কলকাতা 

ফসলের মাটি বাহিত রোগ সংক্রান্ত সচেতনতা দিবস উদযাপনে কৃষি বিজ্ঞানীরা

শেয়ার করুন

নায়ীমুল হক : প্রতি বছরের মতো এই বছরেও গত ২২ শে সেপ্টেম্বর ২০২১ এসোসিয়েশন ফর এডভান্সমেন্ট ইন প্লান্ট প্রটেকশন (এ. এ. পি. পি.)-র পৃষ্ঠপোশকতায় এবং বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বি. সি. কে. ভি.) উদ্ভিদ রোগ তত্ত্ব বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ফসলের সপ্তম মাটি বাহিত রোগ সংক্রান্ত সচেতনতা দিবস উদযাপিত হয়ে গেল ভার্চুয়াল মাধ্যমে। উক্ত অনুষ্ঠানটিতে পৌরোহিত্য করেন এ. এ. পি. পি. -র বর্তমান সভাপতি অবসারপ্র্রাপ্ত অধ্যাপক অসিত কুমার মুখোপাধ্যায় মহাশয়।

তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে মাটিবাহিত রোগ সচেতনতার গুরুত্বের বিষয়ে দিক নির্দেশ করে। এ. এ. পি. পি. -র সচিব অধ্যাপক শান্তনু ঝা মহাশয় তাঁর সংক্ষিপ্ত স্বাগত ভাষণে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ঠ অতিথিবৃন্দ এবং অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের এ. এ. পি. পি. -র পক্ষ থেকে হার্দিক স্বাগত জানান এবং এই সচেতনতার প্রয়োজনের কথা বলেন। তিনি আরো জানান যে এই বছরে অনুষ্ঠানটি সদ্যপ্রয়াত সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক চিত্রেশ্বর সেন মহাশয় -এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎস্বর্গ করা হয়েছে। এর পর তিনি বিধান বি. সি. কে. ভি. র মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক বিকাশ সিংহ মহাপাত্র মহাশয়ের অনুমতিক্রমে অনুষ্ঠানটির শুভ সূচনা করেন এবং মাননীয় উপাচার্য মহাশয় কে উদ্বোধনী ভাষণ দেবার অনুরোধ জানান। মাননীয় উপাচার্য মহাশয় তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে অধ্যাপক চিত্রেশ্বর সেন মহাশয়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি মাটি বাহিত রোগ দমনের ব্যাপারে সকল কৃষি বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত ভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবার উপর উপদেশ দেন।

Advertisement

তিনি এ. এ. পি. পি. -র সচিব অধ্যাপক শান্তনু ঝাঁ মহাশয় কে এই ধরনের অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান এবং অনুষ্ঠানের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। এর পর বি. সি. কে. ভি. র ডক্টর সুব্রত দত্ত মহাশয় ২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই সচেতনতা দিবসের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে এবং মাটি বাহিত রোগের রকমফের, বিস্তার এবং প্রতিকারের জটিলতা সম্পর্কে সম্মক ধারণার উপস্থাপন করেন।

পরে একটি মনোজ্ঞ উপস্থাপনার মাধ্যমে ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের ওষধি ও সুগন্ধি ফসলের অনুসন্ধান নির্দেশালয়-এর অবসরপ্রাপ্ত নির্দেশক ডক্টর সত্যব্রত মাইতি, অধ্যাপক চিত্রেশ্বর সেন স্মারক বক্তৃতা দেন। প্রথমেই তিনি অধ্যাপক সেন-এর সাথে তাঁর ছাত্রজীবনের ব্যক্তিগত, গবেষণা ও শিক্ষাদান বিষয়ে স্মৃতিচারনা করেন। তাঁর বক্তৃতায় তিনি মূলত মাটিবাহিত রোগগুলির গুরুত্ব, রোগজীবাণু গুলির সনাক্তকরণ ও রোগ-নির্ণয় এবং এই বিষয়ে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম ও পদ্ধতিগুলির উল্লেখ ও বর্ণনা দেন। তিনি কৃষি সম্প্রসারনের কাজে যুক্ত কর্মীদের মাটিবাহিত রোগগুলির সনাক্তকরণ ইত্যাদি বিষয়ে কাজের রূপরেখা বিষয়ে ধারণা দেন। মাটি বাহ্যিক রোগগুলির প্রতিকার বিষয়ে তিনি মাটির স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার উপর জোর দেন। এ ব্যাপারে কৃষি যন্ত্রপাতিগুলিকে জীবাণুমুক্ত করা, আক্রান্ত জমির ফসলাবশেষ গুলির উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা করার কথা বলেন যাতে মাটিবাহিত রোগজীবাণুগুলি সহজে ছাড়িয়ে পড়তে না পারে। এছাড়া কোয়ারেন্টাইন, সবজি ফসলে জোড়কলম পদ্ধতির ব্যবহার, কৃষি জমির মাটির রৌদ্রায়ণ, জৈবধুপন পদ্ধতির ব্যবহার এবং সর্বোপরি মাটিতে বায়োচার, ক্যালসিয়াম, পটাশ ও জিংক প্রয়োগের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য সংশোধনের প্রচেষ্টার কথা বলেন। এরপর শুরু হয় বহু আকাঙ্খিত কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা। এই আলোচনাতে ৫০ জনের বেশি কৃষক বন্ধু ছাড়াও বিভিন্ন ব্লকের কৃষি অধিকর্তা, কৃষি উপাদান সরবরাহ কারী সংস্থা গুলির প্রতিনিধি, পাইকারি ও খুচরো বিক্রেতাও অংশ নিয়ে ছিলেন।

এই পারস্পরিক আলোচনা থেকে বর্তমানে প্রতীয়মান বেশ কিছু নুতন সমস্যার কথা আলোচনা হয়। তার মধ্যে হুগলী ও বর্ধমান জেলার কিছু অংশে আলুর কন্দ বৃদ্ধিকালে ফেটে যাওয়ার সমস্যা, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার লাল ও কাঁকুড়ে মাটি অঞ্চলে ব্যাক্টেরিয়াজনিত ঢোলে পড়া রোগ ও আলুর খোশ দাগ-রোগ, খরিফ মরসুমে বাঁধাকপি ও ফুলকপির কাণ্ডপচা ও শিকড়ের কৃমিজনিত গাঁট রোগ, পান বরোজের অংগার রোগ এবং নারকেলের অকালে ফলঝরা রোগ উল্লেখযোগ্য। আলুর কন্দ বৃদ্ধি কালে ফেটে যাওয়ার সমস্যাটি একটি নতুন সমস্যা হিসাবে মনে হয়েছে । এর কারণ ও প্রতিকারের ব্যাপারে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মাঠে গিয়ে সরাসরি অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে।

নিউ দিল্লী থেকে ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান সংস্থার (আই. এ. আর. আই.) প্রধান বিজ্ঞানী ডক্টর রবিন গগৈ মহাশয় ভুট্টার মাটি বাহিত বিভিন্ন রোগ সমস্যার উপর আলোকপাত করেন।

পরিশেষে আই. এ. আর. আই., নিউ দিল্লী থেকে অধ্যাপক মতিয়ার রহমান খান সকল অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

(সৌজন্য: এসোসিয়েশন ফর এডভান্সমেন্ট ইন প্লান্ট প্রটেকশন, কল্যাণী, নদীয়া)


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ