কলকাতা 

“পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন মন্ত্রী নেই,অথচ আমরা এজলাসে বসে তাঁর ক্ষমতা টের পাচ্ছি, বেশ বুঝতে পারছি এর কারণ কী’’: কলকাতা হাইকোর্ট

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা বারবার দাবি করছিলেন বিচার প্রক্রিয়া এখনো শুরু করতেই পারেনি সিবিআই। আর এটা নিয়েই কলকাতা হাইকোর্টে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন করেছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রীর আইনজীবী। জামিনের আবেদন করার পরেই সিবিআই এর কাছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানতে চায়, কেন বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা গেল না। আর এর উত্তর দিতে গিয়ে রীতিমত সত্য কথাটা বেরিয়ে আসে। জানা যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া একাধিক সরকারি আধিকারিক এর বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা যায়নি কারণ রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক অনুমতি দেননি। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে জানতে চান কেন অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না?

আর এতেই দেখা গেল বিপত্তি পর পর তিনবার জানতে চাওয়ার পরেও কোন উত্তর দিল না রাজ্যের মুখ্য সচিব। গত সপ্তাহে এই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছিল,এটাই শেষ সুযোগ না এলে কড়া পদক্ষেপ নেবে আদালত।

Advertisement

বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি ছিল পার্থ-সহ এসএসসির দুই প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং অশোক কুমার সাহার।  এদিন রাজ্যের মুখ্যসচিবকে তাঁর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যসচিবকে তাঁর দায়িত্ব পালন করাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে আদালত। তিন বার তাঁকে আদালত নিজের মতামত জানানোর সুযোগ দিয়েছে। চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে। তার পরেও তিনি আদালতের নির্দেশ মানেননি।’’ রাজ্যের তরফে আদালতে হাজির ছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল। তাঁকেই বিচারপতি বাগচী প্রশ্ন করেন, ‘‘এটা কি নেহাতই আমলাতন্ত্রের আলস্য? না কি এর নেপথ্যে অন্য অঙ্ক কাজ করছে?’’

বিচারপতি বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের বেঞ্চে চলছিল শুনানি। ডিভিশন বেঞ্চের এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের এজি আরও সাত সপ্তাহ সময় চান আদালতের কাছে। তিনি বলেন, রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিককে আরও কিছুটা সময় দেওয়া হোক। সেই আর্জি শোনামাত্রই বেঞ্চ ভর্ৎসনা করে বলে, ‘‘কেন আরও সাত সপ্তাহ সময় চাই? এটা কি বিচারপ্রক্রিয়াকে দেরি করানোর কৌশল? আমরা নির্দেশ দিচ্ছি, মানা হচ্ছে না। বার বার ইচ্ছাকৃত ভাবে একই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। মুখ্যসচিব তো আমাদের বাধ্য করছেন কড়া পদক্ষেপ করতে।’’

এর পরে আদালত ভর্ৎসনার সুরেই মুখ্যসচিবের উদ্দেশে বলে, ‘‘তাঁর উপর তো কোনও কিছু জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি বা কিছুতে বাধ্য করা হয়নি। তাঁকে বলা হয়েছে সিদ্ধান্ত জানান। অথচ তিনি সেটাই জানাতে পারছেন না। গণতন্ত্রে এক জন উচ্চপদস্থ আধিকারিকের এই ভূমিকা আশা করা যায় না। মুখ্যসচিব যদি এর পরে অনুমতি না দেন, তাতেও আমরা অবাক হব না। এখন তো এটা একটা প্রাতিষ্ঠানিক ষড়যন্ত্র বলে মনে হচ্ছে। অভিযুক্তেরা এতই প্রভাবশালী যে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কলম উঠছে না? ’’

বিস্মিত বিচারপতি এর পরেই বলেন, ‘‘ভাবা যায় এমন অবস্থা! এখানে আদৌ স্বচ্ছ নিরপেক্ষ বিচার সম্ভব কি না তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন মন্ত্রী নেই। অথচ আমরা এজলাসে বসে তাঁর ক্ষমতা টের পাচ্ছি। বেশ বুঝতে পারছি এর কারণ কী।’’

আদালতে তখনও পার্থদের জামিন নিয়ে শুনানি শেষ হয়নি। বিচারপতি পার্থদের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনার যখন গোপন বন্ধু আছেন, তারাই তা হলে আপনার জামিনের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। আমাদের জামিনের আর্জি তা হলে খারিজ করে দিতে হবে।’’ আদালতের এই মন্তব্য শুনে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার কথা বলেন রাজ্যের এজি। আদালত জানিয়ে দেয়, শুক্রবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সেখানেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ