কলকাতা 

কারো এগিয়ে যাওয়ার অর্থ অপরকে পিছিয়ে দেওয়া নয়, চাই মাতৃভাষার যথাযথ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ। অনুসন্ধানের মঞ্চে দুই বাংলার গুণীজনেরা

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

নাফিসা ইসমাত: অমর একুশে স্মরণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এক আলোচনাচক্রে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনলাইনে মিলিত হয়েছিলেন দুই বাংলার প্রথিতযশা গুণীজনেরা। মাতৃভাষার বন্ধন কতখানি দৃঢ় হতে পারে তা এদিন আরো একবার ধরা পড়লো তাঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে, কথাবাত্রায়, আবেগে। বারংবার অন্তর্জাল বিভ্রাট সাময়িক সমস্যা সৃষ্টি করলেও তা অনুষ্ঠানের মাত্রাকে দমিয়ে দিতে পারেনি এক ফোঁটাও। প্রযুক্তির সমস্যায় এদিন উপস্থিত হতে পারেননি ওপার বাংলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিভাগের অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ আলমগীর, এপার বাংলার বিশিষ্ট শিক্ষা আধিকারিক ও সুলেখক দিব্যগোপাল ঘটক, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অধ্যাপক শুভাশিস মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

               ড. অমরেন্দ্র মহাপাত্র

Advertisement

তা সত্ত্বেও যাঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতি বর্ণময় করে তুলে ছিল এদিনের অনুষ্ঠান, তা বহুদিন ভুলতে পারবে না উপস্থিত দর্শক ও শ্রোতৃবৃন্দ। অসমীয়া ভাষায় গান দিয়ে শুরু হয়েছিল এদিন অনুসন্ধান কলকাতার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই আয়োজন। কিংবদন্তি শিল্পী ভূপেন হাজারিকার গান গাইলেন ইংরেজি সাহিত্যের বিশিষ্ট অধ্যাপক নিপম কুমার সাইকিয়া। এরপর মাতৃভাষা ও তার সংরক্ষণের গুরুত্বের কথা বিশদভাবে বলেন শাহজালাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ড.হিমাদ্রী শেখর রায়। তিনি বলেন মাতৃভাষা হলো মায়ের ভাষা, এর বিকাশ মায়ের মতই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের প্রত্যেকের নজর রাখা প্রয়োজন নিজ মাতৃভাষার যথাযথ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের দিকে। অধ্যাপক হিমাদ্রী শেখর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নানা দিক নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। এরপর প্রান্তিক মানুষের মুখের ভাষা রক্ষায় মহাজীবন মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণা করেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী এবং পশ্চিমবঙ্গ রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ড অমরেন্দ্র মহাপাত্র।

তিনি যাঁকে ডাকতেন বড়মা বলে। উপজাতি মানুষদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বড়মা ছিলেন বরাবর সোচ্চার। কেবলমাত্র প্রতিবাদেই নয়, তাদের সঙ্গে থেকে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ, স্বাধিকারবোধ গড়ে তুলেছিলেন। পুরুলিয়ায় পিছিয়ে পড়া শবর, লোধাদের জন্য তিনি নানাভাবে চেষ্টা প্রচেষ্টা করে শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলেন। পরে অবশ্য সরকারের সহযোগিতায় নির্মাণ করেন বহু সংখ্যক বিদ্যালয়। অত্যাচারিত পদদলিত প্রান্তিক সেই মানুষজনদেরকে তিনি মনে করতেন একেবারেই নিজের ঘরের মানুষ। বড়মা বলতেন, মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমার লেখাগুলি আসলে তাদেরই হাতে লেখা।

এদিন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়। আঁকা প্রতিযোগিতায় প্রথম নওরীন শামা, দ্বিতীয় সারণ্য বোস, তৃতীয় শুভম বাগ। পোস্টার প্রতিযোগিতায় প্রথম অর্পণ ঘোষ, দ্বিতীয় শ্রেষ্টা পাল, তৃতীয় জয় পাল, যুগ্ম তৃতীয় শ্রেষ্ঠা নন্দী। কবিতা প্রতিযোগিতায় প্রথম আর্যদ্বীপ দাস, দ্বিতীয় যুথিকা মন্ডল, তৃতীয় ইতি ঘোষ। এদিন ভাষা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ই-ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ উন্মোচিত হয়। পত্রিকায় গবেষণাধর্মী লেখা সহ গল্প, নাটক ছাত্র-ছাত্রীদের স্বরচিত কবিতা স্থান পেয়েছে বলে জানিয়েছেন পত্রিকার সম্পাদক বিশিষ্ট প্রধান শিক্ষক কাজী নিজামউদ্দিন।

    ড. নিপম কুমার সাইকিয়া 

শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক পরিবেশন এবং বিশিষ্ট শিক্ষক ও অনুসন্ধান কলকাতার সহ-সম্পাদক গৌরাঙ্গ সরখেলের যোগ্য সঞ্চালনায় সমগ্র অনুষ্ঠান অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ