কলকাতা 

মানবাধিকার দিবস পালন করা তো দূরের কথা, চার বছর ধরে অডিট হয়নি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের, বর্তমান চেয়ারম্যানের আমলে বিচারপ্রার্থীদের বক্তব্য না শুনে নাকচ করার অভিযোগও উঠেছে, কমিশনের পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কি নাপরাজিত মুখোপাধ্যায় ?!

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরী : ১০ ই ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস পালন করতে পারল না রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। বিরোধীদলগুলি প্রায়ই অভিযোগ করে থাকে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন নাকি ঠুটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার কমিশন রাজ্যের মানবাধিকারের দিকে নজর দেওয়ার আগে দপ্তরের দিকে তাকালে তার হাড় কঙ্কাল চেহারা স্পষ্ট হয়ে বেরিয়ে আসে।

বর্তমান মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কমিশনের কোনো অডিট হয়নি বলে সূত্রের খবর। এ নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান এর সঙ্গে কমিশনের সদস্যদের তীব্র বাদানুবাদ হয়েছে। বিগত চার বছর ধরে কেন ক্যাগকে দিয়ে অডিট করানো হয়নি? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

জানা গেছে, সম্প্রতি মানবাধিকার কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান একটি বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে সে ক্ষেত্রেও তিনি একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর মানবাধিকার কমিশনের এক সদস্যের বক্তব্যকে অন্যভাবে ঘুরিয়ে সুপারিশপত্রের লেখা হয়েছে যা নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে অন্যতম সদস্য এর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। মানবাধিকার কমিশন দু’বছর ধরে কোন অনুষ্ঠান করতে পারছে না।

পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কি নাপারাজিত মুখোপাধ্যায়?

গতবছর করোনা অতিমারির জন্য কোন অনুষ্ঠান হয়নি। এ বছরও মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের অডিটোরিয়াম ভাড়া নিতে চেয়েছিল কমিশন কিন্তু হাইকোর্ট তা দিতে অস্বীকার করায় সভা করতে পারেনি। গতবছর মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের উদ্যোগে মানবাধিকার দিবস পালন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেই সভাতে বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং তৎকালীন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তা নিয়ে জল অনেকখানি গড়িয়ে যায় শেষ পর্যন্ত অতিমারির দোহাই দিয়ে মানবাধিকার কমিশন গত বছর কোন অনুষ্ঠান করেনি।

জানা যাচ্ছে, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের নিয়ম অনুসারে প্রতিবছর কমিশনের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করা হয়। এক বছর ধরে কমিশন কি কি অভিযোগ পেয়েছে আর সেই অভিযোগের কি কি সুরাহা করেছে সেই রিপোর্ট বিধানসভায় পাঠানো হয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে তা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমনকি মানবাধিকার কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান একতরফাভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যাতে ভুক্তভোগীরাও অসন্তুষ্ট বলে জানা গেছে। যদিও মানবাধিকার আইন অনুসারে কমিশনের সদস্য এবং চেয়ারম্যান যৌথভাবেই কোন সিদ্ধান্ত বা কোনো নির্দেশ বা কোনো সুপারিশ দিতে পারেন। প্রাপ্ত সূত্রের খবর অনুসারে সেই নির্দেশ সেই আইন কোনভাবেই মানছেন না বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি নিজের মত করে সুপারিশ পত্র পেশ করছেন বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের এক অফিসারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে গিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান কোন নিয়ম নীতি আইন মানেননি বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকি কমিশনের সদস্য রাজ্যের প্রাক্তন ডিজিপি নাপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের লিখিত নোটকেও বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে কমিশনের ওয়েবসাইটের দিকে তাকালেই কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে কমিশনের সদস্যের দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসবে। এর ফলে কমিশনের দৈনন্দিন কাজকর্ম অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি যে সকল মানুষ মানবাধিকার বিষয়ে অভিযোগ করছেন তারাও যথাযথ বিচার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরো গুরুতর অভিযোগ মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে যে ভুক্তভোগীরা সুরাহার জন্য কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার পর কমিশন একতরফাভাবে তাদের আবেদন নাকচ করে দিচ্ছে। কেন নাকচ করা হচ্ছে অভিযোগকারীর বক্তব্য না শুনে এ নিয়ে কেউ কথা বলতে চাইছেন না।

জানা গেছে আগামী ২০ ডিসেম্বর বর্তমান চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গিরিশ গুপ্তর মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাবে। পরবর্তী চেয়ারম্যান কে হবেন তা এখনো ঠিক হয়নি। সূত্রের খবর রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাব পুনরায় দায়িত্ব পেতে পারেন রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজিপি ও মানবাধিকার কমিশনের বর্তমান সদস্য নাপরাজিত মুখোপাধ্যায়। প্রাক্তন এই পুলিশ কর্তা মানবিক এবং মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করে চলেন  বলে জানা গেছে।

তিনি অন্তত মানুষের সমস্যাগুলির দিকে নজর দেন এবং সরকারকে সঙ্গে নিয়েই তার সুরাহা করার চেষ্টা করেন। এর আগে তিনি মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন সেই সময় দেখা গেছে অনেক ভালো কাজ তিনি করতে পেরেছেন। অন্তত মানবাধিকার কমিশন একটা বিষয় তাঁর আমলে করতে পেরেছিল সাধারণ মানুষের জন্য মানবাধিকার কমিশনকে খুলে দেওয়া হয়েছিল।

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ