তাপসী চলে যাওয়ার পর ভাঙনের আশঙ্কায় বঙ্গ বিজেপি কাঁপছে! মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করা দূর অস্ত?
সেখ ইবাদুল ইসলাম : ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে নাকি এই রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতাচ্যুত করবেন শুভেন্দু অধিকারী বলে বিভিন্ন সভায় তিনি দাবী করছেন। অবশ্য এইসব দাবির পেছনে শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক হতাশায় প্রকাশ পাচ্ছে। যেমন ধরুন গতকাল ১০ই মার্চ সোমবার বিরোধী দলনেতার ঘরে বসে দুপুরের খাবার খেলেন যে বিধায়ক সেই বিধায়ক কিছুক্ষণ পরে তৃণমূল ভবনে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন। শুভেন্দু অধিকারী যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে সরাতে চান তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পেলেন না তারই জেলার বিধায়ক তাপসী মন্ডল তৃণমূলের যোগ দিতে যাচ্ছেন বিধানসভা থেকে!
বিরোধীদলের এই যখন অবস্থা তখন সেই বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের গুরুত্ব কতখানি তা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবেই। তিনি সংবাদ মাধ্যমে হুংকার দিলেও কার্যত এই রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিজেপিকে পরিচালনা করছেন তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তৃণমূল নেত্রী যদি মনে করেন এই রাজ্যে বিজেপির একজনও বিধায়ক বিজেপিতে থাকবে না আমার মনে হয় তিনি সেটাও করে দেখাতে পারেন। ওই যে মুকুল রায়ের বিখ্যাত উক্তি যে তৃণমূল সেই বিজেপি। তারপরে শুভেন্দু অধিকারী ী হুংকার দিচ্ছেন আর কিছু মিডিয়া সেই হুংকারের খবর ফলাও করে প্রচার করছে। কিছুই ইউটিউবার শুভেন্দু অধিকারীকে বাংলার আরেক চাণক্য বলে অভিহিত করছেন আমরা শুনছি দেখছি এবং অসংখ্য মানুষ দেখছেন কিন্তু কেউ প্রভাবিত হচ্ছেন না। ভোটের ফলাফল সব সময় মমতার পক্ষে যাচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত শুভেন্দুর হুংকার সার হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কোন কাজে লাগছে না। আগামী বছর নবান্ন থেকে মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু বাস্তব বলছে আগামী বছর তিনি কি নন্দীগ্রাম থেকে জিততে পারবেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো তো দুরস্ত ৩০ টার বেশি আসন কী বিজেপি পাবে! বাংলা জুড়ে হিন্দু মুসলিম মেরুকরণ করার চেষ্টা করার এই প্রয়াস কি সফল হবে? সবচেয়ে বড় কথা গতকাল তাপসী মন্ডলের চলে যাওয়ার পর আর কতজন বিধায়ক বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে যাচ্ছেন সেই খবরটা কি রাখেন শুভেন্দু অধিকারী? বিধায়ক সংখ্যা কমে 65 হয়েছে এবার আরো কমপক্ষে 10 থেকে 12 জন তৃণমূলের যাওয়ার জন্য লাইনে রয়েছেন। দক্ষিণ বঙ্গ উত্তর বঙ্গ থেকে শুরু করে মতুয়া সম্প্রদায়ের কয়েকজন বিধায়ক বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের যোগ দিতে যাচ্ছেন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই রাজ্যে বিজেপি সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে গেলেন। অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। শুভেন্দুর উদাত্ত আহবান হিন্দু এবং জনজাতিদের ভোটে তিনি এবং বিজেপি এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে চলেছে। অর্থাৎ এর রাজ্যের ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটকে তিনি ব্রাত্য করতে চাইছেন। মুসলিম ভোটকে বাদ রেখেই এই রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু বাস্তব হল সমস্ত হিন্দু ভোট কোনভাবেই মেরুকরণ হয়ে বিজেপিতে যাবে না। উত্তর প্রদেশ মধ্যপ্রদেশ গুজরাট ছত্রিশগড় এবং উত্তরাখন্ডে যা ঘটতে পারে তা বাংলায় ঘটবে না। এই সহজ সত্য উপলব্ধি করতে যে শুভেন্দু অধিকারী পারেন না তা নয় তিনি সবই বোঝেন কিন্তু ইচ্ছা করে এরা যে তৃণমূলকে এককভাবে ময়দানের ছেড়ে দেওয়ার জন্যই তিনি এই কাজ সমানে করে চলেছেন।
তাই বলতে ইচ্ছা করে গড়বি পরে বাংলা দল আগে সামলা! মমতাকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার আগে শুভেন্দু অধিকারী উচিত নিজের দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং দল থেকে কোন বিধায়ক কিংবা জন প্রতিনিধি তৃণমূলে না যায় সেটা নিশ্চিত করা! আর এটা নিশ্চিত করতে না পারলে বাংলা দখল করা বা বাংলায় ক্ষমতা দখল করা সহজ হবে না! আরেকটা কথা বলে যায়, মুসলিম সম্প্রদায়কে ব্রাত্য করে এ বাংলায় ক্ষমতা দখল করা সম্ভব নয় এই সহজ সত্য কথাটা শুভেন্দু অধিকারী কেন নরেন্দ্র মোদিদেরও বুঝতে হবে। নচেৎ সবই মিথ্যা, সবই প্রচার মিডিয়ার দৌলতে প্রচারের আলোয় থাকলেও ক্ষমতা দখল করা এই রাজ্যে বিজেপির পক্ষে কোনকালেই সম্ভব হবে না।