চার বছর পর মেয়ের সঙ্গে দেখা জেলবন্দী মায়ের আবেগে ভাসলো আসনসোলের সংশোধনাগার!
স্বামীকে খুনের দায়ে জেল খাটছেন স্ত্রী। ছোট্ট মেয়ে বড় হচ্ছে ঠাকুরমার কোলে। পরিবারের লোকজন মাঝেমধ্যে সংশোধনাগারে গিয়েছেন মহিলার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু প্রায় সাড়ে চার বছর মেয়েকে চোখের দেখা দেখেননি মা। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে শেষমেশ কিছু ক্ষণের জন্য নাবালিকা মেয়েকে দেখার সুযোগ পেলেন আসামি। কান্নায় ভেঙে পড়লেন দু’জনেই। মা-মেয়ের কান্নায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন করাগারের রক্ষী থেকে আমলারা। চোখ ভেজে তাঁদেরও। শুক্রবার এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল আসানসোল সংশোধনাগার।
কয়েক বছর আগে আসানসোলের সালানপুরের খুন হন এক যুবক। স্বামীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন স্ত্রী। তার পর থেকে আসানসোল সংশোধনাগার তাঁর ঠিকানা। পুত্রকে খুন করেছেন বৌমা, এই অভিমানে শ্বশুর-শাশুড়ি কেউই সংশোধনাগারে যান না। তবে নাতনি বড় হচ্ছে তাঁদেরই কাছে। বাপের বাড়ির কেউ কোনও সময়ে দেখা করতে গেলে তাঁদের কাছ থেকেই ছোট্ট মেয়ের খবরাখবর নিতেন জেলবন্দি মা। মেয়েকে দেখবার জন্য বেশ কয়েক বার সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন তিনি। অবশেষে সেই সুযোগ এল শুক্রবার।
আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছিল কারাবন্দিদের সঙ্গে পরিবারের সাক্ষাৎ করানো হবে। ওই উদ্যোগের ফলে প্রায় চার বছর পরে মেয়েকে চোখের দেখা দেখতে পেলেন মা। পেলেন মেয়েকে জড়িয়ে ধরার সুযোগও। সংশোধনাগারের এক কর্মীর কথায়, ‘‘মাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে মেয়ে। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। মেয়েটিও অঝোরে কাঁদতে থাকে। এই দৃশ্যে অনেকেই কেঁদে ফেলেছি।’’ আসানসোল সংশোধনাগারের সুপার চান্দ্রেয়ী হাইত-ও সেই কথা বলছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন পরে মায়ের সঙ্গে দেখা। মনের সব কথা মাকে বলতে গিয়ে মেয়েটি যে ভাবে কাঁদতে থাকে, তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। ওই দৃশ্যে আমরাও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।’’
চান্দ্রেয়ী জানান, আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস উপলক্ষে শুক্রবার জেলা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে পাঁচটি পরিবারকে সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন বন্দিদের সঙ্গে কিছু ক্ষণ সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এত দিন পরে পরিবারকে কাছে পেয়ে আবেগে ভাসেন পাঁচ বন্দি। বিশেষ করে বাড়ির খুদে সদস্যদের দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি বন্দিরা। সংশোধনাগারের সুপারের কথায়, ‘‘মা ও ছোট্ট মেয়েকে এত দিন পর সাক্ষাতের সুযোগ করে দিতে পেরে আমরা খুশি।’’ সৌজন্যে ডিজিটাল আনন্দবাজার।