ইউনিসেফ ও আমানত ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে ‘জীবনের জন্য ধর্ম’ হ্যান্ডবুকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
বিশেষ প্রতিনিধি: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইউনিসেফ ও আমানত ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে কলকাতার দি ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে রাজ্যের হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগুরুদের নিয়ে ‘জীবনের জন্য ধর্ম’ হ্যান্ডবুকের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । এই শিবিরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ৬ টি ধর্মের ধর্মীয় গুরুরা উপস্থিত ছিলেন । রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৬০ জন ধর্মগুরুরা এই শিবিরে যোগদান করেন।
মা ও শিশু স্বাস্থ্য, মা ও শিশুদের পুষ্টি, চাইল্ড প্রোটেকশান, ওয়াটার স্যানিটেশন ও হাইজিন, শিক্ষা, ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন ইত্যাদি বিষয়ে সাইন্টিফিক ম্যাসেজের সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের ম্যাসেজের যোগসুত্র ও সামঞ্জস্য বিধান করে ‘ফেইথ ফর লাইফ বা ‘জীবনের জন্য ধর্ম’ হ্যান্ডবুক তৈরি করা হয়। এই হ্যান্ডবুকটি হিন্দু ধর্মের জন্য বাংলা, ইংরাজি ও হিন্দি, ইসলাম ধর্মের জন্য বাংলা, ইংরাজি ও উর্দু, খ্রিস্টান ধর্মের জন্য বাংলা ও ইংরাজি, শিখ ধর্মের জন্য শুধুমাত্র ইংরাজি, বৌদ্ধ ধর্মের জন্য ইংরাজি এবং নেপালি, জৈন ধর্মের জন্য ইংরাজি ও বাংলা এইভাবে ১৩ টি ভাষায় প্রকাশ করা হয়। এই হ্যান্ডবুকটি তৈরি করায় সহযোগিতা করেছেন ৬ টি ধর্মের ধর্মীয় গুরুদের মধ্যে একজন করে প্রতিনিধি এই অনুষ্ঠানে তাদের নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
এই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ডঃ শশী পাঁজা, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান তথা দৈনিক পূবের কলম পত্রিকার সম্পাদক ও প্রাক্তন এমপি আহমেদ হাসান ইমরান, ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটসের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়, ডব্লিউসিডির প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সংঘমিত্রা ঘোষ, ইউনিসেফ পশ্চিমবঙ্গের প্রধান মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, ইউনিসেফ নয়াদিল্লির এসবিসি বিশেষজ্ঞ তামারা আবু শাম, ইউনিসেফের কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট সুচরিতা বর্ধন, এসবিসি স্পেশালিস্ট সনিয়া মেনন, মিডিয়া কনসালটেন্ট অমিতাভ দাস, আমানত ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পরিচালক ও চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহ আলম, জেনারেল সেক্রেটারি জালালউদ্দিন আহমেদ, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর দেবরঞ্জন লাই প্রমুখ।
হিন্দু ধর্মের পক্ষে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশন এণ্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সংস্কৃত ও ফিলোজফি বিভাগের প্রধান স্বামী জাপাসিদ্ধানন্দ, ইসলাম ধর্মের পক্ষে ইমাম-ই-ইদাইন মাওলানা কারী ফজলূর রহমান, খ্রিস্টান ধর্মের পক্ষে বিশপ কলেজের অধ্যাপক ডা.সুনিল ক্যালেব, শিখ ধর্মের পক্ষে শিখ স্কলার তথা সন্থ কুঠিয়ার সদস্য তারসেম সিং, বৌদ্ধ ধর্মের পক্ষে পটারি বিদর্শন শিক্ষা কেন্দ্রের সদস্যা অত্তদ্বীপের সেক্রেটারি মধুশ্রী চৌধুরী, জৈন ধর্মের পক্ষে জৈন স্কলার সুখময় মাঝি
জনাব মুহাম্মাদ মহিউদ্দিন সাহেব বলেন, নাইজেরিয়ায় এই ধরনের হ্যান্ডবুক প্রথম প্রকাশ করা হয় সেটা মানব কল্যাণে খুব ফলপ্রসূ হয়। তারই অনুকরণে পশ্চিমবাংলায় এই ধরনের হ্যান্ডবুক তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে নাইজেরিয়ার তুলনায় এই হ্যান্ডবুক আরো বেশি সাইন্টিফিক এবং তথ্যসমৃদ্ধ। প্রায় দু’বছর যাবৎ এই হ্যান্ডবুককে কেন্দ্র করে বিভিন্ন হোটেলে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় গুরু ও স্কলারদের নিয়ে একাধিকবার কর্মশালার আয়োজন করে আমানত ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট। পশ্চিমবাংলা তথা সারা ভারতবর্ষে এই হ্যান্ডবুক মডেল আকারে প্রকাশ পাবে।
মানুষের কল্যাণের স্বার্থে পশ্চিমবাংলায় এই ধরনের হ্যান্ডবুক প্রথম প্রকাশ করছে ইউনিসেফের হাত ধরে আমানত ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট। ফজলুর রহমান সাহেব কোরআন থেকে ব্যাখ্যা করেন রাব্বি জিদ্দি ইলমা অর্থ “প্রভু হে আমাদের জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধান করুন” । তিনি আরো বলেন, নামাজ পড়ার আগে সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ওযু করতে হবে। স্বামী জাপাসিদ্ধানন্ন বলেন, মানবতার সেবা করাই পরম ধর্ম । এই কাজটাই ইউনিসেফ ও আমানত ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট ধর্মীয় গুরুদের নিয়ে প্রায় দু’বছর ধরে করে চলেছে । সুনিল ক্যালেব বলেন, পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা অনুযায়ী যদি না আমরা মানুষকে, নিজের প্রতিবেশীকে ভালবাসতে পারি বা সেবা করতে পারি তাহলে আমরা ঈশ্বরকে ভালবাসতে বা সেবা করতে পারবো না । সেই কারণে মানুষের কল্যাণার্থে এই তথ্য সমৃদ্ধ হ্যান্ডবুক সাহায্যে আমরা অবশ্যই সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারবো। তারসেম সিং বলেন, দীর্ঘ দুই বছর ধরে আমরা আমানত ফাউন্ডেশন ও ইউনিসেফের সঙ্গে এই হ্যান্ডবুক নিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছি, নিঃসন্দেহে তথ্যসমৃদ্ধ এবং মানব কল্যাণে অনেক বেশি উপযোগী। মধুশ্রী চৌধুরী বলেন, আজ থেকে ২৫০০ বছর আগে ভগবান তথাগত বুদ্ধ আমাদেরকে জ্ঞান, সত্য এবং একতার স্মরণ নিয়ে মানবজাতিকে উচ্চতার লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ দেখিয়েছিলেন। জৈন ধর্ম ব্রত, শীল ও সংযম পালনের উপর জোর দেয় । এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে দেশের আইন মানার পরামর্শ দেন আমাদের ধর্মগুরুরা। মোহাম্মদ শাহ আলম সাহেব এই হ্যান্ডবুকের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নিয়ে ব্যাখ্যা করেন ও শিক্ষা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।সুদেষ্না রায় বলেন, সবাই মিলে সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তুলতে চাই। পরবর্তী প্রজন্ম মানে শিশুদের দিকে তাকাতে হবে। কন্যা ও পুত্রকে সমান চোখে দেখতে বলেছেন। সকলকে সমান পুষ্টি ও সমান শিক্ষা দিতে হবে।
তামারা আবু সামা বলেন, এই হ্যান্ডবুকটি খুবই তথ্য সমৃদ্ধ। এটি সব জায়গায় প্রয়োগ করতে হবে। সঙ্ঘমিতা ঘোষ বলেন, মেয়েদের পড়াশোনা জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্প, পুষ্টির জন্য আইসিডিএস প্রকল্প খুব ভালো কাজ করছে। আহমেদ হাসান ইমরান বলেন, প্রত্যেক রোগের ঔষধ আছে। পোলিও দূরীকরণে সকল ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্য ভিডিও মাধ্যমে প্রয়োগ করার ফলে আজ আমাদের দেশ পোলিওমুক্ত। মন্ত্রী ডা. শশী পাজা বলেন, এই বইটি আমাদের কাছে সঙ্কল্প, ভবিষ্যৎ। এটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। লিঙ্গ বৈষম্য, বাল্যবিবাহ রোখার ব্যাপারে জোর দিতে বলেন। এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জালালউদ্দিন আহমেদ।