জেলা 

“মীরজাফরের স্থান নেই তৃণমূলে” বলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যানার পোস্টারে দিয়ে দাবি জানালো তৃণমূল কর্মীরা, অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি হেরে যাওয়ার পর থেকে তৃণমূলে ফেরার হিড়িক পড়ে গেছে। নির্বাচনের মুখে যারা দল ছেড়েছিলেন তারা যেমন চলে আসতে চাইছেন একইরকম ভাবে বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়কও তৃণমূলে যোগ দিতে চাইছেন । ইতিমধ্যে মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দিয়েছেন, তার সঙ্গে আরো অনেকেই যোগ দিতে চাইছেন বলে খবরে প্রকাশ।

কিন্তু এই যোগদান পর্ব নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কারন দলের সংকটের সময়ে যারা দলকে নির্বাচনে জেতালেন  তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন করে দলছুটদের নেওয়া হলে তা ভাল হবে না বলে তৃণমূল কর্মীদের অভিমত। এই আশঙ্কাটা রাজনৈতিক মহলের মধ্যে ছিল। যে বিজেপি থেকে আসা কর্মীদেরকে দলে নেয়া হলে তা নিয়ে বিদ্রোহ হবে সেটা অনেক আগে থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছিল।

Advertisement

তারপরেও বিজেপি থেকে আসার সম্ভাবনা দিনদিন উজ্জ্বল হচ্ছিল। অনেক নির্বাচিত বিজেপি বিধায়ক বেসুরে কথাবার্তা বলছিলেন বলছেন বলছেন হলে বিজেপি দল যে ভাঙতে চলেছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এদিকে তৃণমূলের ডাল ভাঙানোর খেলা কে মেনে নিতে পারছে না কর্মীরা। এবার রাস্তায় নেমে কর্মীরা বিরোধিতা শুরু করেছে। বনগাঁ থেকে শুরু করে পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূল কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে দলছুট দের দলে নেয়ার বিরোধিতায় সরব হয়েছে। কয়েকদিন আগে ডোমজুড়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এর নাম না করে গাদ্দার নামে অভিহিত করে এদেরকে দলে নেওয়া যাবে না এই দাবি জানিয়ে ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল। এই পোস্টারের তলায় লিখেছিল ডোমজুড় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী বৃন্দ।

আজ যেমন সোমবার বাগদায় বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের বিরুদ্ধে পোস্টার  পড়ল। নোয়াপাড়ার বিজেপি প্রার্থী সুনীল সিংয়ের বিরুদ্ধেও পোস্টার পড়েছে। হাওড়ায় আবার রাজীব বম্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তৃণমূল কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। সবমিলিয়ে দলত্যাগী নেতাদের তৃণমূলে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হতেই দলের অন্দরেই বাড়ছে ক্ষোভ।

সোমবার সকালে বাগদার হেলেঞ্চাতে থানার সামনে, রাস্তার ডিভাইডারে, বিভিন্ন দোকানের সামনে পোস্টার পড়ে। সেই পোস্টারে বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে ‘মীরজাফর’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। সঙ্গে লেখা হয়েছে, “মীরজাফরের স্থান নেই তৃণমূলে। বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত। প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা তুলত এখান থেকে। গরু পাচারকারী স্মাগলার বিশ্বজিৎ দাসের তৃণমূলে কোনও স্থান নেই।” পোস্টারের নিচে লেখা এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীবৃন্দ। যদিও এই পোস্টারের দায় নিতে চায়নি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। বরং বিজেপির ঘাড়েই এই পোস্টারের দায় চাপিয়েছেন বাগদা পশ্চিমের তৃণমূল সভাপতি অঘোরচন্দ্র হালদার। তিনি বলেন, “পোস্টার আমি দেখিনি। তবে আমাদের দলের কেউ এই পোস্টার দেয়নি। মনে হচ্ছে বিজেপি-র দলীয় কোন্দল এটা।” এ নিয়ে বাগদার বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

এদিকে নোয়াপাড়া প্রাক্তন বিধায়ক সুনীল সিং তৃণমূলে যেতে পারেন এমন সম্ভাবনা তৈরি হতেই তড়িঘড়ি সাংবাদিক সম্মেলন করেন গারুলিয়া তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি পঙ্কজ দাস। তিনি জানিয়েছিলেন, “যদি সুনীল সিং কে তৃণমূলে নেওয়া হয় তাহলে তারা আন্দোলনে নামবেন।” এরপর রবিবার রাতেই এলাকার মানুষ সুনীলের বিরুদ্ধে পোস্টারে সাঁটিয়েছেন। যার কোনোটায় লেখা হয়েছে, “বাংলার দৈত্য সুনীল সিংকে তৃণমূলে নেওয়া যাবে না। কোনওটায় লেখা, “তোলাবাজ, দাঙ্গাবাজ সুনীল সিং”। সবশেষে লেখা, “বাংলার সর্ব ধর্মের মানুষ নোয়াপাড়া।” যদিও দলছাড়ার জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন সুনীল সিং।

একই ছবি হাওড়াতেও। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘর ওয়াপসির সম্ভাবনা তৈরি হতেই পথে নেমে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে যাতে তৃণমূলে ফিরিয়ে নেওয়া না হয়, তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সেই আবেদন জানিয়ে সোমবার ডোমজুড়ে হাওড়া-আমতা রোড অবরোধ করেন এলাকাবাসীদের একাংশ। এদিন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন তাঁরা। সবমিলিয়ে দলত্যাগী তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের ঘর ওয়াপসি ঘিরে বিড়ম্বনায় দল। যদিও এই নেতাদের দলে ফেরানো বিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ