অন্যান্য 

এক প্রতিভাবান শক্তিশালী লেখককে হারালাম, হাবিব আহসানের স্মৃতি চারণায় এস এম শামসুদ্দিন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এস এম শামসুদ্দিন: ইন্নালিলাহে ও ইন্না ইলাইহে রাজেউন।হাবিব আহসান দার সঙ্গে কাটান বহু স্মৃতি আজ স্মরণে আসছে।তিনি ছিলেন বীরভূমের জেলার মানুষ।

কলকাতার ওয়েলেসলী স্কোয়ারে এক মেসে ওনার সঙ্গে প্রথম পরিচয় । এখন কলকাতায় মেস পাওয়া যায় বা আছে কি না জানিনা।এখন হয়ত হয়েছে পি জি বা অন্য কিছু ।কিন্তু সে সময় জেলা থেকে শহরে যাওয়া নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য ওই মেসই ছিল কলকাতায় মাথা গোঁজার একমাত্র ঠেক ।

Advertisement

যাইহোক আমি পাশের গ্রামের হাই স্কুল থেকে সপ্তম শ্রেণী পাশ করে কলকাতা এ পি ডিপার্টমেন্ট গভর্মেন্ট স্কুলে ভর্তি হই ।

সে সময় কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা তথা কলেজের ঠিক বিপরীতে আকবর মেনশনের (পোস্ট অফিসের) তিন তলায় ছিল মেস ।চার তলায় ছাদে ছিল রান্নার জন্য বাবুর্চি ।রামপুরহাটের এক বাবুর্চি ছিলেন যিনি বাজার ও রান্না করতেন ।নিচ তলায় চারটি ঘরে থাকতেন অনেক বিশিষ্ট নানান পেশার মানুষ।একটা ঘরে চারটি করে বেড।যে যাঁর বিছানা আর নীচে তক্তপোষ যাঁর বিছানা। সে সময় এই মেসেই থাকতেন আমার আব্বাজান।আর আমি কোলকাতায় গিয়ে থাকতাম ওই মেসেই । আব্দুল্লাহ সা’দী সাহেব ,বর্ধমানের সৈয়দ মতিউল ইসলাম সাহেব, মুর্শিদাবাদের আব্দুর রাফে সাহেব,হাফিজুর রহমান সাহেব ,আর রামপুরহাটের এক বয়স্ক মানুষ থাকতেন তাঁকে সকলে নানা বলে ডাকতেন ।ইয়ার্কি মস্করা করতেন সকলে ।

ট্রাম কোম্পানিতে চাকুরী করতেন তিনি । তরুণ সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিক হাফিজুর রহমান সাহেব ওনার বাড়ি ছিল শরীফ লেনে।মাঝে মাঝে তিনি আসতেন ।আর তিন তলায় বাবুর্চির ঘরে একপাশে হাবিব আহসান দা থাকতেন ।হাবিব দা তখন সানন্দা, মনোহর কাহানিয়া, পরিবর্তন পত্রিকায় লিখতেন।মিত্র পাবলিকেশন এ কাজ করতেন ।একাধিক বই ও লিখেছেন । খুব পান খেতেন ।মুখে পান দিয়ে এক মনে লিখে যেতেন।আহ হাতের লেখা তো নয় যেন ছবি এঁকে চলেছেন।মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে দেখতাম তাঁর লেখা।তখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র।

একেবারে চোখের সামনে সেই দিনগুলির কথা স্মরণ আসছে।আব্দুল আজিজ আল আমান সাহেবের নাম ও প্রশংসা আব্দুল্লাহ সাদী সাহেব ও হাবিবদার মুখেই শুনতাম । নতুন গতি পত্রিকার প্রথম স্থপতিদের মধ্যে হাবিবদা ও আব্দুল্লাহ সাহেব ছিলেন ।

তারপর অনেক সময়- বছর পার হয়েছে। মেস উঠেছে , সেলামিও উঠেছে । এখন ব্যক্তিগত মালিকানা । মাঝে মাঝে কলকাতায় দেখা হয়েছে হাবিবদার সঙ্গে। ২০০৭ সালে ” আমার সম্পাদিত সাচার কমিটির সুপারিশ ও সমাজসেবী বুদ্ধিজীবীদের ভাবনা” নামক সংকলনে আমার অনুরোধে ওনার মূল্যবান একটা লেখাও ডিয়েছিলেন ।

উনি কলকাতা ছেড়ে শেষে নলহাটিতে “বইঘর ” নামে একটা বই দোকান করেছিলেন । শুনেছি পরে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়।

ওনার এক পুত্র ও এক কন্যা ।পুত্র শুনেছি পি এইচ ডি করছে বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কন্যা বি এ পাশ করেছে।

৭০ বছর বয়সে হাবিব আহসানদা শেষ বিদায় নিলেন ।হাবিবদা ছিলেন এক শক্তিশালী লেখক ।আর্থিক দৈনতা হয় নাকি লেখকদের আজীবন সঙ্গী। হাবিব আহসান দা সেই দৈন্যতার সঙ্গে আজীবন যুদ্ধ করে বিজয়ীবীরের মতো বিদায় নিলেন । আল্লাহপাক তাঁর আত্মাকে শান্তি দিন ।কবরকে আলোকিত করুন।পরিবার পরিজনদের সমবেদনা জানাই ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ