দেশ 

সোমবার থেকে নিখোঁজ কাফে কফি ডে-র মালিক ভিজি সিদ্ধার্থ , কর্মীদেরকে লেখা চিঠিতে আয়কর কর্তার হেনস্থা অভিযোগ , অভিযোগ অস্বীকার আয়কর দফতরের

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : সোমবার থেকে খোঁজ মিলছে না। সেতুর উপর গাড়ি থেকে নেমে কোথায় গেলেন কাফে কফি ডে –র মালিক? কফি কিং ভিজি সিদ্ধার্থের রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হওয়া নিয়ে দেশ জুড়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। আর সেই জল্পনা আরও জোরাল হয়েছে নিখোঁজ হওয়ার আগে সিদ্ধার্থের নিজের লেখা চিঠি প্রকাশ্যে আসার পর। তাতে কর্নাটকের এক আয়কর আধিকারিকের বিরুদ্ধে হেনস্থা করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। একইসঙ্গে সিসিডি-র ‘ফুলেফেঁপে’ ওঠা ব্যবসায় তলে তলে যে চরম অর্থ সঙ্কট ঘূণপোকার মতো হানা দিয়েছিল তাও চিঠিতে তুলে ধরেছেন তিনি।

সিদ্ধার্থের লেখা চিঠিটি প্রকাশ্যে আনে সংবাদ সংস্থা এএনআই। সংস্থার বোর্ড অব ডিরেক্টরস ও কর্মীদের লেখা ওই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘গত ৩৭ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে আমাদের সংস্থায় ৩০ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরেছি। অংশীদারিত্ব আছে এমন প্রযুক্তি সংস্থাগুলিতেও আরও ২০ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও, লাভজনক ব্যবস্থার উদাহরণ আমি তৈরি করতে পারিনি।’

Advertisement

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিদ্ধার্থ লিখেছেন, ‘আমি আমার সর্বস্ব দিয়েছি। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু, যাঁরা আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন তাঁদের জন্য আমি দুঃখিত। আমি দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই চালাচ্ছি। কিন্তু, আজ হাল ছেড়ে দিচ্ছি। কারণ, আমি আর চাপ সহ্য করতে পারছি না। এখন শেয়ার ফেরত দেওয়ার জন্যে প্রাইভেট ইক্যুইটি অংশীদাররা চাপ দিচ্ছে। এক জন বন্ধুর কাছ থেকে মোটা টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। ৬ মাস আগে সেই ধার কিছুটা শোধ করেছি। কিন্তু, অন্য ঋণদাতাদের তীব্র চাপ আমাকে এই পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। আয়কর দফতরের পূর্বতন ডিজিও আমাকে অনেক হেনস্থা করেছিলেন। তিনি আমাদের মাইন্ডট্রি চুক্তি আটকানোর জন্য দু’বার চেষ্টা করেছিলেন। আমাদের কফি ডে-র শেয়ারের দখল নেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন। যদিও, আমরা সংশোধিত আয়কর নথি দিয়েছিলাম। আর এর ফলেই সংস্থায় তীব্র আর্থিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে।’

ঠিক কোন ‘পরিস্থিতি’র দিকে তাঁকে ‘ঠেলে দেওয়া হয়েছে’ তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি সিদ্ধার্থ। চিঠিতে তাঁর সংস্থার কর্মীদেরও বার্তা দিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, ‘আপনারা শক্ত হন। নতুন ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যান। সব ভুলের জন্য আমিই দায়ী। আমার দায়িত্বেই প্রতিটি আর্থিক লেনদেন হয়েছিল। এ ব্যাপারে সংস্থার কর্তারা বা আমার পরিবার কিছু জানে না। কাউকে ঠকানো বা কাউকে বিপথে পরিচালিত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। এক জন উদ্যোগপতি হিসেবে আমি ব্যর্থ’।

কর্নাটকের চিকমাগালুরে সিদ্ধার্থের পরিবারের কফি ব্যবসা প্রায় ১৪০ বছরের পুরনো। ১২ হাজার একর জমির উপর তৈরি কফি ফার্ম। বলা যায়, দেশের কফি সাম্রাজ্যের বাদশা তিনি। এক সময়ে শেয়ার বাজারের সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন সিদ্ধার্থ। তা সত্ত্বেও কী ভাবে বাজারের উত্থান-পতনের অলিতে-গলিতে হারিয়ে গেলেন তিনি?

১৯৯৬ সালে বেঙ্গালুরুর জনবহুল ব্রিগেড রোডে দেশের প্রথম কফি চেন সিসিডি তৈরি করেন তিনি। তা আজ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশেই। এ ছাড়াও, প্রযুক্তি সংস্থা, রিসর্ট-সহ একাধিক ব্যবসা রয়েছে তাঁর। ২০০৩-’০৩ সালে দেশ জুড়ে ব্র্যান্ড তৈরির ব্যাপারে ইকনমিক টাইমসের সেরা ব্যবসায়ীর পুরস্কারও পান তিনি।

সংস্থার বাইরের চেহারা আর চিঠিতে নিজের ব্যবসার যে সব কথা সিদ্ধার্থ তুলে ধরেছেন তা একদম বিপরীত। ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠে, অন্তত ৬৫০ কোটি টাকার আয়কর তিনি ফাঁকি দিয়েছেন। এ নিয়ে কর্নাটক ও গোয়ার আয়কর বিভাগ বেঙ্গালুরু, মুম্বই, চিকমাগালুর, চেন্নাই-সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযানও চালায়। ধার মেটাতে চলতি বছরেই মাইন্ডট্রি নামে একটি সংস্থায় তাঁর দখলে থাকা ২০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন সিদ্ধার্থ। কিন্তু, সঙ্কট যে এত গভীর পৌঁছে গিয়েছিল তা আঁচ করতে পারেননি অনেকেই। সিদ্ধার্থ নিখোঁজ হওয়ার খবরে মঙ্গলবার স্টক এক্সচেঞ্জে সিসিডি-র শেয়ারের দাম বেশ খানিকটা পড়ে যায়।

এদিকে ,কর্ণাটকের আয়কর দফতর এক বিবৃতি জানিয়েছে , তারা কোনোভাবেই সিদ্ধার্থকে চাপ সৃষ্টি করেনি । আইন মেনেই তার প্রতি আয়কর দফতর যা করার করেছে । বেআইনি কিছু করেনি । ( সৌজন্যে ডিজিটাল আনন্দবাজার)

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

9 + twenty =