“জিয়াগঞ্জে গোমাংস বিক্রির জন্য কিশোরকে গণপ্রহার, অপরাধীদের উপযুক্ত আইনী বিচার করতে হবে”: তায়েদুল ইসলাম
বিশেষ প্রতিনিধি : গোমাংস বিক্রির কারণে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে ১৯ বছরের রহমতুল্লাহর উপর বর্বরোচিত গণপিটুনির ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছে সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া। এসডিপিআই এর জাতীয় সম্পাদক তায়েদুল ইসলাম গতকাল ১৩ মে রহমতুল্লাহর রমনা গ্ৰামের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং দলের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার পাওয়ার লড়াইয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
তায়েদুল ইসলাম বলেন, “গো-মাংস বিক্রির অভিযোগে ১৯ বছর বয়সী এক ছাত্রকে প্রকাশ্যে মারধর করে হত্যার চেষ্টা—এটা কেবল একটি অপরাধই নয়, বরং পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের বিপজ্জনক বাস্তব রূপ। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মতো এখন বাংলাতেও দ্রুতগতিতে সাম্প্রদায়িক উগ্রতা ছড়িয়ে পড়ছে। তৃণমূল সরকার যদি এখনই কড়া হাতে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে শান্তিপূর্ণ বাংলাকে অচিরেই দাঙ্গাবিধ্বস্ত রাজ্যে পরিণত হতে সময় লাগবে না।”
ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, রহমতুল্লাহ তার পারিবারিক মাংস ব্যবসায় অংশ নিয়ে গত ১১ মে রবিবার জিয়াগঞ্জ শহরে গো-মাংস বিক্রি করছিল। সেই সময় ভট্টপাড়ার ঘোষ সম্প্রদায়ের ২০-২৫ জন যুবক তাকে ঘিরে বেধড়ক মারধর করে। কিল-চড়-লাথি থেকে শুরু করে গাছের ডাল দিয়ে আঘাত করা হয়, যার ফলে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে একাধিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রাণে বাঁচে সে। এফআইআর-এ পাঁচজনের নাম উঠে এসেছে, যাদের মধ্যে এক জনকে ইতিমধ্যেই গ্ৰেফতার করেছে পুলিশ।
তায়েদুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি শুধু একটি গণপ্রহারের নয়, বরং গোটা মুসলিম সমাজের ওপর আতঙ্ক সৃষ্টির চক্রান্ত। রহমতুল্লাহর বাবা ও দাদো জীবনের ভয়ে তাকে বাঁচাতে পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারেননি—এটা এক অসুস্থ সমাজব্যবস্থার দৃষ্টান্ত। তবে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সেই তিনজন সাহসী মহিলাকে, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হিংস্র ভিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে এক তরুণকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা প্রকৃত অর্থে বাংলার সম্প্রীতির প্রতীক।”
তিনি আরও বলেন, “এনাতুলিবাগ ও ভট্টপাড়ার মতো এলাকায় এখন মুসলিম বাড়িতে বাড়িতে হেনস্থা, হাঁড়ি-পাতিল পরীক্ষা করা, গালিগালাজ ও জিনিসপত্র ভাঙচুর করা রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা স্পষ্টভাবে একটি সংগঠিত ফ্যাসিস্ট আগ্রাসন। এই ধরনের সন্ত্রাস বন্ধে তৃণমূল সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তায়েদুল ইসলাম হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির ঐতিহ্য রক্ষার জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বাংলার মানুষ বরাবর মিলেমিশে থেকেছে। কিন্তু এখন কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন সেই ঐতিহ্য ধ্বংস করতে চাইছে। বাংলার মুসলমান সহ সকলকে একজোট হয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”