কলকাতা 

হুগলী মাদ্রাসা পুনরায় চালু করার দাবিতে ১৯ সেপ্টেম্বর মহা সমাবেশের ডাক দিল মুসলিম সংগঠনগুলি

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বিশেষ প্রতিনিধি : ১৮১৭ সালে দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসীনের দান করা সম্পত্তিতে ইসলামী শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে স্থাপন করা হয়েছিল হুগলী মাদ্রাসা । সময়ের বিচারে দেখা যাচ্ছে ওই একই সময়ে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে হিন্দু স্কুল। সমসাময়িক হয়েও কালের গ্রাসে নয়, স্বাধীন ভারতের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকারের আমলেই হাজী মুহাম্মদ মহসীনের স্বপ্নের সমাধি ঘটেছে । অথচ এই মাদ্রাসাটি বাংলার নবজাগরণের অন্যতম প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা ছিল। তা হয়নি। বাম আমলে এই মাদ্রাসাটি বন্ধ করার সব রকম প্রচেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত তৎকালীন সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী আবদুস সাত্তারের হস্তক্ষেপে মাদ্রাসাটি বন্ধ না হয়ে অন্তত চালু ছিল । আজকে এই মাদ্রাসার প্রাঙ্গনে যে ইংরেজি মাধ্যম প্রাথমিক বিভাগ খোলা  হয়েছে  সেটা ছিল বাম আমলেরই সিদ্ধান্ত। এই মাদ্রাসার ইতিহাস বলছে, ইংরেজরা কোনদিন এর প্রতি অবহেলা দেখায়নি। বরং এই মাদ্রাসাটিকে সেই সময় বাংলার অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল ব্রিটিশরা।

যাইহোক আবদুস সাত্তারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাদ্রাসাটিকে সচল রাখার উদ্দেশে হুগলী মাদ্রাসাকে মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের অধীনে আনা হয়। এর আগে পর্যন্ত হুগলী মাদ্রাসায় একমাত্র মাদ্রাসা যা স্কুল শিক্ষা দপ্তরের অধীনে ছিল । এখানে শিক্ষক থেকে যাবতীয় নিয়োগ প্রক্রিয়া হত পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। বাম আমলে এই মাদ্রসাটিতে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক ছিল না। কিন্ত বন্ধ করা হয়নি বলে মুসলিম নেতাদের অভিযোগ। মুসলিম নেতাদের দাবি বাম সরকারের পতন হওয়ার পর তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরই মাদ্রাসাটির কফিনে শেষ পেরেক পোতা হয়েছে । যা এতদিন ধরে বামেরা করতে পারেনি, মাত্র কয়েক বছরের শাসনে মা-মাটি-মানুষের সরকার তা করে দেখিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

এই মাদ্রাসাটি বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় মুসলিমরা যখন আন্দোলন করছেন ঠিক তখনই ১৭ জুন ২০১৫ সালে ওই মাদ্রাসার প্রাঙ্গনে গিয়ে হাজির হন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য ও লকেট চ্যাটার্জিরা । বিজেপি নেতারাও সেদিন মাদ্রাসটি অবিলম্বে খোলার দাবি জানিয়েছিলেন। এরপরেই ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই মাদ্রাসা পরিদর্শনে যান শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি । তাঁর কাছে অল বেঙ্গল মাইনোরিটি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে আবু আফজল জিন্নাহ অনুরোধ করেছিলেন বামেরা মাদ্রাসাটিকে বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, আপনারা অন্তত চালু রাখার ব্যবস্থা করুন। ছাত্র আমরা জোগাড় করে দেব। সেদিন পার্থবাবু আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্ত কথা রাখেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন আবু আফজল জিন্নাহ।

আজ মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি বিদ্যালয়ে হুগলী মাদ্রাসাকে পুনরায় চালু করার দাবিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয় । এই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে মা-মাটি-মানুষের সরকার ঐতিহ্যবাহী এবং বাংলার নবজাগরনের অন্যতম পীঠস্থান হুগলী মাদ্রাসাকে বন্ধ করে দিয়ে রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ করেছে। দু মাস ধরে রাজ্যের সব জেলাগুলিতে হুগলী মাদ্রাসার করুণ পরিনতি নিয়ে সভা করা হবে বলে আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর হুগলী মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে মাদ্রাসাটিকে অবিলম্বে খোলার দাবিতে বিশাল সমাবেশের করবেন মুসলিম নেতারা। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন মুসলিম সংরক্ষণ মোর্চার নেতা আবু রিদা, অল বেঙ্গল মাইনোরিটি অ্যাসোসিয়েশনের আবু আফজল জিন্নাহ, নাজিবুল হক মল্লিক, ফুরফুরা শরীফ আহলে সুন্নাতুল জামাতের সম্পাদক, ফুরফুর শরীফের পীরজাদা নওসাদ সিদ্দিকী, আবদুল্লাহ হিল মারুফ, ইমতিয়াজ আহমেদ মোল্লা ও আইনজীবী আনিসুর রহমান প্রমুখ। এদিনে সভায় সব বক্তাই বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখন যা বলা হচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয় । এর আগে সংখ্যালঘু দপ্তরের আধিকারিকরা নানা বিষয়ে আশ্বস্ত করলেও শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে তা হয়নি। হুগলী মাদ্রাসাকে স্বমহিমায় আগের চেহারায় ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে এদিনের সভায় ঠিক হয়েছে।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

thirteen + 18 =