কলকাতা 

মাদ্রাসার পরিচালন সমিতি দ্বারা নিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা অশিক্ষক কর্মচারীদের চার সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়ার ফের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বিশেষ প্রতিনিধি : ভারতের সংবিধানের ৩০ নম্বর ধারায় স্পষ্ট ভাষায় লিপিবদ্ধ আছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করলে তার রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য খরচ সরকার থেকে দেওয়া হবে। এমনকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠান বলে তার প্রতি কোন ভাবেই অবহেলা করা যাবে না। এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পরিচালনা করবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরাই। সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাওয়া যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকার সাহায্য করতে বাধ্য থাকবে। ওই প্রতিষ্ঠান সাহায্য চাওয়ার পর কোনভাবেই সরকার তার প্রতি বৈমাত্রিক আচরণ করতে পারবে না।

সংবিধানের এই অধিকারকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী আবু সোহেল। পশ্চিমবাংলার মাদ্রাসাগুলিকে ২০০৮ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেয়। এই মর্যাদা দেওয়ার পরে পরেই স্বাভাবিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই মাদ্রাসাগুলো পরিচালনা করার অধিকার পায়। শুধু পরিচালনা করার নয় শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্তই শেষ কথা হওয়ার কথা। আইনজীবী আবু সোহেলের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে অবৈধ অসংবিধানিক বলে অভিহিত করেছিলেন।

Advertisement

কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ের পর ২০১৬ সালের মার্চ মাসে রাজ্য সরকার এক সার্কুলার জারি করে পশ্চিমবাংলার সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষক অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা মাদ্রাসা পরিচালন সমিতির হাতে দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। ওই সার্কুলার মোতাবেক শিক্ষকতার ক্ষেত্রে কোন কোন যোগ্যতা থাকবে এবং  অশিক্ষক কর্মী হওয়ার জন্য কোন কোন যোগ্যতা দরকার তার বিস্তারিত বিবরণও দেওয়া হয়েছিল। সেই বিবরণ মেনে পশ্চিমবাংলার বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার পরিচালন সমিতি শিক্ষক নিয়োগ করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্য পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু দফতরে কিছু আমলা এবং আধিকারিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশকেও অমান্য করতে থাকেন। সরকারি সার্কুলারকে সামনে রেখে শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করা হলেও এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু অফিসার এবং আধিকারিক এই সকল শিক্ষক অশিক্ষক কর্মচারীদের বেতন আটকে দিয়েছিলেন এবং তাদের অ্যাপ্রুভালও আটকে দেওয়া হয়।

এরই মধ্যে ২০২০ সালে জানুয়ারি মাসে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা চলছিল সেই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, মাদ্রাসাগুলিতে সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা থাকলেও শিক্ষক নিয়োগের জন্য মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের কোন বিকল্প নেই। তাই সার্ভিস কমিশনের অস্তিত্ব থাকবে তারাই শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করবে মাদ্রাসাগুলিতে। একই সঙ্গে ওই রায়েই বলা হয় যে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের সার্কুলারকে মান্যতা দিয়ে যেসব মাদ্রাসা পরিচালন সমিতি শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করেছে তাদের নিয়োগ বৈধ এবং তাদের প্রত্যেককেই সমবেতন দিতে হবে।

এই রায়ের পরও পশ্চিমবাংলার বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু দফতরের আধিকারিকরা নানাভাবে ওই সকল শিক্ষক শিক্ষিকা অশিক্ষক কর্মচারীদের বেতন আটকে রাখছিলেন বলে অভিযোগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩০ নম্বর ধারাকে বাস্তবায়নের করার লক্ষ্যে যিনি দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন সেই আবু সোহেল।

আবু সোহেলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতমাসেই স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট যে দ্রুত এই সকল টিচারদের বেতন দেওয়া হোক। কিন্তু তারপরেও বেতন চালু করা হয়নি একইসঙ্গে নানা অজুহাত তুলে বেতন বন্ধ রাখা হয়েছিল।  তারপরেও ওইসব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন মেটানোর কাজ শুরু হয়নি ফলে গত ২৩ শে আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে আবার মামলা উঠে।

এবার স্পষ্ট করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে ২০১৬ এর রাজ্য সরকারের সার্কুলারের ভিত্তিতে যেসব নিয়োগ হয়েছে সেসব নিয়োগকে মান্যতা দিয়ে দ্রুত বেতন পরিশোধ করতে হবে কোন অজুহাত চলবে না। সুপ্রিম কোর্ট আরো জানিয়েছে কোথায় কি হয়েছে কি হয়নি সেসব দেখার দরকার নেই নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সকল ক্রাইটেরিয়া বেধে দেয়া হয়েছিল তা মেইনটেইন করা হয়েছে কিনা সেটাই দেখবেন আর চার সপ্তাহের মধ্যে এদের বেতন দেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে এফিডেভিট করে সংখ্যালঘু দফতরকে জানাতে হবে তারা বেতন দিয়েছে কি দেয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর অনেকে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন ধোয়া তুলসী পাতা নয়। সম্প্রতি যে বদলি প্রক্রিয়া শেষ হলো সেখানে দেখা যাচ্ছে। একাধিক টিচারকে অনলাইন কাউন্সিলিং এর আগে বদলি করা হয়েছে এবং এমনও দেখা গেছে হাইকোর্টের কেস নাম্বার দিয়ে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তাই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পক্ষে যারা সওয়াল করছেন তারা আসলে এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অফিসার হতে পারেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কোন নেতা হতে পারেন। কারন মনে রাখতে হবে ভারতের সংবিধান যে মৌলিক অধিকার দিয়েছে সেই মৌলিক অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। তাই আবু সোহেলরা যে কাজ করেছে সেটা ভারতের সংবিধানের মৌলিক অধিকারকে রক্ষা করার কাজ করে চলেছেন। আর অন্যরা যা করছেন তারা আসলে এদেশের সংখ্যালঘু অধিকার কে বিসর্জন দেয়ার কাজ করছে বলে ওয়াকিবহালমহল মনে করছে।

 

 

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ