অন্যান্য 

শুধু বনশ্রী খাঁড়া নন, নন্দীগ্রামে এমন অনেক নেতা-নেত্রী আছেন যারা মমতাকে হারানোর ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরি : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে হারতে পারেন না , তাঁকে হারানো হয়েছে । নন্দীগ্রামের মানুষ এখনও একথা স্বীকার করছেন । তৃণমূলের দলের ভেতর থেকেই এই কাজটা করা হয়েছে । বিজেপির পক্ষে যেটা কঠিন ছিল , সেই কাজটা অবলীলায় ঘর শত্রু বিভীষণরা করে দিয়েছেন । সম্প্রতি রাজ্যের মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন নন্দীগ্রামের ভূমিকন্যা ও কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা। তাঁর মা বনশ্রী খাঁড়ার বিরুদ্ধে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর অভিযোগ উঠেছে । আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য যারা আসল লড়াই করেন তারা কেউ পদে বসার সুযোগ পান না । এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি । কারণ বাঙালি মুসলিমরা মমতার কাছ থেকে সেভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে পারেনি , এমনকি মমতাও তাদের জন্য তেমন কিছু করেননি । মমতা যা করেছেন সবটাই সুযোগ সন্ধানীদের জন্য । তাই বনশ্রী খাঁড়া নন্দীগ্রামের এক পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন , সেই এলাকাটি এক নম্বর ব্লকের মধ্যেই পড়ে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখান থেকে ভাল ভোটে এগিয়ে থাকার কথা ছিল কিন্ত তা হয়নি । অর্ন্তঘাত করা হয়েছে । আর এই বিশ্বাসঘাতকতার পেছনে বনশ্রী খাঁড়া আছে বলে তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব মনে করেছেন । ফলে মন্ত্রীর মা হওয়া সত্ত্বে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । সরিয়ে দেওয়া  হয়েছে প্রধান পদ থেকে , যদিও তিনি নিজেই সরে গেছেন বলে জানা গেছে ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে শুধু কী বনশ্রী খাঁড়া অন্তর্ঘাত করেছেন ? নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁদেরকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছিলেন তাঁদের মধ্যে থেকেই অন্তর্ঘাত হয়েছে । শুভেন্দু অধিকারী যে প্রভাবে প্রচার করেছেন বিজেপি ক্ষমতায় আসছে , বেগম ( মমতা) ক্ষমতায় আসতে পারবেন না । সেই প্রচারের পাল্টা প্রচার কি ছিল ? মমতার ঘনিষ্ঠ মহল থেকে যাঁদের ওই খানে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁরা শুভেন্দুর এই প্রচারের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষকে আশ্বস্ত করতে পেরেছিলেন ? না ,তাঁরাও মনে মনে ভেবেছিলেন এবার হয়তো তৃণমূল ক্ষমতায় আসতে পারবে না । কলকাতা থেকে নেতা পাঠিয়ে ভোট কৌশল তৈরি করার সিদ্ধান্ত ছিল মারাত্মক রকম ভুল সিদ্ধান্ত । এতে আর যাইহোক স্থানীয় নেতারা সামান্য হলেও অপমানিতবোধ করেছেন ।

Advertisement

নন্দীগ্রামে জেতার জন্য যেভাবে টাকা খরচ করেছে বিজেপি , তৃণমূল কংগ্রেস তা করতে পারেনি । উপরন্ত যা হয়েছে তৃণমূলের বিশেষ অংশ বিজেপির টাকার কাছে বিক্রি হয়েছে । আর মমতার ইলেকশন ম্যানেজমেন্টে যাঁরা ছিলেন তাঁরা নিজেদেরকে জাহির করতে যতটা ব্যস্ত ছিল ততটা জেতানোর কৌশল নিয়োগে সময় দেননি । ফলে এই ফল হয়েছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি বাংলার মানুষের যে ভালবাসা আছে তাতে তিনি যেকোনো জায়গায় জিতে যাবেন এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । কিন্ত নন্দীগ্রামে হেরে যাওয়ার নেপথ্যে প্রধান কারণ তাঁরই দলের কর্মীদের একাংশ । তবে ভাগ্য ভালো যে, নন্দীগ্রামের নেতা-কর্মীদের একাংশ চেষ্টা করলেও ওই এলাকার মানুষ মমতাকে ভালো ভোট দিয়েছে। সেই কারণেই এই কেন্দ্রে লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। আমাদের কাছে তথ্য আছে ভোটের দিন নন্দীগ্রামের মুসলিম মেয়েরা মমতাকে জেতানোর জন্য রোযা রেখেছিলেন । মহান আল্লাহ কাছে তাঁরা প্রার্থনা করেছিলেন । কিন্ত সবকিছু পাল্টে গেল শুধুমাত্র ষড়যন্ত্রের জন্য । আর একটা খবরও রয়েছে ভোটের ফলাফলের দিনও এই রাজ্যের অধিকাংশ মুসলিম পরিবার সেহরি খাওয়ার আগে তাহাজ্জদের নামাযে বিশেষ দোয়া করেছিল মমতাকে জেতানোর জন্য ।

নন্দীগ্রামে মমতা হারেননি , তাঁকে গদ্দার হারিয়েছিলেন । সেই গদ্দারদের চিহ্নিত করা হোক । অন্তর্ঘাত করার ক্ষমতা শুধু বনশ্রী খাঁড়ার একার হবে না , এর নেপথ্যে আরও বড় খেলা ছিল ।সেই খেলার রহস্য কী কোনো দিন ফাঁস হবে ? এরাই তৃণমূলের আসল গদ্দার । খোদ দলনেত্রীকেই হারাতে যারা গোপন সমঝোতা করেন তাঁদের দলে পুরস্কার দেওয়াটা কী ঠিক হবে ?

যদিও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র তাপস মাইতি বলেছেন, ‘‘নন্দীগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় যাঁরা তৃণমূলের সুবাদে ক্ষমতায় থেকে দল বিরোধী কাজ করেছেন, তাঁদের খুঁজে বার করা হচ্ছে। জেলা নেতৃত্ব পর্যালোচনা করে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে। পঞ্চায়েতের পদ থেকে অপসারণের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক স্তরেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এখন দেখার বিষয় দলের এই গদ্দারদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় তৃণমূল কংগ্রেস ?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

12 + twelve =