোর্ড ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান সুপ্রিম কোর্টে দাবি কেন্দ্রের! নয়া ওয়াকফ আইনের পক্ষে আর কি কি দাবি করলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। জানতে হলে ক্লিক করুন

শেয়ার করুন

বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ মামলার ফের শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহর বেঞ্চে। বুধবার সংশোধিত ওয়াকফ আইন সংক্রান্ত মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য শুনলো আদালত। কেন্দ্রের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পুনরায় এই মামলার শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে।

আজ এই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা মামলা কারি আইনজীবীদের বক্তব্য খন্ডন করে কি কি বলেছেন তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

Advertisement

মামলাকারীরা সকলের প্রতিনিধিত্ব করছেন না, দাবি কেন্দ্রের 

প্রথমে বক্তব্য রাখতে উঠে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “যৌথ সংসদীয় কমিটি দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাতারাতি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এমনটা নয় যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও মন্ত্রক বিলের খসড়া তৈরি করেছে আর তা পাশ করানো হয়েছে। কয়েক জন মামলাকারী নিজেকে সমগ্র মুসলিম সমাজের বলে দাবি করতে পারেন না। এই বিল নিয়ে প্রচুর মতামত নেওয়া হয়েছে। যৌথ সংসদীয় কমিটি ৯৬টি বৈঠক করেছে। এবং প্রায় দেশ জুড়ে ৯৭ লক্ষ মানুষের মতামত পেয়েছে।”

নতুন আইনের ৩সি ধারা কেন, ব্যাখ্যা দিলেন সলিসিটর জেনারেল

প্রধান বিচারপতি বিআর গবই জানান, মামলাকারীরা আশঙ্কা করছেন ওয়াকফের জমি দখল করে নিতে পারে সরকার। তাতে সলিসিটর জেনারেল আশ্বস্ত করেন, কোনও সম্পত্তি সরকারি জমি কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন রাজস্ব কর্তৃপক্ষ। তবে তিনি এ-ও জানান, যদি দেখা যায় যে জমিতে ভবন তৈরি হচ্ছে সেটি একটি সরকারি জমি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে কি সেটি যাচাই করতে পারবে না সরকার? সেই কারণেই সংশোধিত ওয়াকফ আইনের ৩সি ধারা রয়েছে।

পাঁচ বছর ইসলাম ধর্ম পালনের ব্যাখ্যা দিলেন সলিসিটর জেনারেল

ওয়াকফ সম্পত্তি দানের জন্য পাঁচ বছর ইসলাম ধর্ম পালনের কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল মঙ্গলবার। বুধবারও তার ব্যাখ্যা দিলেন সলিসিটর জেনারেল। তাঁর বক্তব্য, “শরিয়ত আইনের ৩ নম্বর ধারায় বলা আছে, আপনাকে নিজেকে মুসলিম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এর অর্থ এই নয় যে আপনাকে দিনে পাঁচ বার নমাজ় পড়তে হবে বা মদ্যপান করা যাবে না।”

ওয়াকফের সম্পত্তি অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে ব্যবহারের অভিযোগ

কিছু ক্ষেত্রে সম্পত্তি ওয়াকফের অধীনে কি না, তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে কোনও সম্পত্তি যে ওয়াকফের, তা সাধারণ মানুষ জানেই না। কিছু মানুষ সেটিকে নিজস্ব সম্পত্তি হিসাবে ব্যবহার করছেন। এই কারণেই ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি ওয়াকফ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না, তার উপর নজরদারির জন্য নির্দিষ্ট পদাধিকারীর প্রয়োজন।

ওয়াকফের নিবন্ধীকরণ নিয়ে প্রশ্ন

১৯২৩ সালের আইনেও কি ওয়াকফ সম্পত্তি নিবন্ধীকরণের কোনও ব্যবস্থা ছিল? জানতে চান প্রধান বিচারপতি। তিনি জানান, আইনজীবী কপিল সিব্বল বলছেন এটি ১৯২৩ সালে ছিল না, ১৯৫৪ সাল থেকে এসেছে। সে কথা শুনে সলিসিটর জেনারেল বলেন, “একটি প্রচার চলছে। যেখানে ১০০ বছরের পুরনো সম্পত্তিগুলির প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, আমরা কাগজ কোথা থেকে আনব! কিন্তু আমি জানিয়ে রাখতে চাই, কাগজের কোনও প্রয়োজনই ছিল না এ ক্ষেত্রে।” তিনি আরও বলেন, “যদি কোনও সম্পত্তি ১০০ বছরের পুরনো হয়, তবে শেষ পাঁচ বছরের নথিপত্র দেখান।”

ওয়াকফ বোর্ডের ভূমিকা সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ: কেন্দ্র

ওয়াকফ বোর্ডের ভূমিকা সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে এমনটাই জানালেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। বস্তুত, মঙ্গলবারই মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বল আদালতে দাবি করেছিলেন, ওয়াকফ বোর্ড ধর্মনিরপেক্ষ নয়। সেই দাবির বিরোধিতা করলেন কেন্দ্রের আইনজীবী।

ওয়াকফ সম্পত্তিতে মৌলিক অধিকার নয়: সলিসিটর জেনারেল

সলিসিটর জেনারেল বলেন, “ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহার করলেই তার উপর মৌলিক অধিকার তৈরি হয় না। ১৯৫৪ সালের আইনে তা ছিল। এমনকি তার আগে বেঙ্গল অ্যাক্টেও তার উল্লেখ রয়েছে। একটি রায়ে বলা হয়েছে, কোনও অধিকার আইন দ্বারা অর্জন করলে, রাষ্ট্র সেই অধিকার যে কোনও সময় কেড়ে নিতে পারে।”

মামলাকারীদের ভূমিকায় প্রশ্ন সলিসিটর জেনারেলের

সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য, এমন ব্যক্তিরা মামলা দায়ের করেছেন যাঁরা সরাসরি প্রভাবিত নন। এমনকি সংসদের আইন তৈরির ক্ষমতা নেই এটাও তাঁরা বলছেন না। সংসদের আইন সংশোধন ক্ষমতার বিরোধিতা কেউ করছেন না।

ইসলামের অবশ্য পালনীয় ধর্মীয় কর্তব্যে হস্তক্ষেপ করে না আইন: কেন্দ্র

সলিসিটর জেনারেল জানান, নতুন ওয়াকফ আইন ইসলাম ধর্মের কোনও আবশ্যিক কর্তব্যের উপর হস্তক্ষেপ করে না।

নতুন আইনে কী সুবিধা, জানাচ্ছেন মেহতা

কেন্দ্রের তরফে তুষার মেহতা বলেন, “আগে ‘ওয়াকফ আলাল আওলাদ’ নামে একটি ধারণা ছিল। যার অর্থ, সন্তানদের সুবিধার জন্য আল্লার উদ্দেশে সম্পত্তি উৎসর্গ করা। সন্তান বলা হলেও সংশোধিত আইন আসার আগে প্রাথমিক ভাবে কন্যা বা বিধবাদের অন্তর্ভুক্ত করা হত না। এই প্রথম তাঁদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সৌভাগ্যবশত যা চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।”

ওয়াকফ সম্পত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানও তৈরি হতে পারে: সলিসিটর জেনারেল

সলিসিটর জেনারেল জানান, ওয়াকফের সম্পত্তিতে শুধু মসজিদ বা দরগাই নয়, স্কুল বা অনাথাশ্রমও হতে পারে। এমন অনেক ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারে ওয়াকফ। যেহেতু ওয়াকফের সম্পত্তি অমুসলিমদের সুবিধার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে, তাই অমুসলিম সদস্যদের জন্য ওয়াকফ কাউন্সিলে জায়গা দেওয়া যেতে পারে।

উঠল নতুন আইনের ৩ডি ধারার কথা

নতুন আইনের ৩ডি নম্বর ধারা নিয়ে মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলেছিলেন মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীরা। সেটির উপর স্থগিতাদেশেরও আর্জি উঠেছিল। বুধবার ফের ওই ধারার প্রসঙ্গ উঠল সুপ্রিম কোর্টে। আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, “যে বিলটি প্রথমে প্রচারিত হয়েছিল, সেখানে ওই অংশটি ছিল। যৌথ সংসদীয় কমিটিতে এটি অনুচ্ছেদ ছিল, কিন্তু সেটি নিয়ে কোনও প্রচার হয়নি।” সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিও জানান, এই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে নথিবদ্ধ হয়েছে। তখন সলিসিটর জেনারেল জানান, তিনিও যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট দেখাবেন।

পুরনো সৌধ রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যার অভিযোগ

মেহতা জানান, যৌথ সংসদীয় কমিটির তরফে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এবং সংস্কৃতি মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। ওই সময় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ জানিয়েছিল, অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ড সংরক্ষিত সৌধগুলিকেও ওয়াকফ সম্পত্তি বলে ঘোষণা করে দিয়েছিল। এর ফলে প্রাচীন সৌধের সংরক্ষণের আওতায় কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজে বিঘ্ন ঘটছিল।

আইনের ৩ডি ধারা মূল সংশোধনীতেই ছিল: সলিসিটর জেনারেল

প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, যখন যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠিত হয়, তখন কি নতুন আইনের ৩ডি নম্বর ধারাটি ছিল? সলিসিটর জেনারেল তাঁকে আশ্বস্ত করেন, সেটি ছিল যৌথ সংসদীয় কমিটি তৈরির সময়ে। মেহতা জানান, যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্টেও প্রস্তাবিত ৩ডি ধারার প্রসঙ্গ উল্লেখ ছিল। প্রধান বিচারপতি নিশ্চিত হতে আবার প্রশ্ন করেন, এমন নয় তো যে সেটি পরবর্তী সময়ে যুক্ত করা হয়েছ? তবে সলিসিটর জেনারেল বক্তব্য, এমন কিছুই হয়নি। মূল সংশোধনীর মধ্যেই ৩ডি ধারাটি ছিল।

সৌজন্যে ডিজিটাল আনন্দবাজার।

 

 

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ