স্বাধীন ভারতে এই প্রথম! রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়াই ১০ টি বিল আইনে পরিণত হলো! রহস্য?
বিশেষ প্রতিনিধি : স্বাধীন ভারতের প্রথম রাজ্যপাল বা রাষ্টপতির অনুমোদন ছাড়া বিল আইনে পরিণত হলো। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দশটি বিল তামিলনাড়ুর বিধানসভায় পাস হওয়া আইনে পরিণত হয়েছে। এই দশটি দিলেই বিগত কয়েক বছর ধরে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল সই করছিলেন না। ২০২০ সাল থেকে রাজ্যের রাজ্যপাল আরএন রবি তাতে সম্মতি দেননি। ফলে বিলগুলি আইনে পরিণত করা যায়নি। এ বার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে সে রকমই ১০টি বিল আইনে পরিণত হল, রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সই ছাড়াই। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম বার এমনটা হল।
তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে বিধি স্মরণ করিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, বিধানসভায় পাশ হওয়ার পরেও সেই বিল আটকে রাখা বৈধ কাজ নয়। বিচারপতি জেবি পারদিওয়াল এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ গত ৮ এপ্রিল জানায়, বিলের কোনও আইনি বিষয়ে আপত্তি থাকলে, তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন রাজ্যপাল। তবে বিলটি পুরনো আকারেই আবার বিধানসভায় পাশ করানো হলে, তাতে রাজ্যপাল সম্মতি দিতে বাধ্য। আর বিলে সাংবিধানিক বিচ্যুতি ঘটেছে, এমনটা মনে করলেই কেবল সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন রাজ্যপাল। এ ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে যে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরামর্শ মেনেই চলতে হবে, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সু্প্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। তিনি এ-ও বলেন, ‘‘ভারতের সব রাজ্যের জন্য এটা বড় জয়।’’ সেই পর্যবেক্ষণের পরে এ বার তামিলনাড়ু সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ১০টি বিলে সম্মতি দেননি রাজ্যপাল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তাঁর সেই সিদ্ধান্ত অবৈধ। এর ফলে ১০টি বিল আইনে পরিণত হয়েছে। যে নতুন আইন কার্যকর হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে তামিলনাড়ু বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধিত) আইন ২০২২, তামিলনাড়ু ফিশারিস বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধিত) আইন ২০২০, তামিলনাড়ু বিশ্ববিদ্যালয় আইন (দ্বিতীয় সংশোধিত) ২০২২। এই আইন পাশ হওয়ার ফলে স্ট্যালিন সরকার এখন রাজ্য সরকারি ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবে। আগে এই ক্ষমতা ছিল আচার্য তথা রাজ্যপালের হতে। তবে এখনও সে রাজ্যের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য মনোনীত করতে পারবেন রাজ্যপাল। প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে টানাপড়েন চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং রাজ্যপালেরও।
তামিলনাড়ু সরকারের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়েছিলেন ডিএমকের রাজ্যসভার সাংসদ পি উইলসন। নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পরে তিনি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘ইতিহাস তৈরি হল। এই প্রথম রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির সই ছাড়া কোনও বিল আইনে পরিণত হল। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের কারণে।’’ ডিএমকে সরকার যখন সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যপালের বিল আটকে রাখা নিয়ে পিটিশন দায়ের করেছিল, সে সময় ১২টি বিল ঝুলে ছিল। তার পরে ১০টি বিল পর্যালোচনার জন্য তামিলনাড়ু বিধানসভায় ফেরত পাঠিয়ে দেন রাজ্যপাল। বাকি দু’টি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছিলেন। পর্যালোচনার পরে ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর আবার সেই বিলগুলি রাজ্যপাল এন রবির কাছে পাঠিয়েছিল স্ট্যালিন সরকার। তাঁর সম্মতির জন্য। যদিও রাজ্যপাল ১০টি বিলই রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। রাষ্ট্রপতি সাতটি বিল আটকে রাখেন। একটিতে সম্মতি দেন। বাকি দু’টি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করে জানায়, কোনও বিল নিয়ে বিধানসভায় দু’বার আলোচনা হলে এবং তার পরে সেখানে ছাড়পত্র মিললে, সংবিধান মেনে সেই বিল আটকে রাখার আর অধিকার নেই রাজ্যপালের। তার পরেই সুপ্রিম কোর্ট তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে সাংবিধানিক বিধি স্মরণ করায়।
সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণে এ-ও জানায় যে, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল এক থেকে তিন মাস বিবেচনার জন্য আটকে রাখতে পারবেন রাজ্যপাল। আবার রাজ্যপালের আটকে রাখা বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতিও তিন মাস সময় পাবেন। শীর্ষ আদালত পর্যবেক্ষণের প্রতিলিপি দেশের সকল হাই কোর্ট এবং সব রাজ্যের রাজ্যপালের প্রিন্সিপাল সচিবকেও পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।