জেলা 

দারিদ্রকে জয় করে মাধ্যমিকে সফল ঝুমা সিং ‌

শেয়ার করুন

‌ ‌অভিজিৎ হাজরা, উলুবেড়িয়া, হাওড়া :- ‌ ‌‌ সুষম পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব। প্রয়োজনীয় বস্ত্রের অভাব। মাথার উপর ছাদ ও নেই। দারিদ্রের ভ্রূকুটি প্রতি নিয়ত।তবু ও পড়াশোনার অদম্য জেদকে পাথেয় করে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৩৭ পেয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ ঝুমা সিং। ‌গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ার সিজবেড়িয়া এলাকার আলামত বস্তির খালপাড়ের বালিকা ঝুমা সিং উলুবেড়িয়া বীণাপাণি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। উলুবেড়িয়ার গঙ্গার জোয়ারের জলে গ্ৰাস করে নেওয়া এই হত দরিদ্র বালিকা জীবন যুদ্ধে হার না মেনে সমাজের শিক্ষার এক মাইল ফলক রচনা করার লক্ষ্যে তার বাবার না ধরা ছোঁয়ার স্বপ্নে এক সফল দৃষ্টান্ত।‌ ‌ বস্তি অঞ্চলের অসামাজিক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, প্রতিকূল পরিস্থিতিকে ও পিছনে ফেলে কৌতুহলী মন তার সাফল্যকে ধরা দেওয়ায় প্রথম পর্ষদ পরীক্ষায় সাফল্য পেল। ‌ঝুমা শত দুঃখ -কষ্টকে সঙ্গী করে শুধুমাত্র পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে না।

পড়াশোনার পাশাপাশি ইতিমধ্যেই চিত্র কলাতে ও তার পারদর্শীতা ও প্রতিভার প্রমাণ করেছে। জীবনের সর্বপ্রথম বোর্ড পরীক্ষায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মুখীন হয়েছে আমতা ১ নং ব্লকের খড়দহ গ্ৰাম পঞ্চায়েতের “খড়দহ পাবলিক কালচারাল ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন ” এর সহযোগিতায়। ‌ঝুমা বিষয়গতভাবে পেয়েছে প্রথম ভাষায় – ৬২, দ্বিতীয় ভাষায় – ৫৭,অংক – ৫২, ভৌতবিজ্ঞান – ৫২, জীবনবিজ্ঞান- ৬৬, ইতিহাস – ৬৭, ভূগোল – ৮১, ঐচ্ছিক বিষয় – ৯১। মোট প্রাপ্ত নাম্বার ৪৩৭। ‌ফ্রি বছর উলুবেড়িয়ার গঙ্গার জোয়ারের জলে পরিবারের সামান্য সঞ্চয় টুকু ভেসে যাওয়ার পর ও ঝুমা ভেঙে পড়ে নি।যেন আর ও নতুন ভাবে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে । তার পরিবারের সদস্য- সদস্যারা ঝুমার উজ্জীবিত হয়ে ওঠা, নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখার রসদ জোগায়। ঝুমার এই উজ্জীবিত হয়ে ওঠা, নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখা,চিন্তাশীল মানসিকতাকে সম্মান জানায় ফুলেশ্বর সংলগ্ন বস্তি এলাকার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

Advertisement

ফুলেশ্বর সংলগ্ন বস্তি এলাকার এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দী‌র্ঘদিন ব্যাপী এক সুচারু পদ্ধতিতে শিশু ও মহিলাদের নিয়ে অবিরত কাজ করে চলেছে।তারা ঝুমার এই সাফল্যে বেশ উৎফুল্ল। বীণাপাণি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাবৃন্দ ,অশিক্ষক কর্মচারীবৃন্দ ঝুমার এই সাফল্যে আনন্দিত ও গর্বিত। ‌ ঝুমার বাবা প্রদীপ সিং পেশায় একজন ভ্যান চালক। দীর্ঘদিন ধরে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই, তার কায়িক পরিশ্রম তাকে কিছুটা শারীরিক ভাবে দুর্বল করলে ও তার মেয়ে ঝুমার নতুন ভাবে উজ্জীবিত হয়ে ওঠা, নতুন ভোরের স্বপ্ন, এবং নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে তিনি বদ্ধ পরিকর। সরকারি নানা প্রকল্পের উপর নির্ভর করে ঝুমার ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে ” খড়দহ পাবলিক কালচারাল ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন ” , এই সংগঠনের তত্ত্বাবধানে চলা ‘ শিশু আলয় ওপেন শেল্টারের কর্মীরা তার পাশে থেকে সমস্ত রকম সহযোগিতা করতে, তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ‌

ঝুমার বাবা – মায়ের দারিদ্রের অসহায়তাকে পিছনে ফেলে পরিবারের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাধ্যমে এক নতুন স্বপ্নের আলো দেখানোর প্রচেষ্টা আজকের ছাত্র -ছাত্রীদের নতুন কিছু করার শক্তি জোগাবে।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ