কলকাতা 

নারী পাচার ও দেহ ব্যবসা মামলায় বিচারকের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয় কলকাতা হাইকোর্ট , বিকেলেই বদলী নির্দেশ বিচারককে, তোপের মুখে সরকারি আইনজীবী ও তদন্তকারী অফিসার

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : কলকাতার এক স্পা মালিক এবং সেখানকার কর্মীদের বিরুদ্ধে নারী পাচার এবং দেহ ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে । সেই মামলায় কলকাতা নগর আদালতের মুখ্য বিচারক ওই স্পা মালিককে নোটিশ পাঠিয়ে ঠিক কাজ করেনি বলে কলকাতা হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানীতে মন্তব্য করেন । তারপরেই ওই বিচারককে উত্তরবঙ্গে বদলী করা হয়েছে ।

উল্লেখ্য ,পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকার একটি স্পা-র মালিক মনোজ সাউ এবং সেখানকার মহিলা কর্মীদের বিরুদ্ধে নারী পাচার ও দেহ ব্যবসার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সরকারি আইনজীবী তমালবাবু ১৩ জুন নগর দায়রা আদালতে জানান, তদন্তকারী ভাস্করবাবুকে প্রধান অভিযুক্ত মনোজের বিরুদ্ধে জিজ্ঞাসাবাদের নোটিস পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হোক। মুখ্য বিচারক বিষয়টি নথিভুক্ত করেন। সরকারি আইনজীবী আদালতের কাছে সময় চান। তদন্তকারী অফিসার আদালতে হাজির ছিলেন না। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, মনোজকে নোটিস পাঠানোর সময় দিয়ে কার্যত আগাম জামিন নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। নারী পাচারের মামলায় সরকারি আইনজীবী তমালবাবু তদন্তকারীকে যথাযথ আইনি পরামর্শ দেননি। যা তাঁর দেওয়া উচিত ছিল।

Advertisement

ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, নোটিস পাঠানোর সময় দিয়ে ভুল করেছেন মুখ্য বিচারকও। বিচারক হয়ে এই ধরনের গুরুতর অপরাধের অভিযোগ পেয়ে তাঁর আরও সক্রিয় হওয়া (প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া) উচিত ছিল। নোটিস পাঠানোর সময় তিনি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। তবে মুখ্য বিচারক পরে মনোজের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন।

আদালত জানিয়েছে, তদন্তকারী অফিসার ১৩ জুন আদালতে হাজির ছিলেন না বলে রিপোর্ট পেশ করেছেন মুখ্য বিচারক। অথচ লালবাজারের রিপোর্ট, ভাস্করবাবুকে মুখ্য বিচারক মৌখিক ভাবে ৪১এ ধারায় নোটিস পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় হাইকোর্ট। এই মামলায় স্পা-র কিছু মহিলা কর্মীকেও অভিযুক্তের তালিকায় আনায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

লালবাজার জানায়, ভাস্করবাবুকে ইতিমধ্যে ওই মামলার তদন্ত থেকে সরিয়ে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করার জন্য এক ডেপুটি কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিন কলকাতা হাইকোর্টের কাছে তীব্র ভাবে তিরস্কৃত হলেন কলকাতা নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক। ভর্ৎসনা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি আইনজীবী এবং মামলাটির তদন্তকারী অফিসারকেও। ওই মামলায় প্রধান অভিযুক্তের আগাম জামিনের আবেদন খারিজের সঙ্গে সঙ্গে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি মনোজিৎ মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে মুখ্য বিচারককে সতর্ক করে দিয়েছে। আর সরকারি আইনজীবীর গাফিলতি চিহ্নিত করে নির্দেশের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব-সহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছে। তদন্তকারী অফিসার ভাস্কর মজুমদারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

সোমবার ডিভিশন বেঞ্চের ওই ভর্ৎসনার পরেই কলকাতা নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের রেজিস্ট্রার-পদে বদলি হয়েছেন। ওই মামলার সরকারি আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার ভুল শুধরে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের নির্দেশ আমি সর্বদাই মেনে চলি।’’


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

one × 5 =