কর্নেল সুফিয়া কুরেশিকে নিয়ে মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর কুমন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় অসংবেদনশীল,এফআইআর খারিজ করতে অস্বীকার সুপ্রিম কোর্টের
বিশেষ প্রতিবেদন : ভারতীয় সেনা অফিসার কর্নেল সোফিয়া কুরেশি সম্পর্কে কুমন্তব্য করার জন্য মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহকে বৃহস্পতিবার ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। সেনা অফিসার কর্নেল কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ বলেছিলেন বিজেপির মন্ত্রী শাহ। প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের পর্যবেক্ষণ, শাহের এই মন্তব্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়, অসংবেদনশীল। মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট ওই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে সুপ্রিম কোর্ট। অন্য দিকে, মধ্যপ্রদেশ পুলিশ যে ভাবে এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করেছে, তা নিয়ে ধমক দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি গবই মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘‘কী ধরনের মন্তব্য করছেন? আপনার অন্তত একটু সংবেদনশীলতা দেখানো উচিত। যান, গিয়ে হাই কোর্টে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন।’’ কর্নেল কুরেশির বিরুদ্ধে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তার নিন্দা করেছেন বিরোধী দলগুলির নেতারা। এমনকি, বিজেপি নেতাদের একাংশও নিন্দায় সরব হয়েছেন। শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে হাই কোর্টের নির্দেশে। গ্রেফতারি এড়াতে অন্তর্বর্তী সুরক্ষা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন শাহ। হাই কোর্টের সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘আপনার এক দিনে কিছুই হবে না। আপনি ভাল করেই জানেন, কে আপনি।’’

অন্য দিকে, মধ্যপ্রদেশ পুলিশকে ধমক দিয়েছে হাই কোর্ট। হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এফআইআর কি পড়েছেন? অপরাধ যে হয়েছে, সেই বিষয়টি কোথায়?’’ বেঞ্চের আরও পর্যবেক্ষণ, ‘‘এমন ভাবে এফআইআরের খসড়া তৈরি করা হয়েছে যে, তা খারিজ হয়ে যেতে পারে। এফআইআরে কিছুই নেই।’’ এর পরেই পুলিশকে আদালতের নির্দেশ, রাজ্যের মন্ত্রী যা করেছেন, তা বিশদে জানাতে হবে এফআইআরে।
ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন কর্নেল কুরেশি। এই অভিযানের খবর নিয়মিত সংবাদমাধ্যমের সামনেও তুলে ধরেছিলেন তিনি। তাঁর প্রসঙ্গেই বিজেপির মন্ত্রী বিজয় বলেছিলেন, ‘‘যারা আমাদের মা-মেয়ের সিঁদুর মুছে দিয়েছে, তাদের বোনকেই ব্যবহার করে হামলাকারীদের শায়েস্তা করেছি। মোদীজি ওদের বোনকে দিয়েই উচিত শিক্ষা দিয়ে দিয়েছেন। মোদীজি তো আর ওদের মতো ব্যবহার করতে পারেন না। তাই ওদের সম্প্রদায়ের বোনকে দিয়েই ওদের বারোটা বাজিয়েছেন।’’
বিজয়ের ওই মন্তব্যকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সরব হয় কংগ্রেস। বিতর্কের মুখে বিজয় বলেন, ‘‘আমার কথায় যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তা হলে ১০ বার ক্ষমা চাইতেও রাজি আমি।’’ তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেয় জবলপুরে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। সেই নির্দেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।