কলকাতা 

বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীর সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ থাকার জন্যই নিয়োগ দুর্নীতিতে তার নাম জড়িয়ে অনেকেই বাঁচতে চাইছেন দাবি বিভাস অধিকারীর

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির শিকড় যে গভীরে রয়েছে তা দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে বীরভূমের তৃণমূল নেতা বিভাস অধিকারীর নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরেই এবার নাম জোরালো বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয় বর্গীর। বিভাস এদিন দাবি করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয় বর্গীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার জন্যই এই দুর্নীতির সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বিভাস অধিকারী বলেছেন,কৈলাসের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’-আছে তাই তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।আর তাতেই নাকি অনেকের ‘চোখ টাটিয়েছে’। তাঁর আরও দাবি অনেকে নাকি তাঁর সঙ্গে কৈলাসের ‘সুসম্পর্ক’-এর সুযোগ নিতেও চাইছেন। অন্তত এমনটাই যুক্তি দিয়েছেন বিভাস। তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতির কথায়, ‘‘আমার নাম দুর্নীতিতে জড়িয়ে অনেকেই বাঁচতে চাইছেন। আমার সঙ্গে কৈলাসজির সম্পর্ক ভাল। তাই অনেকের ধারণা আমার নাম জড়িয়ে দিলে কৈলাসজি আমাকে বাঁচাবেন, আর সেই সুবাদে তাঁরাও বেঁচে যাবেন।’’ পাশাপাশি তৃণমূল ত্যাগ করার কারণে কিছু মানুষ তাঁর নাম জড়িয়ে মজা দেখতে চাইছেন বলেও বিভাস দাবি করেছেন।

Advertisement

কিন্তু কতটা সুসম্পর্ক রয়েছে কৈলাস এবং বিভাসের? কী সূত্রেই বা কৈলাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি? বীরভূমের নলহাটিতে বিভাসের একটি ধর্মীয় আশ্রম রয়েছে। সেই আশ্রমের সূত্রেই কৈলাস এবং তিনি গাঁথা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিভাস।বিভাসের কথায়, ‘‘আমার আশ্রমে কৈলাসজি তিন-চার বার গিয়েছেন। উনি আশ্রমের শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি যখন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ছিলাম তখনও তিনি আমাকে দেখতে এসেছিলেন।’’

বিভাসের দাবি, এক সময় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি থাকলেও বর্তমানে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর এখন একটাই পরিচয়, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সেন্ট্রাল অয়্যারহাউসিং কর্পোরেশন’-এর ডিরেক্টর। ২০২০ থেকে তিনি এই পদে বহাল রয়েছেন। তাঁর দাবি, তিনি যখন তৃণমূল করতেন, তখনও তাঁর এই পদ নিয়ে দলের অন্দরে কারও অসুবিধা হয়নি। আবার তিনি তৃণমূল করতেন বলে কৈলাসও তাঁকে কিছু বলেননি বলে তাঁর দাবি। বিভাস বলেন, ‘‘কৈলাসজি বলেননি যে, বিজেপি করতে হবে। তৃণমূলও বলেনি যে ওই চাকরি করতে পারব না।’’

তৃণমূল ছেড়ে দেওয়ার পর কৈলাসের সঙ্গে সুসম্পর্কের জন্য তা হলে কি তিনি বিজেপিতে যোগদান করবেন? উত্তরে সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলত্যাগী বিভাস। সক্রিয় ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না বলেই স্পষ্ট করেছেন তিনি। বিভাসের কথায়, ‘‘আমি সক্রিয় রাজনীতি করব না। শুধু ঠাকুর নিয়ে থাকব। মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’’

পার্থের সঙ্গে বিভাসের ‘মধুর’ সম্পর্ক বলেও জনশ্রুতি বীরভূমে। আর সেই কারণেও অনেকে তাঁকে দুর্নীতির মামলায় যুক্ত করেছেন বলে মনে করছেন বিভাস। তিনি বলেন, ‘‘২০১৫ সালে আমাদের আশ্রম উদ্বোধনের সময় আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিমন্ত্রণ করেছিলাম। উনি না এলেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠিয়েছিলেন। পার্থ এখানে এসেছিল বলে এখন সবাই ভাবছে আমার সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক আছে।আমাদের মধ্যে লেনদেন আছে বলেও অনেকে ধারণা করেছেন।’’

বিভাস জানিয়েছেন, ২০১৮ সাল থেকে মুকুল রায়ের সঙ্গেও তাঁর ‘সুসম্পর্ক’ ছিল। তবে বর্তমানে মুকুলের সঙ্গে সেই যোগাযোগ আর বজায় নেই।

বিভাস জানিয়েছেন, তাঁর ব্যক্তিগত, আশ্রম এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি তিনি ইডিকে পাঠিয়েছেন। আগামী দিনে ইডি, সিবিআই তাঁকে তলব করলে তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বিভাস। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি কিছু করিনি। সত্য বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তা হলে আমার কিছু হবে না। কিন্তু আমি পাপী হলে শাস্তি পাব।’’

যদিও কুন্তলের মুখে বিভাসের নাম উঠে আসার পর প্রায় চার মাস ধরে সিল করা বিভাসের কার্তিক বোস স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে মঙ্গলবার ইডি হানা দিয়েছে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আগে জানিয়েছিল, বিভাস অধিকারী ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি ছিলেন। ওই অ্যাসোসিয়েশনেরই অফিস এই ফ্ল্যাট।

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ