অন্যান্য কলকাতা 

National Herald Case : মোদি সরকার ক্লিনচিট দেওয়ার পরেও, কেন ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় রাহুল সোনিয়া টার্গেট! মোদি কী ভয় পাচ্ছেন?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম : ন্যাশনাল হেরাল্ড নামে পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জহরলাল নেহেরু। স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলিতে এই পত্রিকাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। জহরলাল নেহেরুর মালিকানা এবং সম্পাদনায় এই পত্রিকাটি পুষ্ট হয়েছে। পরবর্তীকালে এই পত্রিকাটি জাতীয়করণ করা হয়। কিন্তু জাতীয়করণ করার পর পত্রিকাটির ক্রমশ গুরুত্ব হারাতে থাকে একটা সময় সংকটের মধ্যে পড়ে যায়।

পারিবারিক দায় এবং দায়িত্ব থেকে সোনিয়া গান্ধী ,নেহেরু –  গান্ধী পরিবারের বধু হিসাবে এই পত্রিকাটির পুনর্জাগরনের চেষ্টা করেছিলেন। এটাই তাঁর অপরাধ! তারপর দেখা গেল ২০১৪ সালের মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকার দুর্নীতি মামলা শুরু করা হলো। সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে দু হাজার কোটি টাকার মামলা শুরু হয়। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এক বছর ধরে মোদি সরকার ছানমিন করেছিল রাহুল সোনিয়ার দুর্নীতি নিয়ে।

Advertisement

কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলেই ২০১৫ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ড দুর্নীতি মামলায় সনিয়া গান্ধী এবং রাহুলকে ক্লিনচিট দিয়ে মামলা বন্ধের সুপারিশ করেছিল ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)’। সংস্থার তৎকালীন যুগ্ম-অধিকর্তা রাজন কাটোচ অর্থ মন্ত্রকে পাঠানো রিপোর্টে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, কংগ্রেসের দুই শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। মোদি সরকার পরিচালিত ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)’ রাহুল এবং সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলার প্রায় সাত বছর পর সেই মামলা কেন নতুন করে শুরু করল মোদি সরকার ? সেটাই এখন জানতে ইচ্ছা করে দেশের মানুষের।

দেশের মানুষকে মূল সমস্যা গুলি থেকে অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সোনিয়া-রাহুলকে নিশানা বানিয়েছে মোদি সরকার? একথা স্পষ্ট ভাষায় বলা যেতে পারে রাহুল গান্ধী কিংবা সোনিয়া গান্ধীকে মোদি সরকার ক্ষমতার জোরে গ্রেফতার করতে পারে, আটক করতে পারে, কিন্তু দুর্নীতির প্রমাণ করতে পারবে না বলেই দেশের সাধারণ মানুষ মনে করে।

মনমোহন সিং এর নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে এ দেশের সার্বিক বিকাশ হয়েছিল। সেই বিকাশ মোদি সরকারের আট বছরে যে থমকে দাঁড়িয়েছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ। বিকাশ তো দূর অস্ত! এদেশের মানুষের রোজকার কমেছে, বেকারত্ব বেড়েছে আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়ে চলেছে! স্বাধীনতার পর এত সংখ্যক বেকারত্ব এদেশে দেখা যায়নি। স্বাধীনতার পর এই ধরনের অবস্থা এদেশে পরিলক্ষিত হয়নি।

আসলে মোদি সরকার ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করে ক্ষমতায় থাকার রসদ সৃষ্টি করার যে চেষ্টা করেছিল তা অনেকটাই ব্যর্থ হতে চলেছে। সাধারণ মানুষ এখন প্রশ্ন করতে শুরু করেছে কেন জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া হচ্ছে? কেন ব্যাংকে টাকা রাখলে সেটা তার নিশ্চয়তা নেই ? কেন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গুলো আজ ধুঁকছে? জীবন বীমার মত সরকারি সংস্থার শেয়ারবাজার যেভাবে ধ্বসে পড়েছে তা নিয়ে অবশ্যই দেশের মানুষকে চিন্তায় ফেলেছে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

নোট বন্দি করে দেশের আর্থিক অবস্থাকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। নোট বন্দি করার সময় বলা হয়েছিল এদেশে জালনোট বলে কিছু থাকবে না।  কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বলছে, সারা দেশ জাল নোটে ভরে গেছে এর ফলে দেশের আর্থিক অবস্থা যে আরো খারাপ হবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। মোদি সরকার নিজস্ব দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

মোদি সরকার জিনিসপত্রের দাম কমাতে পারেনি। মোদি সরকার গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, মোদি সরকার ধর্মীয় বিভাজনকে ভেঙে দিয়ে নতুন ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখাতে পারেনি। মোদি সরকার হিন্দু মুসলিমের মধ্যে সম্প্রীতি তৈরি করতে পারেনি। মোদি সরকার বিবিধের মাঝে ঐক্যের কথা বলতে পারেনি। এইসব নিয়েই যখন সাধারন মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে ঠিক তখনই রাহুল এবং সোনিয়াকে টার্গেট করে মোদি সরকার এদেশের রাজনীতির মোড়কে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু তা কি সফল হবে ? দেশের মানুষ কী বিজেপির এই চালাকি ধরে ফেলতে পারবে না সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ