অন্যান্য কলকাতা 

Minakshi Mukherjee : তৃণমূল সরকারের আত্মঘাতি সিদ্ধান্তে বামনেত্রী মিনাক্ষী মুখার্জি জননেত্রী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন ! মমতার বিকল্প কী মিনাক্ষী ?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : পশ্চিমবাংলায় রাজনৈতিক সৌজন্যতা দীর্ঘদিনের । স্বাধীনতার পর থেকে বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বিরোধী কন্ঠস্বরকে শাসক দল গুরুত্ব দিয়েছে । বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের সঙ্গে শাসক দলের সখ্যতা ছিল । একটা গল্প শুনেছিলাম , কতটা সত্য তা আমি বলতে পারবো না তবে এই গল্পটা বিশ্বাসযোগ্য । কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে জ্যোতি বসুরা তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে সভা করছেন , ঘটনাচক্রে সেই সময় বিধান রায় ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, আর ওই সভামঞ্চ থেকে বিধান রায়কে আক্রমণ করে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে । গাড়িটা যাবার সময় জ্যোতিবাবুর সামনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল, বিধান রায় বললেন , জ্যোতি কিছু থেয়েছো! খালি পেটে সংগ্রাম হবে ? ওই দোকানে গিয়ে লুচি আলুর দম খেয়ে তারপর আমার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিও ! বিধান রায়ের এ কথা জ্যোতিবাবুও শুনেছিলেন বলে শোনা যায় , লুচি-আলুর দম পুরো দমে খেয়ে বিধান রায়ের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকেন বাম নেতারা । শোনা যায় বিধান রায় একবার বিধানসভায় সময় দিয়েও দেরিতে ঢুকেছিলেন তা নিয়ে তৎকালীন বিরোধী নেতা জ্যোতি বসু বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়ের কড়া সমালোচনা করেছিলেন । সমালোচনা মন দিয়ে শুনে জ্যোতিবাবুর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন বিধান রায় । তারপর সব শেষে বলেছিলেন, জ্যোতি তোমার বাবার শরীরটা খারাপ, সকালে ফোন করেছিলেন, একজন চিকিৎসক হিসাবে আমি তোমার বাবাকে দেখতে গিয়েছিলাম , তাই দেরি হয়ে গেল । তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাও ।

সাম্প্রতিক আরও একটি ঘটনা শুনেছিলাম প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের মুখে । জ্যোতি বসুকে গ্রেফতার করার জন্য সিদ্ধার্থের পুলিশ হন্যে হয়ে ঘুরছে, আর জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রীর আশ্রয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন । এর নাম রাজনৈতিক সৌজন্য ! রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন তিনি অনেক আন্দোলন করেছেন এমনকি বিধানসভা ভাঙচুরের সময়ও তিনি সেখানে হাজির ছিলেন । তা সত্ত্বে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে পাঠায়নি । অবসরপ্রাপ্ত এক আইপিএস অফিসার একান্তে এই প্রতিবেদককে বলেছেন, বাম সরকারের আমলে আমাদের উপর নির্দেশ ছিল মমতার গায়ে হাত না দিতে । অর্থাৎ রাজনৈতিক সৌজন্যতা বজায় রাখার চেষ্টা করে গেছে বাম সরকার এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । সাংবাদিক হিসাবে বাম সরকারের আমলে এই প্রতিবেদক তীব্র বাম বিরোধী ছিলেন । কোনো সময়ে বাম নেতা-মন্ত্রীরা এই প্রতিবেদকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি । নিচু তলার কমরেডরা কিছু খারাপ ব্যবহার করেছে কিন্ত বড় নেতারা এমনকি অনিল বসুর মতো জাঁদরেল নেতাও বিরোধী পক্ষের সাংবাদিক হওয়ার জন্য যথেষ্ট সম্মান এবং গুরুত্ব দিতেন , আজকের দিনে ভাবতে কষ্ট হয় ।

Advertisement

২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর এই রাজ্যের বিরোধী পরিসরটা অনেকটাই ছোট হয়ে গেছে । যে সব সাংবাদিক সরকারের সমালোচনা করেন তাঁরা শাসক তৃণমূল দলের নেতাদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে । প্রতি নিয়ত সমালোচক সাংবাদিকদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে । অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি সামান্য সৌজন্যতা প্রদান করা হচ্ছে না । এমন ভাষায় বিরোধী দল বিশেষ করে কংগ্রেস এবং সিপিএমকে আক্রমণ করা হচ্ছে যা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিরোধী বললে অত্যুক্তি হবে না । মনে রাখতে হবে ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, মাত্র ৫ বছরের মধ্যে তারা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গিয়েছিল । মানুষ যখন বিপুল গরিষ্ঠতা দিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠা করে তখন মানুষই সেই সরকারের পতনকে সুনিশ্চিত করতে পারে । ২০০৪ সালে যে দলের মাত্র একজন সাংসদ ছিল , সেই দলই মাত্র সাত বছর পর বিপুল সমর্থন নিয়ে সরকার গড়েছে। সুতরাং রাজনীতিতে বিরোধী দলকে খারাপ ভাষায় আক্রমণ করার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই । কিন্ত দুঃখের হলেও সত্য বর্তমান শাসক দল এই ইতিহাস ভুলে গেছে । তারা এখন ক্ষমতার দম্ভে নিজেদেরকে জাহির করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ।

তাই হাওড়া যুবক এবং আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা আনিস খানের মৃত্যু রহস্যের তদন্ত করার চেয়ে সরকারের মূল লক্ষ্য হল যারা এ নিয়ে প্রতিবাদ করছে তাদেরকে ঠান্ডা করা । প্রতিবাদীদের রোখার জন্য ব্রিটিশের তৈরি আইনের ব্যবহার করা হচ্ছে । জ্যোতিবসু থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত বিরোধী নেতা-নেত্রীদের গণতান্ত্রিক ভাবে প্রতিবাদ আন্দোলন করার জন্য জেলে যেতে হয়নি । এমনকি পুলিশকে হেনস্থা করার জন্যও নয় । বাম নেত্রী মিনাক্ষী মুখার্জি সহ ১৬ জনকে বারবার জেলে পাঠানো হচ্ছে । কারণ তাঁদের অপরাধ আনিসের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করছেন । তাই তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে । অথচ আনিসের মৃত্যু পর ১৬ দিন কেটে গেলেও এই মৃত্যু রহস্যের জট এখনো কাটেনি । মুখ্যমন্ত্রীর উপর সাধারণ মানুষের আস্থা বিশ্বাস এখনও আছে, মুখ্যমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন ১৫ দিনের মধ্যেই অপরাধীরা শাস্তি পাবে ! এখনও অপরাধীরা ধরা পড়েনি ! কিন্ত আনিসের জন্য ইনসাফ চাইতে গিয়ে মিনাক্ষীরা অন্ধকার জেলে বন্দী ! আর অপরাধীরা …..!

আর এখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুল করে ফেললেন । যে ভুল থেকে আগামী দিনে আর বের হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে । তবে তিনি নিজের ভুলেই বিকল্প নেত্রী তৈরি করে দিলেন ! যার অপেক্ষায় বাংলা এতদিন ছিল। এতদিন বলা হতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনো বিকল্প নেই , এবার বলা হবে মমতার বিকল্প মিনাক্ষী ! আর য়াঁরা বলছেন, বামেরা মুছে গেছে ! তাঁদেরকে বিশ্বকবির একটা লাইন মনে করিয়ে দিই “ কাল ছিল ডাল খালি / আজ ফুলে যায় ভরি / হয় সে কেমন করে / বল দেখি তুই মালি”। এভাবে একটা রাজনৈতিক ভুলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান ঘটেছিল , আর আনিস খানের হত্যার পর প্রশাসনের ব্যর্থতাকে সম্বল করেই মিনাক্ষীদের বাংলার মাটিতে উত্থান ঘটে গেল । মিনাক্ষীরা যতদিন জেলে থাকবেন ততদিন তাঁরা রাজনৈতিক ডিভিডেন্ট পেয়ে যাবেন ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ