অন্যান্য 

অনলাইনের পারিবারিক আসরে ছোটবেলার গল্প শুনিয়ে সকলের মন ছুঁয়ে গেলেন বিশিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার শাহিন রহমান

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

নায়ীমুল হকের প্রতিবেদন : বছর দুয়েক আগের কথা। লকডাউনে তখন সবকিছু স্তব্ধ। একদিন বড়দের সঙ্গে ছোটরা ঠিক করে ফেলল প্রতি সপ্তাহে একদিন এক ঘন্টার জন্য মিলিত হবে সকলে। অবশ্যই অফলাইনে নয়, অনলাইনে। কবিতা, গান, আবৃত্তির সঙ্গে থাকবে সমাজ-শিক্ষা-সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনে পরিবার থেকে ব্যক্তি স্তরের নানান কথাবার্তা, যে যেমন পারে।

দেখতে দেখতে বছর দেড়েক পেরিয়ে লকডাউন কেটে গেলেও তা থামতে দেয়নি ওই সমস্ত পরিবারের খুদেরা, পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন পরিবারের বড়রাও। যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, সব কাজ মিটিয়ে শুক্রবার রাত নটায় অনলাইন অনুষ্ঠানে তাদের হাজির থাকা চাই-ই চাই।

Advertisement

গতকাল শুক্রবার ছিল সেই অনুষ্ঠানের ৮১-তম পর্ব। পবিত্র কোরআন থেকে আলোচনা, জীবনশৈলীর বিভিন্ন বিষয়ে আলাপচারিতা, ছোটদের কুইজ-বিতর্কের পাশাপাশি এদিন শুরু হল বিশেষ এক আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। মূলত সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই অনুষ্ঠানে প্রতি সপ্তাহে উপস্থিত হবেন সমাজের বিভিন্ন পেশার গুণীজনেরা। বলবেন তাঁদের মনের কথা, ছোটবেলার কথা, বেড়ে ওঠার কথা, বড় হওয়ার কথা। একদিক থেকে তাঁরা যেমন জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তের কথা নতুন প্রজন্মের সাথে শেয়ার করে স্মৃতিমেদুর হবেন। অপরদিকে যারা শুনবে তারা হবে সমৃদ্ধ। বড়দের অভিজ্ঞতার আলো থেকে চিনে নেবে নিজেদের পরিক্রমার পথটিকে।

ঠিক সেই ঝলক দেখতে পাওয়া গেল গতকাল অনলাইনে আয়োজিত সাক্ষাৎকার ভিত্তিক ‘মনের কথা’ এই আনুষ্ঠানিক পর্বে।

   মার্কিন প্রবাসী বঙ্গসন্তান শাহিন রহমান

এদিন উপস্থিত হয়েছিলেন দু’দশক আগে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় একরাশ স্বপ্ন নিয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়তে আসা শাহিন রহমান। সেখান থেকে গড়িয়ে গেছে অনেক জল। এখন তিনি মার্কিন প্রবাসী, তবু ভুলতে পারেননি তাঁর শহরের কথা, ছোটবেলার স্কুল-কলেজের কথা, ফেলে যাওয়া অসংখ্য বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের কথা। সব কথা তিনি বললেন ঝরঝরে বাংলায়, সংক্ষিপ্তভাবে, কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের জন্য শুনিয়ে দিলেন মূল কথাটা। হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে কান পেতে ছিলেন তাঁর বাবা-মা ও। প্রবাসী সন্তানের মুখে তার ছোটবেলার কথা। মনি-মুক্তার চেয়েও দামি।

বলা শুরু করলেন শাহিন, অংক আমার বরাবরের প্রিয় সাবজেক্ট। তখন আমি ক্লাস নাইন কী টেন-এর ছাত্র। প্রতিদিনের মতো টিচার ক্লাসে এসে অংক দিয়েছেন। আমরা অনেকেই জমা দিয়েছি। সবার উত্তর এক, কেবল আমারটা আলাদা। স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ হয়ে গেল, আমি বোধহয় নিশ্চয়ই ভুল করেছি। তাহলে কি আমি পিছিয়ে পড়ছি! কিন্তু না, কিছুক্ষণের মধ্যেই ভুল ভাঙলো। টিচার সকলকে খুব বকাবকি করলেন। বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের অংক ভুল, কেবল একজনের ছাড়া। সেদিন আমি বুঝেছিলাম, আমার মধ্যে কনফিডেন্স আরও বাড়াতে হবে। আবার আমি যখন আমেরিকায় এলাম। অংকে সব পরীক্ষায় একশোয় একশো পাওয়া ছেলে। তখন আমার মধ্যে এক আলাদা কনফিডেন্স। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয়, প্রথম দিন ক্লাসে গেলাম, অংক পারলাম না। অথচ দেখছি, বিভিন্ন দেশের ছেলেমেয়েরা অনায়াসে করে ফেলছে। ওগুলো বুঝতে আমার প্রায় মাস খানেক সময় লেগে গেল। আমি বুঝলাম, ওভার কনফিডেন্স আমাদের কতটা ক্ষতি করে দিতে পারে। আসলে আমরা যে কোনো বিষয়ের ব্যবহারিক দিক একদম ভাবি না, সেই সংক্রান্ত প্রবলেম সলভ করি না। তাই লেস কনফিডেন্স এবং ওভার কনফিডেন্স এই দুইয়ের মাঝে ব্যালেন্স করা খুব জরুরি। সেই কাজটা যে যত তাড়াতাড়ি বুঝে নিতে পারবে তার ততই মঙ্গল।

নজরুলগীতি গেয়ে সকলের মন জয় করলেন অরিত্রি সাহু

তিনি বার বার উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বললেন মার্কসের পেছনে ছুটে কোনো ফায়দা নেই। আমরা দেশ বিদেশের মাটিতে দেখেছি মৌলিক চিন্তা ও জ্ঞানের কদর সর্বত্র। এ বিষয়ে অভিভাবকদের আরো অনেক সচেতন হওয়ার কথা তিনি বলেন। তিনি আরো বলেন ছেলেমেয়েদের যার যে বিষয় পছন্দ, সে দিকটার প্রতি বিশেষ খেয়াল রেখে পড়াশোনা এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের ভূমিকা ও দায়িত্ব অনেক। এ বিষয়ে তিনি আগামী দিনে বেশ কিছু কাজ করার পরিকল্পনাও রেখেছেন বলে জানান। অত্যন্ত ব্যস্ততার মাঝে স্বল্প সময় হলেও তাঁর এই কথা কথাবার্তায় দাগ কেটে যায় উপস্থিত সকলের মনে। আগামী দিনে এমন অনুষ্ঠান আরো বেশি বেশি হোক এমনই কামনা সকলের।

এদিনের অনুষ্ঠানের বাকি অংশে ছিল ‘স্মরণে কাজী নজরুল ইসলাম’ এবং ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অংশ নিয়েছিল ‘এগিয়ে যেতে স্মার্টফোনের অপরিহার্যতা’ নিয়ে বিতর্কে। ঘণ্টা দেড়েকের অনুষ্ঠান কিভাবে যে কেটে গেল বুঝতে পারেনি কেউই। বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীর আবৃত্তি ও অরিত্রি সাহুর মন ছুঁয়ে যাওয়া নজরুল গীতি ছিল অনুষ্ঠানের আর এক অন্যতম আকর্ষণ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ