অন্যান্য কলকাতা 

Anish Khan to Hanskhali : আনিস খান থেকে হাঁসখালি সব ক্ষেত্রেই কাঠগড়ায় শাসক দল! অযথা সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ না করে মমতার উচিত এসব ক্ষেত্রে কড়া অবস্থান নেওয়া

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আনিস খানের হত্যা রহস্যের কিনারা এখনও করে উঠতে পারেনি মুখ্যমন্ত্রীর গঠিত সিট । বিষয়টি স্পষ্ট, পুলিশ আনিসের বাড়িতে গিয়েছিল তারপর পুলিশ ফিরে আসার পরেই আনিসের দেহ উদ্ধার হয় । সুস্থ এবং স্বাভাবিক একজন তরুণ যুবক সেদিন রাতে জলসাতে ছিল, তারপর বাড়ি ফিরে এলো । কিছুক্ষণ পর পুলিশ এলো তারপর আনিসের মৃত্যু হলো । ঘটনাটা এটাই । আনিসের মৃত্যুতে সরাসরি পুলিশ দায়ী কিনা তার বলা না গেলেও, এটা পরিস্কার পুলিশ যাওয়া এবং আসার মধ্যেই আনিসের মৃত্যু হয়েছে । দায় এড়াতে পারে না পুলিশ, দায় এড়াতে পারে না পুলিশমন্ত্রী । সাধারণ মানুষ যে আজ পুলিশের হাতেও নিরাপদ নন, তা আমতার আনিসের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে । আমাদের মতো আম জনতা যখন আনিসের মৃত্যু রহস্য নিয়ে একটা মোটামুটি ধারণা তৈরি করতে পারে তখন জনগণের পয়সায় লাখ-লাখ টাকা বেতন পাওয়া পুলিশ কর্তারা কেন পারবেন না ? যদি সদিচ্ছা থাকতো তাহলে ১৫ দিন কেন এক সপ্তাহ আনিস খানের হত্যাকারীরা ধরা পড়ে যেত । কারণ খুব কঠিন কিছু তদন্তের বিষয় নেই । তারপরেও আনিসের হত্যাকারীরা এখন ধরা পড়েনি । এই কথা প্রচার করা আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর চোখে অন্যায় । আনিসরা এখন ইঁদুর বা আরশোলায় পরিণত হয়েছে । তাই বলা হচ্ছে,ইঁদুর মরলেও খবর করা হচ্ছে ।  রাজ্য প্রশাসনের চরমতম ব্যর্থতাকে প্রকাশ্যে আনাটা অপরাধ বলে মনে করছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী!

আনিস হত্যার পর থেকে যেভাবে পরপর হত্যালীলা ঘটে চলেছে তাতে অবশ্যই রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত । মনে রাখতে হবে আজ মমতা সরকার ক্ষমতায় আছে কাল না থাকতেও পারে। কিন্ত এই পরম্পরা বজায় থাকলে রাজ্যের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা কী থাকবে? ঝালদার কংগ্রেসের জয়ী কাউন্সিলর থেকে পানিহাটি তৃণমূলের জয়ী কাউন্সিলর অনুপম দত্তের মৃত্যু প্রমাণ করেছে এই রাজ্যের জনপ্রতিনিধিদেরও নিরাপত্তা নেই । এরপর রামপুরহাটের বড়শাল গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখকে খুন করা হয়, পরবর্তীতে বগটুইয়ে প্রতিহিংসা স্বরুপ ৯ জন মহিলাকে পুড়িয়ে মারা হয় । এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না । কারণ রাজা ক্ষুদ্ধ হচ্ছেন । দুচারটি প্রজা মারা গেলে রাজা-রানীর কিছু হয় না । যারা স্বজন হারাচ্ছেন তাদের জীবন এবং পরিবার শুন্য হয়ে যাচ্ছে । এসব নিয়ে অবশ্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কোনো অনুশোচনা নেই । বরং তিনি মনে করছেন এগুলি সবই ছোটখাটো ঘটনা । কয়েক দিন আগে আলিয়ার উপাচার্যকে যে ভাষায় শাসক দলের ছাত্রনেতা আক্রমণ করেছেন গালিগালাজ করেছেন তা এক কথায় নিন্দনীয় হলেও মুখ্যমন্ত্রী ভাষায়,‘একটু কটু খারাপ কথা’ বলেছে । ভাবটা এমন যেন এটা কোনো নিন্দা করার মতো ঘটনা নয় । আর এতেই সাহস বেড়ে যাচ্ছে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের । তারা মনে করছে, আমরা যা করবো তাকেই মুখ্যমন্ত্রী বলবেন ছোট ঘটনা । অতএব আমাদের সাতখুন মাফ !

Advertisement

বামফ্রন্ট্রের ৩৪ বছর রাজত্বকাল আমরা দেখেছি। জ্যোতিবাবুও অনেক ঘটনাকে ছোট ঘটনা বলেছেন । তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে সরকারের ভাবমূর্তিকে হয়তো ঠিক রাখার জন্য জ্যোতিবাবু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা নানা বিভ্রান্তিমূলক কথা বার্তা বলেছিলেন তবে মুখ যা বলতেন বিচার করতেন অন্যভাবে । সেই সময় কোনো কমরেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে দলীয় স্তরে তদন্ত হতো এবং দলের অনেক প্রভাবশালী কমরেডকে বহিস্কার করতে পিছু পা হয়নি সিপিএম । আর এখন দল এবং সরকার মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে । ফলে সরকার প্রশাসনিক স্তরে ব্যবস্থা নিতে পারছে না । আর এজন্যই সমগ্র রাজ্য জুড়ে খুন-ধর্ষণ-রাহাজানি বেড়েই চলেছে ।

যেমন ধরুন এক সপ্তাহ আগে নদীয়ার হাঁসখালিতে যা ঘটেছে তার সঙ্গে যোগী রাজ্যের হাথরস কান্ডের তুলনা চলে । একটা নিম্নবিত্ত পরিবারের নাবালিকা হয়তো প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল এলাকার এক দোদন্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতার ছেলের সঙ্গে । সেটাই হয়তো ওই মেয়েটির জীবনে কাল হয়েছে । ছেলেটির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মেয়েটি যায়, সেখানে কী ঘটেছিল তা সবটা জানা যায়নি ঠিকই, এটা প্রমাণিত কিছু একটা অঘটন হয়েছিল । তারপর প্রচন্ড রক্তপাত, মেয়েটির মুত্যু বলে অভিযোগ। মৃত্যুর পর ওই তৃণমূল নেতার পরিবারের চাপেই ডেথ সার্টিফিকেট না নিয়েই জোর করে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয় । ময়না তদন্ত হয়নি। ফলে সব প্রমাণ লোপাট । এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ মাধ্যম কিছু প্রশ্ন তুলেছে । আর তাতে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ফুঁসে উঠেছেন । রীতিমতো সংবাদ মাধ্যমকে হুমকি দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম সীমা ছাড়াচ্ছে বলে গর্জন করেছেন । নাম করে একটি সংবাদ মাধ্যমকে আক্রমণ করেছেন ।

তারপর হাঁসখালি নিয়ে তিনি যা বলেছেন তা সকলেই জানেন । এটা লাভ অ্যাফেয়ার ছিল, মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে , নাকি পেগন্যান্ট ছিল । কেন চারদিন পর পুলিশে অভিযোগ করা হলো? কেন ঘটনার দিনেই করা হলো না ? এসব প্রশ্ন যখন খোদ রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী করেন তখন তদন্ত যে কোন দিকে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । আর এই ধরনের আলটপকা মন্তব্য করেই নিজের বিপদ বাড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । হাঁসখালির ঘটনা নিয়ে এই রাজ্যের মানুষ খুব যে বেশি ভাবছিল তা নয়, কিন্ত গতকাল সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের মন্তব্যের পর আবার নতুন করে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে । যেমন বগটুইয়ের ঘটনা পর মুখ্যমন্ত্রী যদি কেস সাজানোর কথা না বলতেন কিংবা আনারুল হোসেন পুলিশ পাঠায়নি , তাই তাকে গ্রেফতার করা হোক এই নির্দেশ না দিতেন তাহলে হয়তো বগটুইয়ের ঘটনার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে যেত না ।

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ একটু আয়নায় মুখ দেখুন । আর ভাবুন বার বার আপনার দলের নেতা-কর্মীরাই কেন বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছেন? সংবাদ মাধ্যমকে আক্রমণ করে নিজের ভাবমূর্তিকে খোয়াবেন না । কারণ আপনি গণআন্দোলন করেই আজ ক্ষমতার শীর্ষে । তাই বাংলার মানুষ এখনও আপনাকে সম্মান দেখায়, তাদের দেওয়া সম্মানকে আলটপকা মন্তব্য করে হারাবেন না ! বাংলায় যা ইদানিং ঘটছে তা মোটেই ভাল ঘটনা নয়। আপনি নিজে কড়া অবস্থান নিন, আর দলে স্বচ্ছ মানুষদের গুরুত্ব দিন তাহলে সমস্যার এই কালো মেঘ কেটে যাবে । মনে রাখবেন বামেদের শক্তিশালী সংগঠনও তাদের পতনকে রুখতে পারেনি। যে রাইটার্স থেকে চুলের মুঠি ধরে আপনাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল,সেই রাইটার্সেই বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আপনি ঢুকে ছিলেন । আর যারা এই কাজ করেছিল তারা এখন শুন্য । এটাই কালের নিয়ম । “কালের চক্র বক্র গতিতে/ ঘুরিতেছে অবিরত/ আজিকে যাহারা কালের শীর্ষে/ কাল তারা পদানত।”

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ