অন্যান্য 

Minorities : বিধানসভা নির্বাচনে সার্বিক সমর্থনের পরেও মমতা সরকারের প্রতি সংখ্যালঘুদের ক্ষোভ বাড়ছে কেন ?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বিজেপি নেতা কর্মীদের দলে নিতে শুরু করেছেন তাতে তাঁর যে কমিউটেড ভোট তাতে প্রভাব পড়ছে । এই রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের জনবিন্যাস এমনই যে কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্র বাদ দিলে বাকী সব কটি বিধানসভা কেন্দ্রে মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । গত বিধানসভা্ নির্বাচনে এই রাজ্যে তৃণমূলের যে বিশাল জয় এর নেপথ্যে মুসলিম ভোট বড় ভূমিকা নিয়েছিল । বিধানসভা ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আরএসএস এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছেন । সেখানে স্পষ্ট ভাবে জানতে তাঁরা পেরেছেন এই রাজ্যের মুসলিম ভোটের সিংহভাগ অংশ চলে যায় মমতার দিকে । ফলে মমতার জয় ঠেকিয়ে রাখা বিজেপির পক্ষে সম্ভব হয় নি ।

সম্প্রতি, বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর এই রাজ্য থেকে নির্বাচিত রাজ্য্যসভার এক কংগ্রেস সাংসদের কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানতে চেয়েছিলেন, কেন তারা(কংগ্রেস) শুণ্য হয়ে গেল? এর উত্তরে কী বলেছিলেন ওই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা  তা আমাদের জানা না থাকলেও হয়তো অমিত শাহের ধারণা ছিল মুসলিম ভোট কংগ্রেস এবং বামেদের মধ্যে সামান্য ভাগ হলে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ক্ষমতা দখল অধরা থেকে যেত । এই রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমরা এক চেটিয়াভাবে মমতার প্রতি আস্থা রেখেছিল বলেই এই বিশাল জয় । অবশ্য এই জয় পাওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্যের বাঙালি মুসলমানদের আরও ব্রাত্য করে দেন । একটু লক্ষ্য রাখলেই দেখা যাবে , আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা নানা দাবি দাওয়া নিয়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনোভাবেই এই ক্ষোভের নিরসনের চেষ্টা চালানো হয়নি । আন্দোলনের যৌক্তিকতা কতটা রয়েছে তা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠতেই পারে ! আন্দোলনের কোনো অর্থ না থাকলেও পড়ুয়ারা দিনের পর দিন অবস্থান বিক্ষোভ করছে এর প্রভাব আম মুসলিম সমাজে পড়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই । ক্ষোভ নিরসনে কোনো রকম চেষ্টা করা হয়নি ।

Advertisement

এদিকে, সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসাগুলি শিক্ষকের অভাবে ধুকঁছে । বদলী প্রক্রিয়া মাধ্যমে খানিকটা মাদ্রাসাগুলিকে অক্সিজেন দেওয়া যেতেই পারতো । কিন্ত দুঃখের হলেও সত্য মাদ্রাসা মন্ত্রী এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ৩১ মার্চ ২০২২ – এর মধ্যে মাদ্রাসায় শিক্ষক বদলী প্রক্রিয়া শেষ করা হবে । কিন্ত মন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে চোখের সামনেই রয়েছে, নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না । একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, তপশিয়ার একটি বাংলা মাধ্যম মাদ্রাসায় মাত্র চারজন শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক নিয়ে পাঁচ জন । সম্প্রতি একজন ভুগোলের শিক্ষিকাকে ‘মানবিক বদলী’র মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে তিনি আবার কিডনি রোগী , ফলে তাঁর দ্বারাই সব দিন ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয় । এদিকে বদলী অপেক্ষায় থাকা বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা ওই মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় থাকেন । অথচ শিক্ষকের অভাবে ওই মাদ্রাসাটির পড়াশোনা চূড়ান্তভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে । শুধু তাই নয়, এরকম প্রায় দুই শো সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসার উদাহরণ দিতে পারা যায় যেখানে শিক্ষকের অভাবে পড়াশোনা লাটে উঠেছে । পড়ুয়া আছে শিক্ষক নেই ।

এই ভাবে সংখ্যালঘূ সমাজের মধ্যে ধীরে ধীরে ক্ষোভ জমছে । তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত শুক্রবার ২৫ মার্চ । ফিরহাদ হাকিম আনিস খানের বাড়িতে যওেয়ার চেষ্টা করলে সেখানে মুসলিমদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় । এমনকি তিনি বিক্ষোভের মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এটা একটা সংকেত বলা যেতে পারে । ফিরহাদ হাকিম সম্পর্কে মুসলিম সমাজের খুব বেশি ক্ষোভ রয়েছে এটা বলা যাবে না । তা সত্ত্বেও যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্যে বঞ্চনা স্পষ্ট রূপে ধরা পড়েছে । সংখ্যালঘু সমাজের ক্ষোভ এতটা হয়ে যাবে যে প্রভাবশালী মন্ত্রী ফিরহাদকেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে তা হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝে উঠতে পারেননি ।

প্রথমেই আমি বলেছি বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন এই রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মতো নয় । এখানে সংখ্যালঘুরা যদি একজোট হয়ে কোনো দলকে ভোট দেয় তাহলে সেই দলের ক্ষমতায় চলে আসাটা খুব সহজ । এই অংক থেকে হেরে যাওয়ার পরের দিন থেকেই বিজেপি কৌশল পরিবর্তন করে । সেই রাজনৈতিক কৌশল মমতার দলের নেতারা বুঝে উঠতে পারেননি । তাঁরা এমন একটা ভাব দেখাচ্ছেন মনে হচ্ছে, এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিমরা তৃণমূল ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দিতে পারে না । এরা যাবে কোথায় ? আমাদের ছেড়ে । এই মানসিকতা থেকে তৃতীয়বারের সরকার কাজ শুরু করার জন্যই সংখ্যালঘু সমাজে ক্ষোভ বাড়ছে ।

আর আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন, মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রতি তাচ্ছিল্য মানসিকতা, আনিস খানের হত্যা, রামপুরহাটের বগটুইয়ের হত্যাকান্ড সেই ক্ষোভের আগুনকে আরও তীব্র করেছে । (চলবে)


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ