অন্যান্য 

বাঙালির জাতি হিসাবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মনন ও চিন্তনের জগতে সংখ্যালঘু মুসলিমদেরও যে অবদান আছে তা তুলে ধরার লক্ষ্যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশনা সংস্থা করা হয়েছিল : ড. আবদুস সাত্তার

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বামফ্রন্ট সরকারের শেষ পাঁচ বছর রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ড. আবদুস সাত্তার । তিনি মাত্র পাঁচ বছরে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের মোড়কে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন । সফল মন্ত্রী হিসাবে আজও তাঁকে রাজ্যের সংখ্যালঘুরা উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে । সেই আবদুস সাত্তার এবার বাংলার জনরব নিউজ পোর্টালের মুখোমুখি । এটা কোনো প্রথাগত সাক্ষাৎকার নয় । এটা ফেলে আসা অতীতের ঐতিহাসিক দলিল । বেশ কয়েকটি কিস্তিতে প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার  প্রকাশিত হবে ।

প্রশ্ন : কলকাতার হাজী মহম্মদ মহসীন স্কোয়ারে আলিয়া মাদ্রাসার পুরানো ক্যাম্পাসে সাত তল বিশিষ্ট বিএড কলেজ তৈরি করলেন কেন ?

Advertisement

আবদুস সাত্তার : বি.এড কলেজটি আবদুল লতিফের নামে উৎসর্গীকৃত । আসলে সমস্যাটি ছিল-এমন বহু বিষয় আছে যা মাদ্রাসা ও উর্দু মাধ্যম বিদ্যালয়গুলিতে পড়ানো হয় অথচ বিএড পড়ার সরকারী স্তরে , এমনকী বেসরকারী কলেজগুলিতেও সেই সময় কোনো ব্যবস্থা ছিল না ।

দ্বিতীয়ত, বিদ্যালয়-মাদ্রাসাসহ প্রতিষ্ঠানগুলিতে নতুন নিয়মানুয়ায়ী বিএড প্রশিক্ষণ না থাকলে শিক্ষকতার চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় । এখন তো বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে ।বারে বারে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের কাছে ‘ছাড়’ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে হচ্ছে ।

তৃতীয়ত , বেসরকারি বিএড কলেজগুলিতে ভর্তি হতে গেলে যে পরিমাণে অর্থ দিতে হয় তা দেওয়ার সামর্থ্য আর্থিক-শিক্ষাগত দিক দিয়ে পশ্চাদপদ সংখ্যালঘু মুসলিম পরিবারগুলির পক্ষে ভীষণই অসুবিধাজনক।

চতুর্থত, আরবী, উর্দু পার্সিয়ান , ইসলামী ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে বহুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করেও কোথাও পড়ার সুযোগ নেই । অথচ বিষয়গুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দ্বিবিধভাবে – এর ফলে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া ও দ্বিতীয়ত, প্রশিক্ষণের অভাবজনিত কারণে শিক্ষার আধুনিক কলাকৌশল রপ্ত করতে না পারার ফলে ছাত্রছাত্রীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে ।

পঞ্চমত , Unequal Citizen অথবা ‘নারী তুমি অর্ধেক আকাশ’ যেভাবেই চিত্রায়িত করি না কেন , মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রীদের উজ্জ্বল উপস্থিতি , ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরাই সংখ্যাধিক্য , এ কম বড়ো কথা নয় । এদের অবস্থা আরও খারাপ ।

ষষ্ঠত , মেয়েদের জন্য আলাদা শিফটে বিএড প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করা ।

উপরের ছ’টি ভাবনার সমন্বিত ফসল নবাব আবদুল লতিফ শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র । সকালের শিফট পুরোপুরি মেয়েদের জন্য , আর দিনের বেলায় সকলের জন্য । এই পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে ভবন নির্মাণের পর কোর্স খোলার জন্য আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে আবেদন করা হয় ।সেটার শুধুমাত্র দিনের বেলার শিফট চালু করতেই লেগে গেল এই সরকারের চার বছর ! আবার মেয়েরা সেই উপেক্ষিত-ই রয়ে গেল ।

প্রশ্ন : সংখ্যালঘুদের শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা-ভাবনা করতেই বামফ্রন্টের তিন দশক সময় লেগে গেল কেন ?

আবদুস সাত্তার : যা হয়নি, তা নিয়ে ভেবে আর কী হবে ! যা হয়েছে, তাকে আরও কত সুন্দর রুপায়ন করা যায় , সময়ের নিরিখে তা আলোচ্য বিষয় হিসাবে পরিগণিত হওয়া উচিত । বাকীটা গবেষকদের কাজ । কেন ও কী কারণে তা করা হয়নি ?

প্রশ্ন : কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও তো চালু করেছিলেন ?

আবদুস সাত্তার : এই কেন্দ্র-ও সফলভাবে চালু করে এসেছিলাম । আর্থিক পশ্চাদপদতার কারণে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী উচ্চ-শিক্ষায় প্রবেশ করতে পারছে না তাদের জন্যই মূলত এই কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র । ৯০ শতাংশ খরচ রাজ্য সরকার অনুদান হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করবে, আর ছাত্র-ছাত্রীদের মাত্র ১০ শতাংশ বহন করতে হবে । প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা যাতে হাতের কাজ করতে সমর্থ হয় । অল্প সুদে ঋণ দেবে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম । সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে পরপর দুবছর কৃতিদের সংবর্ধিতও করা হয় ।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আবার প্রকাশনা সংস্থাও তৈরি হল , এর কারণ কি ?

আবদুস সাত্তার : বাঙালির জাতি হিসাবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মনন ও চিন্তনের জগতে সংখ্যালঘু মুসলিমদেরও যে অবদান আছে, তা সব সময় প্রতিফলিত হয় না । মুসলিম সমাজের নবজাগরণের প্রবর্তকরাও থেকে যান উপেক্ষিত ।শিক্ষার বাণীবাহকেরাও মূলস্রোতের প্রতিষ্ঠানে জায়গা খুঁজে পান না। একদিনে তো বাংলা –সাহিত্য-সংস্কৃতি , বিঞ্জান চর্চার প্রসার হয়নি । অতীতকে জেনে আপনাকে খোঁজার চেষ্টার মধ্যেই নিহিত রয়েছে এই প্রয়াস । পাশাপাশি বাস অথচ একে অপরের সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পারছি না । না জানলে সামাজিক বন্ধনই বা কী করে সুদৃঢ় হবে ? তার জন্য প্রকাশনা বিভাগ খোলা হয় ।প্রকাশিত হয় আজিজুল হক-এর `The Man Behind The Plough’-এর পুর্ণমুদ্রণ, রোকেয়া রচনাবলী , এস ওয়াজেদ আলী রচনাসমগ্র । কুদরত-ই-খোদা , নবাব আবদুল লতিফ , আমির হোসেন , হাজী মহম্মদ মহসীন প্রমুখ-র জীবনী ও লেখাগুলি প্রকাশের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয় ।

 

 

 

 

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

1 × 5 =