রাজা রামমোহন ২৫০-তম জন্ম জয়ন্তী : রামমোহন নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ ও জ্ঞানের বহর দেখে তারিফ করলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক সুবীর গাঙ্গুলী
নায়ীমুল হকের প্রতিবেদন: জন্মের সার্ধ দ্বিশতবর্ষে রাজা রামমোহনের জীবন ও কর্ম নিয়ে রাজ্যব্যাপী একেবারে হইচই না ফেলে দিলেও বিভিন্ন প্রান্তে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল তাতে স্পষ্টতই প্রাণের স্পর্শ লক্ষ করা গেছে। তাদের মধ্যে অবশ্যই অন্যতম রামমোহন লাইব্রেরি এন্ড ফ্রি রিডিং রুম এর দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। রবিবার ছিল অনুষ্ঠানের প্রথম দিন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা ও বোম্বে হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, কলকাতা রিজিয়নের পোস্ট মাস্টার জেনারেল নিরজকুমার, লেখক অনিতা অগ্নিহোত্রী প্রমূখ। রামমোহন লাইব্রেরি অ্যান্ড ফ্রি রিডিং রুমে পক্ষে এদিন একটি বিশেষ স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়, যেখানে স্থান পেয়েছে রামমোহন রায়কে নিয়ে প্রকাশিত যুগান্তকারী প্রায় সমস্ত লেখাই। এছাড়াও এদিন বিশেষ বিশেষ ডাকটিকিটের প্রদর্শনী ছিল উল্লেখযোগ্য। বাংলা নবজাগরণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে প্রকাশিত ডাকটিকিটের এই প্রদর্শনী ছিল সত্যিই অভিনব।
দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ছিল প্রকৃত অর্থেই দারুণ আকর্ষণীয়। এদিন মঞ্চ আলো করে ছিল কিশোরমতি ছাত্র-ছাত্রীরা। তারা এসেছিল কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে। ছাত্র-ছাত্রীদের উজ্জীবিত অংশগ্রহণে ভারতপথিক রাজা রামমোহনের আদর্শ এবং কর্মময় জীবন নিয়ে এদিন অত্যন্ত এক সুন্দর কুইজ উপহার দিলেন বিশিষ্ট শিক্ষক সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়,আর তাঁর যোগ্য সহায়তায় ছিলেন সৌরিশ বসু। এই কুইজে ছাত্র-ছাত্রীদের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। সঞ্চালকের বিভিন্ন কুশলী প্রশ্নে, কুইজে অংশ গ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে উত্তর দিয়েছে তাতে যারপরনাই খুশি হয়েছেন উপস্থিত সকলেই। ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থাপনায় এদিন দৃশ্যত আপ্লুত হয়ে পড়েন বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুবীর গাঙ্গুলি। তিনি বলেন শুধুমাত্র প্রাথমিক জ্ঞান নয় বরং রীতিমতো রাজা রামমোহনকে নিয়ে চর্চার মধ্যে রেখেছে ছাত্র-ছাত্রীরা। এটা অত্যন্ত এক আশার বিষয়। বর্তমান প্রজন্মকে নিয়ে আমরা যে মাঝেমধ্যেই হা-হুতাশ করি, তা যে কতখানি বেঠিক, সেটা কিন্তু আজ ওরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে আগত কিশোরমতি এই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে সস্নেহে তিনি উপহার তুলে দিলেন, আর জানালেন তাঁর হৃদয়তাড়িত গভীর অনুভূতির কথা। তিনি বললেন, রাজা রামমোহনের মতো একজন অত্যন্ত পন্ডিত, গভীর মানবতাবাদী মানুষ সম্পর্কে শুধু পড়াশোনা করেই জানা যায় না বরং তা অনুধাবন করতে হয়, আর ঠিক এই কাজটিই করে চলেছে বর্তমান প্রজন্মের আমাদের প্রিয় ছাত্র ছাত্রীরা।
এদিন রাজা রামমোহন রায়ের উপর এই কুইজে অংশ নিয়েছিল মোট আটটি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থেকে এসেছিল শ্রীকৃষ্ণনগর হাইস্কুল, হুগলির খানাকুল থেকে রামনগর অতুল বিদ্যালয়, কলকাতার যাদবপুর বিদ্যাপীঠ, ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়, আদি মহাকালী পাঠশালা, হিন্দু স্কুল, হলি চাইল্ড ইনস্টিটিউট এবং গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ টাকি হাউস। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর কুইজে এদিন যুগ্মভাবে প্রথম স্থান অধিকার করে হুগলির রামনগর অতুল বিদ্যালয় এবং কলকাতার হিন্দু স্কুল। সকলের সঙ্গে সমবেতভাবে এই জয় আনন্দ উপভোগ করে নেয় সমস্ত বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। অংশগ্রহণকারী সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে সুদৃশ্য ট্রফি ও উপহার তুলে দেন রামমোহন লাইব্রেরি এন্ড ফ্রি রিডিং রুমের সম্পাদক শংকর ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট চিকিৎসক শংকর নাথ, সজল মিত্র প্রমূখ।
যথার্থই দুদিন অনুষ্ঠানের শেষে আয়োজক সংস্থা রামমোহন লাইব্রেরি এন্ড ফ্রি রিডিং রুম-এর কর্মকর্তাদের মুখে তখন স্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু সেখান থেকেই যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল আলাদা এক উজ্জ্বল দ্যুতি।
[ছবি: গৌরাঙ্গ সরখেল]