সন্দেশখালি কাণ্ডে ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিও গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড়। নির্বাচনে জিততে মহিলাদের ইজ্জত নিয়ে মিথ্যাচার করতে বাধে না বিজেপির! কী আছে সেই ভিডিওতে ! কাদের কাদের নাম নিলেন বিজেপি নেতা গঙ্গাধর? জানতে হলে ক্লিক করুন
বাংলার জনরব ডেস্ক : সন্দেশখালীর ঘটনা নিয়ে ‘স্টিং অপারেশন’ সামনে আসার পরেই গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আসামির কাঠগড়ায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও অনুরূপভাবে এই ঘটনার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বলেও বিরোধীরা দাবি করছে। ৩২ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র দেশ জুড়ে বিজেপির চরিত্র প্রকাশিত হয়ে পড়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। এই ভিডিওতে বিজেপির এক নেতা গোপনে স্বীকার করেছেন সন্দেশখালির মহিলাদের উপর অত্যাচারের যে অভিযোগ প্রকাশ্যে এনে এত দিন আন্দোলন করা হয়েছে, তা মিথ্যা এবং সাজানো। বিজেপির তরফে টাকা দিয়ে গোটা বিষয়টি সাজানো হয়েছে।
ভিডিয়োতে যাঁকে দেখা গিয়েছে, তাঁর নাম গঙ্গাধর কয়াল। তিনি সন্দেশখালি ২ ব্লকের মণ্ডল সভাপতি বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয় বিজেপি জানিয়েছে, গঙ্গাধর আদৌ মণ্ডল সভাপতি নন। তিনি বিজেপি সমর্থক তাঁর মানসিক সমস্যা আছে বলেও দাবি করা হয়েছে। ভাইরাল ভিডিয়োটিতে সেই গঙ্গাধরকে একটি ঘরে চেয়ারের উপর বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। কেউ বা কারা তাঁকে প্রশ্ন করছেন, তিনি উত্তর দিচ্ছেন। আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ওই ভিডিওর ক্লিপিং থেকে হুবহু অনুলিপি আমাদের পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি। যদিও এই ভিডিওর সত্যতা নিয়ে বাংলার জনরব কোনোভাবেই দায়ী নয়। আমরা এই ভিডিও সত্যতা যাচাই করিনি যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে তাই তা থেকে সেই বক্তব্য গুলির অনুলিপি এখানে প্রকাশ করা হচ্ছে।
প্রশ্নকর্তা: একটা টিমকে নামাতে গেলে তার তো একটা খরচ আছে। তা না হলে কেন তাঁরা এত শক্তিশালী লোকজনের বিরুদ্ধে যাবেন?
গঙ্গাধর: খরচ তো আছে। আন্দোলনটা এত দিন টিকে আছে কেন? তিনটে ছেলে এ দিক ও দিক যাচ্ছে, গোটাটা দেখছে। শুভেন্দুর আমাদের উপরে আস্থা আছে। এই আন্দোলনকে থামানোর ক্ষমতা নেই কারও। শুভেন্দু এক বার ঘুরে গিয়েছে, তাতেই আন্দোলন এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।
প্রশ্নকর্তা: শুভেন্দুদা তাঁর লোকদের দিয়ে টাকা পাঠালেন, মোবাইল পাঠালেন। সবরকমের সহায়তা করছেন। খালি হাতে তো কিছু হয় না?
গঙ্গাধর: না। খালি হাতে কিছু হবে না।
প্রশ্নকর্তা: দাদা, তুমি জানো আপনারা কী লেভেলের কাজ করেছো! ধর্ষণ হয় নাই। তাকে ধর্ষণ বলে চালিয়েছো! তোমার বাড়ির বৌকে দিয়ে এই কাজ করাতে পারতে? আমরা তো পারব না। দাদা সেখানে বাইরের লোক হয়ে তাদের দিয়ে এই কাজ করিয়েছে। কী ভাবে ওঁদের ব্রেনওয়াশ করলেন?’’
গঙ্গাধর: (হাসতে হাসতে) শুভেন্দুদার নির্দেশেই আমরা এই কাজ করেছি। উনি আমাদের সাহায্য করেছেন। শুভেন্দুদা বলেছেন, এটা না করলে, তাবড় তাবড় লোকদের গ্রেফতার করানো যাবে না। আমরাও ওখানে দাঁড়াতে পারব না।
গঙ্গাধর: শুভঙ্কর গিরি ছেলেটা ভাল ছিল। কিন্তু টাকার গোলমালের জন্য ও পরে হঠে গেল। ও-ই সবার ব্রেনওয়াশ করছিল।
প্রশ্নকর্তা: গোটা বিষয়টি শুভেন্দুদা নিয়ন্ত্রণ করত?
গঙ্গাধর: হ্যাঁ, উনিই সব নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ওঁর পিএ এক বার এসেছিল। পীযূষ না কী যেন নাম। এখানে তো খুব একটা আসত না। শুভঙ্করের হাত ধরে ঘুরে বেড়াত। আমাকে খুব একটা গুরুত্ব দিত না। আমিও দিতাম না। ও যদি আমার সঙ্গে থাকত, শুভঙ্করকে আর লাগত না। আমি শুভেন্দুর পিএ-কে দিয়ে সব করাতাম।
প্রশ্নকর্তা: শুভঙ্কর গিরি কে? ও তো এখানকার বিজেপির কনভেনর? ও-ই ব্রেনওয়াশ করত?
গঙ্গাধর: ও আমাকে দিয়ে বলাত, এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। ধর্ষণের অভিযোগ কী ভাবে কোথায় করতে হবে, আমাকে বলে দিত। আমি সেই মতো কাজ করাতাম।
প্রশ্নকর্তা: মহিলারা রাজি হলেন কী ভাবে? মিথ্যা অভিযোগ লেখাতে কে রাজি করাল? যেটা হয়নি, তা-ও সেটা লিখল সবাই? ‘না’ বলল না?
গঙ্গাধর: ‘না’ বলেনি কেউ। আমরা যা বলেছি, ওরা শুনেছে। ওদের বলেছিলাম, যদি আপনারা অভিযোগ না লেখান, তা হলে আপনাদের এই আন্দোলন সফল হবে না। এখানে আপনাদের টিকতেও দেবে না।
গঙ্গাধর: প্রথমে রেখা অভিযোগ দায়ের করল। তার পর ওকে দেখে অন্য মহিলারাও অভিযোগ করার সাহস পেল।
প্রশ্নকর্তা: এটা কিন্তু আপনার ক্রেডিট দাদা…
গঙ্গাধর: আমি প্রথমে তিন জন মহিলাকে জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। ভয় পেয়ে গেল। এসটি কমিশন এসেছিল। এসে প্রথমেই জবা সিংহের খোঁজ করল। তাতে জবা ঘাবড়ে গেল। এসটি কমিশনার ভাল ছিলেন। বাংলা, আদিবাসী ভাষা সব বলতে পারেন। আমাকে ঘরে রেখে বাকিদের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। মাদুর পেতে বসতে বলেছিলেন। তার পর বলেছিলেন, এসটিদের সমস্যা একটাই, আমি দিল্লি থেকে এত দূর এসেছি, আপনারা আমাকে সত্যি কথা বলতে পারছেন না?
প্রশ্নকর্তা: উনি তো জানতেন না বিষয়টা সাজানো। আসলে জবা ঘাবড়ে গিয়ে কিছু বলতে পারছে না। জবা তো জানে এটা মিথ্যা।
গঙ্গাধর: (হাসতে হাসতে) হ্যাঁ, উনি বলছিলেন, তোমার কোনও ভয় নেই। কেউ তোমাকে কিছু বলবে না। থানা পুলিশের আপনাকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। আমি পাশে আছি। কিন্তু ও ভয় পেয়ে গেল।
প্রশ্নকর্তা: তোমরা ভাল করে ওকে ট্রেনিং দাওনি?
গঙ্গাধর: ট্রেনিং দিয়েছিলাম। ভাল করে নিতে পারেনি। স্টুডেন্ট ভাল ছিল না। অন্যরাও ওকে ভয় দেখিয়েছিল, এটা করলে ফেঁসে যাবে। তাই। কিন্তু আমরা তো বলেছিলাম, সাত আট মাস আগে ধর্ষণ হয়েছে বলতে। তা হলে আর মেডিক্যাল পরীক্ষার ব্যাপার থাকত না। এ সব আমাদের করতে হয়েছে। শুভঙ্কর ওখান থেকে ফোন করত আমি এখানে বসে এ সব করাতাম।
প্রশ্নকর্তা: জবা কার কার নাম নিয়েছিল?
গঙ্গাধর: শাহজাহানের (শাহজাহান শেখ) নাম, উত্তম সর্দারের নাম, শিবু হাজরার নাম।
প্রশ্নকর্তা: দাদা, এটা রাজনীতি। যে কোনও উপায়ে জিততে হবে।
প্রশ্নকর্তা: আপনি আর শান্তনু মিলে সন্দেশখালির আন্দোলনটা টিকিয়ে রেখেছেন!
গঙ্গাধর: হ্যাঁ। এবং শুধু আমরা দু’জনেই জানতাম আমরা কী করছি।
প্রশ্নকর্তা: আপনারা যে ভাবে মহিলাদের ম্যানেজ করেছেন, দেখুন দাদা, এখন আপনার সঙ্গে আমাদের আড়াল করার কিছু নেই।
গঙ্গাধর: এখন তো আর আড়াল-আবডাল কিছু নেই। তা-ও তো ওরা হলে যে অ্যামাউন্ট আপনাদের বলত, আমি কি তা বলেছি? আমি বেশি বলি নি। আমার প্রয়োজন হলে আপনাদের বলব।
প্রশ্নকর্তা: মেয়েরা কি এমনি এমনি বেরিয়েছে? এটা তো পরিষ্কার যে, মেয়েরা ধর্ষিতা হয়নি। তাদের আপনারা এটা বুঝিয়েছেন। এটা তাদের দিয়ে আপনারা করিয়েছেন।
গঙ্গাধর: হ্যাঁ ওদের সঙ্গে বসতে হয়েছিল। কথা বলতে হয়েছিল।
প্রশ্নকর্তা: মেয়েরা কি জবানবন্দি দিয়েছিল? ক’জন দিয়েছিল? রেখা ছাড়া আর কে দিয়েছিল? আপনার কাছে লিস্ট আছে?
গঙ্গাধর: আছে সব লিস্ট। রেখা ছাড়াও অনেকে জবানবন্দি দিয়েছে।
প্রশ্নকর্তা: এটা করতে মেয়েদের রাজি করানো কি কম কথা! এর পর যদি দল আপনাদের সঙ্গে বেইমানি করে, তার চেয়ে খারাপ কিছু হবে না।
গঙ্গাধর: আমাদের এখানে রাজ্য স্তরের নেতারা রয়েছেন। জেলার নেতারাও রয়েছেন। এমনকি, লোকসভার কনভেনরও এখানকার, সন্দেশখালির। বিনা নামের একটা মেয়ে ছিল। জবানবন্দি দিয়েছিল। আমিই ওকে ম্যানেজ করেছি।
গঙ্গাধর: এর মধ্যে এখানকার একটা মেয়ে কোচবিহারে গিয়ে নাকি উল্টো দিয়ে এসেছে শুনলাম। বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছে। ও নাকি বলেছে, আমরা আন্দোলন করেছি, আমরা আর গুরুত্ব পাচ্ছি না। যারা করেনি, তাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোচবিহারে যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাদের কারা সব শিখিয়েছে, আমি জানি না।
প্রশ্নকর্তা: একটা কথা বলুন, মেয়েদের কাছে ইজ্জত সবচেয়ে বড় জিনিস। সেটা নিয়ে তাদের মিথ্যা বলতে হচ্ছে। তার মানে সবাইকে কতটা বোঝাতে হয়েছে। কারণ সারা বাংলাতে জমি দখল তেমন গুরুত্ব পায় না। ধর্ষণ একটা বড় জিনিস।
গঙ্গাধর: এসটি কমিশনার অনন্ত নায়েক এসেছিলেন। যেখান থেকে অভিযোগ হয়েছে, তিনি এসে সরাসরি সেই বাড়িতে ঢুকেছিলেন। কিন্তু মেয়েটাকে যা শিখিয়েছিলাম, ভাল করে বলতে পারেনি। (হাসি)
প্রশ্নকর্তা: আপনারা কী বলতে বলেছিলেন? কী শিখিয়েছিলেন?
গঙ্গাধর: ওকে বলতে বলেছিলাম, ধর্ষণ হয়েছে। ঘাবড়ে গিয়েছিল। সেটা বলতে পারেনি। জবা সিংহ ওর নাম। ও আন্দোলনে আছে এখনও।
প্রশ্নকর্তা: এদেরকে আপনি সঙ্গে রাখুন। লোক দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিল হয়তো। কিন্তু কাজটা করতে রাজি তো হয়েছিল। এরা আবার কাউকে কিছু বলে আপনাকে না ফাঁসিয়ে দেয়। এদের আপনি হাতে রাখুন। এক জনও বেরিয়ে গেলে কিন্তু সর্বনাশ।
গঙ্গাধর: না ওরা কিছু বলবে না। শুভেন্দুদার কথাতেই আমরা সব করেছি। আমার মণ্ডল থেকে ১০-১৫ জন মহিলা আছে, যারা এই অভিযোগ করেছে।
প্রশ্নকর্তা: এদের হাতে রাখুন। জবা, যে ঘাবড়ে গিয়েছিল, তাকে প্রথম তালিকায় রাখুন। এদেরকে টাকা দেওয়া হয়েছিল তো? কে টাকা পাঠিয়েছিল? শুভেন্দুদা?
গঙ্গাধর: হ্যাঁ। শুভঙ্করের মাধ্যমে জবাকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। আমরা ওখানে যাইনি। কত টাকা দেওয়া হয়েছিল, আমরা জানি না। তবে শুনেছিলাম, ভাগাভাগিতে ত্রুটি ছিল।
প্রশ্নকর্তা: কত টাকা করে দেওয়া হয়েছিল?
গঙ্গাধর: দু’হাজার টাকা আমি শুনেছি।
প্রশ্নকর্তা: এত কম? এত কাজ করল? মাত্র দু’হাজার পেল?
গঙ্গাধর: হ্যাঁ। এমনকি, রেখাকেও টাকা দেওয়া হয়েছিল। ও তখনও প্রার্থী হয়নি। ও আর এক জনকে টাকা দিতে বলেছিল। তাকেও টাকা দেওয়া হয়েছিল।
প্রশ্নকর্তা: যাঁরা ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের হাতে রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে কিন্তু।
গঙ্গাধর: হ্যাঁ, সেই জন্যই তো আপনারা এখানে এসেছেন।
প্রশ্নকর্তা: মোট ৬০ জন মহিলা আছেন। প্রত্যেককে হাতে রাখার জন্য তিন হাজার করে দেওয়া হবে। কিন্তু দল পাঁচটি খেপে এই টাকা দিতে চায়। ৭০০, ৬০০, ৫০০, ৫০০— এ ভাবে শেষ দিন পর্যন্ত আমরা দিতে পারি। আমরা বার বার দিতে আসব টাকা। আজকালের মধ্যে একটা দিয়ে দেব। এ মাসের শেষে আর এক বার দেব। সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে একটা, দ্বিতীয় সপ্তাহে একটা এবং তৃতীয় সপ্তাহে একটা দেব। এক এক জন মহিলা পাঁচ ভাগে মোট তিন হাজার টাকা পাবেন। যাঁরা অভিযোগ করেছেন, এবং যাঁদের মুখ টিভি বা ভিডিয়োতে প্রকাশ্যে এসেছে, তাদের আমরা এই টাকা দেব। এদের আগে নিরাপত্তা দিতে হবে।
একই ভিডিয়োতে এর পর জবা সিংহের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছে।
প্রশ্নকর্তা: মিথ্যা কেস দিয়ে কতটা ঝুঁকি নিয়েছেন?
জবা: সারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছি।
প্রশ্নকর্তা: আপনার পাশে দল না দাঁড়ালে দলের পাশে থাকবেন?
জবা: না।
প্রশ্নকর্তা: এক জন মেয়ের কাছে সম্ভ্রম অনেক বড়। দলকে বাঁচাতে ওদের নামে মিথ্যা ধর্ষণের কেস দিয়েছেন। এসসি কমিশন যখন এসেছিল, ঘাবড়ে গিয়েছিলেন?
জবা: ঘাবড়ে গিয়েছিলাম তা নয়। আমাকে বোঝানো ভুল হয়েছে। আমার কাছে কাগজটা আছে। আমি তো এত ইংরাজি জানি না। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছি। কাগজে যা লেখা ছিল, তা আমাকে বোঝানোর কথা ছিল। ওখানে শাহজাহান, শিবু হাজরাদের কথা লেখা ছিল। আমি বুঝিনি। ওই কাগজে লেখা ছিল শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার আমাকে ধর্ষণ করেছে। সেটা আমাকে ভাল ভাবে বোঝানো হয়নি। আমাকে যদি আগে পড়ে বুঝিয়ে দিত, তা হলে আমি রাজি হতাম। রাতের অন্ধকারে কাগজে আমাকে সই করে দিতে বলেছিল। করে দিয়েছিলাম। বুঝতে পারিনি। আমাদের বুথ সভাপতি ছিল। বিজেপির ছেলেরা দিয়েছিল কাগজ। এ দিকে, কমিশনার এসেছেন। সই তো হয়ে গিয়েছে। তার পরে বসিরহাটের বড় বাবু এবং এক জন ম্যাডাম আসেন। আমি বুঝতে পারি যে, বাঁচতে গেলে আমাকে মিথ্যা বলতে হবে। এরা যাতে না ধরা পড়ে আর আমি যাতে বাঁচি। আমি ওদের বললাম, আমি তো ইংরাজি জানি না। পড়াশোনা জানি না। শুধু নামসই জানি। থানার বড় বাবু আমাকে এই কাগজ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন আমি বুঝি, বয়ান না মিললে আমার বিপদ, ছেলেগুলোরও বিপদ। তখন আমার মাথায় এল, আমাদেরই এক তৃণমূলকর্মী আমাকে মেরেছিল। সত্যিই মেরেছিল। আর কাগজে যে ধর্ষণের কথা বলা আছে, সেটা তো আমাকে বলেনি কেউ। কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, আমি তো মিথ্যা বলতে পারি না। আমার বৌদি তখন মাঝে এসে গিয়েছিল। বৌদি বলে, ও বুঝিয়ে কথা বলতে পারে না। বুথ সভাপতি অশোক সই করিয়েছিল। ও নিজেও তো পড়াশোনা জানে না। না হলে তো আমিও একটা কেস ফাইল করতে পারতাম।
প্রশ্নকর্তা: আপনারা কত জন অভিযোগ করেছিলেন?
জবা: এক জন শ্লীলতাহানির মামলা করেছিল। তার বর থানায় গাড়ি চালায়। এখন সে আমাদের ধারেকাছে আসে না। আমার নাম জবারানি সিংহ এবং ওর নাম জবা সিংহ। তিন জন জবা সিংহ রয়েছে।
প্রশ্নকর্তা: আপনাদের মদ পিছু কত টাকা করে দিতে হবে?
গঙ্গাধর: বুথপ্রতি মদের জন্য কত খরচ লাগছে, আপনি হিসাব নিয়ে রাখুন। পাঁচ হাজার করে দিলে হয়ে যাবে। এর থেকে বেশি চাইব না। আগে ভোটটা তো জেতাতে হবে।
প্রশ্নকর্তা: মহিলা, পুরুষ মিলিয়ে পাঁচ হাজার?
গঙ্গাধর: এখানে ৫০টি বুথ। আড়াই লক্ষ টাকার কাছাকাছি লাগবে। মহিলাদের সংখ্যা কম। ছেলেদের সংখ্যা বেশি।
প্রশ্নকর্তা: আর এসটি পাড়াগুলিতে?
গঙ্গাধর: ওরা হাঁড়িয়া খায়। বাংলা ৬০ টাকা করে বোতল। আদিবাসীদের মধ্যে প্রায় সবাই তা-ই খায়। ২০ শতাংশ আদিবাসী মহিলা। আড়াই লক্ষের মধ্যেই মহিলাদেরও ধরা আছে।
প্রশ্নকর্তা: আমরা মহিলাদের দিকেও নজর দিতে চাইছি। কত লাগবে ঠিক করে বলুন।
গঙ্গাধর: এখানে ছেলেদের থেকে মেয়েরা বেশি মদ খায়। ভোটের আগের দিন খাওয়ালে ভোট দিতে পারছে না, এমন যাতে না হয়। অন্য দলও খাওয়াবে।
প্রশ্নকর্তা: ভোট অবধি আপনার কত টাকা দরকার?
গঙ্গাধর: মোটামুটি দু’লক্ষ। আমার টিফিন খরচা ধরে। অতিরিক্ত কাজ না করতে হলে এতেই হয়ে যাবে।
প্রশ্নকর্তা: আগের যে কোরাকাটির ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হল, তিনি কেমন আছেন?
গঙ্গাধর: ওরা এই সব চালানো লোক (পিস্তল ধরার কায়দা করে)।
প্রশ্নকর্তা: মোট ক’টা পিস্তল লাগবে?
গঙ্গাধর: কোরাকাটিতে ৩০টা আর মণিপুরে ২০টা হলেই হবে। ম্যানেজ হয়ে যাবে। আর কোনও অস্ত্র লাগবে না। সন্দেশখালিতে অস্ত্র লাগবে না। যা লাগবে ওই কোরাকাটি আর মণিপুর। আমার লোক তৈরি আছে। চালিয়ে নিতে পারবে। ওই সব ছেলেপুলেদের দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। কোরাকাটি বন্দুকের জায়গা। কার্তুজ ৬০০টা লাগবে। এমনই কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, যারা কাজ সেরে ফেরত দেবে বন্দুকগুলো। দরকার হলে আমার বাড়িতে ডেকে কথা হয়ে যাবে।
প্রশ্নকর্তা: সাবধানে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় চেকিং চলছে। তাই এখানেই কোথাও করতে হবে। ওদের বোঝাতে হবে। না হলে কোনও গোলমাল হলে ওরা আবার রিপোলিংয়ের কথা তুলবে। ভোট যেমন জিততে হবে, তেমন সুরক্ষাটাও দেখতে হবে। সহজে ভোট হবে না।
গঙ্গাধর: হ্যাঁ, সহজে ভোট হবে না। কোনও দিন হয় না। সোজা নেওয়া যাচ্ছে না।
শান্তি দোলুই নামের আরও এক জনকে দেখা যায় ভিডিয়োতে। যাঁর পরিচয় হিসাবে বলা হয়, সন্দেশখালি ১-এর বিজেপি মণ্ডল সভাপতি।
প্রশ্নকর্তা: সরকার ঠিক থাকলে এত কিছু সম্ভব হত? না শুভেন্দুদাকে এই নিয়ে ভাবতে হত, না সিবিআইকে দিয়ে করাতে হত।
শান্তি: হ্যাঁ।
প্রশ্নকর্তা: প্রশাসন থাকলে সব আপনাআপনি ঠিক হত। সাধারণ ভাবে তৃণমূলকে আমরা ফেলতে পারব না। শুভেন্দুদা যদি এই ভাবে বুদ্ধি না করতেন, তা হলে এটা হত না।
শান্তি: হ্যাঁ।
সৌজন্যে ডিজিটাল আনন্দবাজার।