কলকাতা 

রাজ্য সরকারের মদতে দুর্গাপুজো শোভাযাত্রা প্রসঙ্গে আইএসএফের তীব্র প্রতিক্রিয়া ‘বিবিধের মাঝে মিলন মহান’গণতান্ত্রিক সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

ভারতের সংবিধানে সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা। সংবিধানের সংজ্ঞা অনুয়ায়ী, রাষ্ট্র সমস্ত ধর্মকে সমান চোখে দেখবে এবং সমদুরত্ব বজায় রাখবে। রাষ্ট্রের কোন ধর্ম হবে না। রাষ্ট্র কোন বিশেষ ধর্মকে উৎসাহিতও করবে না। হালফিল ভারতে শাসকগোষ্ঠী সংবিধানের এই মূল নির্যাসটিকে ঘুলিয়ে দিচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত পশ্চিম বাংলাতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সাংস্কৃতিক নীতি নিয়ে চলেছেন সেটা একদম সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা ধারণার পরিপন্থী। এমনিতে রাজ্য কোষাগারের অবস্থা সঙ্গীন। তা সত্ত্বেও কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কার্নিভাল হচ্ছে। দুর্গোৎসবের জন্য ব্যয়, অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে সরাসরি মদত – এগুলি সরাসরি সংবিধানকেই লঙ্ঘন করছে। অনেকসময় উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে এই কাজে বিরত থাকতে হয়। কিন্তু আবারও অন্য কায়দায় যেমন জনস্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে কিংবা ‘নিরাপদে গাড়ি চালান’- এই শ্লোগানের আড়ালে উৎসব করা হয়। কিন্তু এর প্রভাবে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ তথা সংস্কৃতি মিশে যায়। ফলে রাজনীতির ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ক্ষুণ্ণ হয় এবং একটা ধর্মীয় সংখ্যাগুরুর প্রভাব-প্রতিপত্তি ও হেজিমনির উদ্ভব হয়। তাতে অন্যান্য আদিবাসী-তপশিলি-সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি প্রান্তসীমায় সরে যায়।

Advertisement

আজ পয়লা সেপ্টেম্বর রাজ্য কোষাগার থেকে অর্থ খরচ করে বিশেষ একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসবে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কোন ধর্মের উৎসব পালনের বিরোধী নই। আমাদের সংবিধান প্রত্যেককে ধর্মাচরণ করার পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। এটা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু রাষ্ট্র কোন ধর্মীয় উৎসব পালন করবে না, মদত দেবে না। ধর্মাচরণকে সংস্কৃতি বলে চালানো, এটা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সূক্ষ্ম নীতি। এটার ফলে বাঙালীর সংস্কৃতি কলুষিত হচ্ছে। বাঙালীর উৎসব-পয়লা বৈশাখ, রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, নবান্ন উৎসব, শীতকালীন নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সেগুলির মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতাটা মুখ্য। এগুলি সরকার পালন করতেই পারে।

সরকার স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, সংবিধান দিবস পালন করতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার সংবিধান দিবস পালন করে না। সংবিধান আমাদের পাঠ্যপুস্তকে পড়ানো হয়না। কিন্তু বিশেষ একটি ধর্মের উৎসবকে সরকারী কোষাগার থেকে মদত দেওয়া হয়। আজ পয়লা সেপ্টেম্বর রাজ্যসরকারের মদতে ঐ বিশেষ ধর্মের উৎসবকে মহা সমারোহে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরএসএস-এর সংস্কৃতিকে নানান সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে, রাস্তার নামকরণের মাধ্যমে, রাজনৈতিক প্রতীক, শ্লোগান ইত্যাদির ভেতর দিয়ে জনমনে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে চলেছে রাজ্যসরকার। এটাও তাই। এভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বৈচিত্র ম্লান হচ্ছে।

আমাদের ‘বিবিধের মাঝে মিলন মহান’ গণতান্ত্রিক সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতার মূলে কুঠারাঘাত করা হচ্ছে। তাই আমাদের দলের মূল কাজ এটাকে রুখে দেওয়া। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে আমরা সকলকে তাই আহ্বান করি সংবিধান বাঁচান, দেশ বাঁচান, সংস্কৃতি বাঁচান, সমাজ বাঁচান।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ