কলকাতা 

রাজ্য কংগ্রেস কর্মীদের কাছে এখনও বিশ্বস্ত সেনাপতির নাম সোমেন মিত্র, একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না

শেয়ার করুন
  • 64
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম :  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কর্মীদের কাছে বিশ্বস্ত সেনাপতি এনিয়ে কোন সন্দেহ। তাঁর জনমোহনী শক্তি নিয়ে কারও কিছু বলার নেই । স্বাধীনতার পর বাংলার যে কয়েকজন নেতা-নেত্রীর জনপ্রিয়তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবেন না তাদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম। মমতাকে বাদ দিলে বাংলার রাজনীতির আঙিনায় কর্মীদের কাছে কিংবা সাধারন মানুষের কাছে রাজ্য রাজনীতির বিশ্বস্ত নেতা-নেত্রীর নাম কেউ একবাক্যে বলতে পারবে ? সাংবাদিক হিসেবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলে এই রাজ্যে মমতার পর বিশ্বাসযোগ্য নেতা তৃণমূল দলে একজনও আছে ?  তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বলতে হয় ২৯৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রে আমিই প্রার্থী। আমাকে আপনারা ভোট দিন। এথেকে স্পষ্ট তাঁর দলেও বিশ্বাসযোগ্য নেতার অভাব রয়েছে।

সাংবাদিক হিসেবে নয় , একান্তই সাধারন মানুষ হিসেবে বিচার করতে বসলে দেখা যাবে এই বাংলায় সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য নেতার অভাব রয়েছে। বিরোধী দলগুলিতে এই অভাব সবচেয়ে বেশি প্রকট । বিজেপি দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখায় তেমন কোন নেতাই নেই যিনি সাধারন মানুষের মন জয় করে নিতে পারেন,কাজের মাধ্যমে। কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যোগাতে পারেন,তেমন নেতা বিজেপি দলের পদাধিকারীদের মধ্যে নেই বললেই চলে । আর সিপিএম দলে আর একটা সুভাষ চক্রবর্তী না জন্মালে এই দলটি মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারবে না। রাজনৈতিক দলের গ্রহণযোগ্যতার নেপথ্যে থাকে সেনাপতির প্রতি কর্মী ও সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা । কর্মীর উপর আঘাত আসলে সেনাপতি এগিয়ে গিয়ে সেই আঘাত বুক পেতে নেবে এটা যে দলের নেতা করতে পারবেন সেই দলই সাধারন মানুষের আপনজন হয়ে উঠবে। স্বাধীনতার আগে থেকেই বামেরা সাধারন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে পেরেছিল বলেই এক সময় জ্যোতিবাবুরা এই রাজ্যের সাধারণ মানুষের আপনজন হয়ে উঠেছিলেন । শাসকের শত অত্যাচারের সেদিন বামেদেরকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি কংগ্রেস।

Advertisement

সিপিএমের পর এই রাজ্যে আর একটি রাজনৈতিক দল আছে সেটা কংগ্রেস। এই দলটি জাতীয় দল হওয়ার সুবাদে বাধ্যবাধকতা মানতে গিয়ে রাজ্যে দলটির অবস্থা করুণ হয়ে পড়েছে । সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছুই নেই দলটির মধ্যে। তবু রাজ্যের সাধারণ মানুষ এখনও আশা করে এই রাজ্যের কংগ্রেস একদিন চাঙ্গা হবে। কারণ, এখনও এই দলের অভিভাবক হিসেবে রয়েছেন সোমেন মিত্র। বয়স হয়েছে, কিন্ত রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তাঁর  প্রকট। তাই তিনি রাহুল গান্ধীকে বলতে পেরেছেন দলের তাৎক্ষনিক সাফল্য চাইলে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করা উচিত,আর দলের দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য চাইলে বামেদের সঙ্গে জোট করা উচিত কিংবা একলা লড়া উচিত।

একথা তো স্বীকার করতেই হবে, এরাজ্যে কংগ্রেস দলকে সাইনবোর্ডে পরিনত করার নেপথ্যে অনেকটা অবদান রয়েছে শাসক তৃণমূলের। তাই তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে আগামী দিনে কংগ্রেস আরও ভাঙতে যে পারে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্ত বামেরা ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও কংগ্রেস দলকে কোনদিন ভাঙানোর চেষ্টা পর্যন্ত করেনি। যাইহোক জোট হবে কী হবে না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্য কংগ্রেসের কোন নেতার নেই।

আমাদের আলোচনার বিষয় হল এই মুহুর্তে কংগ্রেস দলের রাজ্যের নেতাদের মধ্যে কর্মীদের কাছে গ্রহনযোগ্য নেতাকে ? আর সাধারন মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য কংগ্রেস নেতা কে ? নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে হবে । পরের মুখে ঝাল খেয়ে একটা আবোল তাবোল গল্প বানিয়ে দিলেই বিশ্বাসযোগ্য সাংবাদিক কিংবা কলামিষ্ট হওয়া যায় না। কিছু পাওয়ার জন্য সত্য গোপন করে মিথ্যার বেসাতি করলে নিজের বিবেকের কাছেই ছোট হয়ে যেতে হয়। ১৯৭৭ সালে রাজ্য থেকে কংগ্রেস জামানা শেষ হওয়ার পর কার নেতৃত্বে কংগ্রেস প্রথম ঘুরে দাড়িয়ে ছিল ? সেটা বিচার করার সময় এসেছে। গনি খান থেকে অজিত পাঁজা, প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী থেকে প্রনব মুখার্জি পর্যন্ত কেউ কী রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের মনে আশার সঞ্চার করতে পেরেছিলেন যে সিপিএমের মত দলকে টক্কর দিতে পারে কংগ্রেস। উত্তরটা সবার জানা কিন্ত কোথায় যেন এসব লোকেদের বাধো বাধো লাগছে সত্য বলতে । সেই প্রদেশ কংগ্রেস নেতার নাম সোমেন মিত্র । যাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দল একাই ৮2টি আসন পেয়ে সিপিএমকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। যদি ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ভাগ না হত তাহলে হয়তো ২০০১-এ এই কংগ্রেস ক্ষমতায় এসে যেতে পারত । মমতার জনপ্রিয়তা আর সোমেনের সাংগঠনিক দক্ষতাকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যেত তাহলে ১০ বছর আগেই এরাজ্য থেকে বামেরা বিদায় নিত । কিন্ত অনেকেই বলে থাকেন সোমেনরা সিপিএমের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করত, এক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত কংগ্রেস দল জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত নিত । জাতীয় রাজনীতির স্বার্থেই কংগ্রেস হাইকমান্ড সিপিএমের সঙ্গে সর্ম্পক রেখে চলত । আর এই রাজ্যে যিনি কংগ্রেসের নেতা হতেন তিনি স্বাভাবিক নিয়মেই এই সর্ম্পক রাখতে বাধ্য হতেন । সোমেনবাবুরা হাইকমান্ডের নির্দেশ মেনেই এই কাজ করতেন।

সোমেনবাবু প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা হিসেবে দলকে নিজস্ব অফিস করে দিতে পেরেছেন। সিদ্ধার্থশংকর রায় থেকে শুরু করে প্রণব মুখার্জি পর্যন্ত কেউ প্রদেশ কংগ্রেসের নিজস্ব দপ্তর করতে পারেননি । একজন বিধায়ক হিসেবে তিনি সবচেয়ে বড় কাজটি  করে দিয়েছেন তা হল প্রদেশ কংগ্রেসের নিজস্ব ঠিকানা। অনেকেই অবশ্য তাঁর নির্বাচনে হেরে যাওয়াকে নিয়ে কটাক্ষ করছেন , এই কটাক্ষের পেছনে  রয়েছে  অন্যের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা ছাড়া আর কিছুই নয়। ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন বলে তাদের জনপ্রিয়তা কী কমেছে বলে মনে হয়? তেমনি যিনি সাংগঠনিক নেতা তিনি সেই খানেই তাঁর দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবেন। এ কথা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে সুদূর উত্তরবঙ্গের কোন কংগ্রেস কর্মী যদি বিপদে পড়েন তিনি একমাত্র একজন নেতাকেই বিশ্বাস করতে পারেন তিনি হলেন সোমেন মিত্র।

যাইহোক কংগ্রেস দল প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি কাকে করবেন সেটা সর্ম্পূন তাদের বিষয় তবে একথা জোর দিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায় কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থকদের কাছে একটাই বিশ্বাসযোগ্য নাম তা হল সোমেন মিত্র। তিনিই একমাত্র কংগ্রেস নেতা যিনি সর্দার আমজাদ আলি, প্রদীপ ভট্টাচার্যদের মত প্রবীণ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে নবীন নেতৃত্বকে সংযুক্ত করে মৃতপ্রায় রাজ্য কংগ্রেসকে সঞ্জীবনী সুধায় উজ্জীবিত করতে পারেন । আর এই উজ্জীবনের সাফল্য এখনই দেখতে পাওয়া না গেলেও, তবে এক দশক পরেই এ রাজ্যে আবার কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে সোমেন মিত্রের হাত ধরেই ,না হলে এই মৃতপ্রায় কংগ্রেসের জানাযা শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।


শেয়ার করুন
  • 64
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

two × two =